শুক্রবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

সূর্য সিজদা করে বলাতে কি ইসলাম ভুল প্রমাণিত হলো?

সহীহ বুখারী,ভলিউম ৪, অধ্যায় ৫৪, হাদিস ৪২১
 হাদিসটি আবু যর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা সূর্য অস্ত যাবার সময় রাসূল (সাঃ) আমাকে বলেন,"তুমি কি জান সূর্য কোথায় গমন করে? আমি বললাম, আল্লহ ও তার রাসূলই ভাল জানেন, তিনি বললেন, এটা যার (ভ্রমণ করে অর্থ্যাৎ যেতে যেতে) আরসের নিচে পৌঁছায় সিজদাহ করে(অর্থ্যাৎ উঠবার জন্য) অনুমতি চায় এবং তাকে অনুমতি দেওয়া হয়।এবং অচিরেই যখন সে প্রায় সেজদায় নত হবে কিন্তু তা গৃহীত হবে না এবং নিজস্ব পথে যাত্রা করার অনুমতি চাইবে কিন্তু আর অনুমতি মিলবে না।বরং তাকে নির্দেশ দেওয়া হবে,সেই পথে ফিরে যেতে - যে পথে সে এসেছে।এবং তখন সে পশ্চিমদিকে উদিত হবে।এবং এটাই হলো আল্লহ তালার বাণীর মর্মঃ "আর সূর্য তার গন্তব্য পথে বিচরণ করে।এটিই মহাশক্তিশালী সর্বজ্ঞাতার নির্ধারিত বিধান।(৩৬:৩৮)
---এই হাদিসটি আপনি মুক্তমনাসহ বিভিন্ন ইসলাম-বিদ্বেষী সাইটে দেখবেন।কিন্তু সবচেয়ে মজার বিষয় দেখবেন, তারা হাদিসটির অংশবিশেষ লিখে- সেষে কুরআনের আয়াত যেটা নবী (সাঃ) উল্লেখ করেছেন- সেটা ভুলেও উল্লেখ করে না।
(এখানে সূর্যের সিজদাহ বলতে সূর্য, গাছপালা,তারা যা বলা হয়েছে কুরআন এবং হাদিসে, তা আমাদের সিজদার মতো নয়,বরং এটা নির্দেশ করে যে এইসব সৃষ্টি, তাদের স্রষ্টার প্রতি অনুগত এবং তারা সর্বদাই স্রষ্টার নির্দেশ মেনে চলে- যেজন্য তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে।)
কথাটি কিন্তু ইমাম বুখারীর।
 নাস্তিক মুক্তমনারা শেষের অংশ দেয় না কারণ দিলেই তো তাদের জালিয়াতি ধরা পড়ে যাবে।লক্ষ্যণীয় বিষয় যে, এখানে এমন বলা হচ্ছে না যে, সূর্য অস্ত গিয়ে আরশের নিচে যায় বরং বলা হচ্ছে যে, এটা যেতে যেতে আরশের নিচে পৌঁছে সিজদাহ করে।এটা সূর্য উদয় এবং অস্তের ক্ষেত্রে ব্যাখ্যা করা অযৌক্তিক।
____এবার আরশ সম্পর্কে কিছু বলি____
 * আল্লহর আরশ হলও আসমান সমূহের ওপর অবস্থিত.... (আবু দাউদ,বই ৪০,হা-৪৭০৮)
 * সকল কিছুর ওপর আল্লহর আরশ অবস্থিত।(বুখারী,৫২/৪৮)
--আল্লহর আরশ সবকিছুর উপরে এটা ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে নিন।
 আরশের নিচে যাওয়া আর সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর নিচে যাওয়া বিষয় কি এক।এটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।এখানে বলা হচ্ছে সূর্যের গতিপথেরর কথা।
 আধুনিক জ্যোতির্বিদ্যা আমাদের বলে যে- সূর্য মহাশূন্যে আবর্তন করছে প্রতি সেকেন্ডে ১২ মাইল গতিতে একটি নির্দিষ্ট দিকে যা অবস্থান করছে- হারকিউলিস কন্সটালেইশন এর দিকে; যার নির্দিষ্ট অবস্থান জ্যোতির্বিদরা সঠিকভাবে বের করেছেন।এক্ষেত্রে এর নাম দিয়েছেন - সোলার এপেক্স।
 দেখুন→en.wikipedia.org/wiki/Solar_apex
 "The Solar apex is the direction that the travels."
সোলার এপেক্স বলতে বোঝায় - সূর্য যে পথে মিল্কিওয়ে দিয়ে ভ্রমন করে।ছায়াপথেরর কেন্দ্র দিয়ে প্রায় ৬০স্কাই ডিগ্রী কোণে সূর্য ছুটছে একটি সুনিধার্রিত দিকে; যে কথা কুরআন এবং হাদিসটির শেষাংশে বলা হয়েছে।সূর্য আবর্তন করছে- কন্সটালেইশন অব হারকিউলিস এর ভেগা নামক নক্ষত্রেরর দিকে।
 আর এজন্য কুরআন সূর্যের বিচরণের কথা বলছে।
 এবার প্রশ্ন হলো সিজদাহ নিয়ে??
সিজদাহ বলতে আপনি কি বুঝেন?
মাথা নিচু করা- এরপর আবার তুলে ফেলা।এটাই হচ্ছে সিজদাহ।এখন প্রশ্ন হচ্ছে সূর্যের সিজদাহের কথা বলা হলো কেন? আপনি কি জানেন সূর্যও ঠিক এমন একটি কাজ করে?
উইকিপিডিয়াতে রয়েছে--
The sun's orbit around the galaxy is expected to be roughly elliptical with the addiction of perturbations due to the galactic spiral arms and non-uniform mass distributions.
 "In addition the Sun oscillates <"up
 and down ">relative to the galactic plane
 approximately 2.7 times per orbit.
অর্থ্যাৎ সূর্য চলার পথে দিক পরিবর্তন করে একবার উপরে একবার নিচে প্রায় প্রতি সম্পূর্ণ আবর্তনে ২.৭ বার।
 সৌরজগতসহ সূর্য প্রতিবার নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর আমাদের ছায়াপথ মিল্কিওয়ে এর গ্যালাক্টিক স্প্যানের উপর দিয়ে ""উঠছে আর নিচে নামছে আবার উঠছে""।
দেখুন→
en.wikipedia.org/wiki/sun
en.wikipedia.org/wiki/Milky_way
উদাহরন স্বরূপ একটি গাড়িকে যদি ঢেউ-
খেলানো পথে চলতে দেয়া হয়
 তাহলে গাড়িটি ঢেউ-খেলানো পথের
 সর্বোচ্চ প্রান্তে পৌছানোর
 সাথে সাথে সেটার সম্মুখভাগ অর্থাৎ
 মাথাটি নিচের
 দিকে নেমে যাবে এবং তা (অস্তগামী অর্থাৎ
 নিম্নগামী অবস্থায়) নিচের
 দিকে চলতে থাকবে। এভাবে আবার যখন
 সেটি ঢেউ-খেলানো পথের সর্বনিম্ন
 প্রান্তে পৌছবে তখন সেটার সম্মুখভাগ
 বা মাথাটি উপরের
 দিকে উঠে যাবে এবং তা উপরের
 দিকে (উদিত অর্থাৎ উর্ধ্বগামী অবস্থায়)
চলতে শুরু করবে।
 এভাবে গাড়িটি সম্মুখপানে গন্তব্যের
 দিকে এগিয়ে যাবে। তবে গাড়ির
 ড্রাইভার যদি কখনো সর্বনিম্ন
 স্থানে গিয়ে ব্রেক চাপে বা ইঞ্জিন
 বন্ধ করে দেয় তাহলে গাড়িটি কিন্তু
 সেটার মাথা নিচের
 দিকে নামিয়ে (অস্তগামী অর্থাৎ
 নিম্নগামী ভংগিতে) পড়ে থাকবে।
 যেহেতু স্রষ্টা মহান আল্লাহতায়ালার
 আরশ অর্থাৎ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার আওতায় সকল
 নক্ষত্র ও গ্রহ, উপগ্রহগুলো তাদের
 কক্ষপথে পরিভ্রমণ করছে।
 সুতরাং প্রতিটি কক্ষপথই মহান স্রষ্টার
 আরশের আওতাধীন। সূর্যের ক্ষেত্রেও
 তাই। সূর্যটা যখন তার কক্ষপথে আল্লাহর
 নির্ধারিত উঁচু-নিচু বা ঢেউ-
খেলানো পথের সর্বনিম্ন
 স্থানে পৌছে যায়, তখন এই
 অবস্থাকে আরশের নিচে অর্থাৎ আল্লাহর
 বেঁধে দেয়া নির্ধারিত পথের সর্বনিম্ন
 স্থানে Solar Apex বরাবর মাথা-নত
 করা বা অস্তগামী হওয়ার
 সাথে তুলনা করা হয়েছে। এই
 অবস্থা থেকে সম্মুখভাগ বা মাথাটি Solar
 Apex বরাবর উপরের দিকে উঠিয়ে (উদিত
 অর্থাৎ উর্ধ্বগামী অবস্থায়) চলবার
 অনুমতি আছে বলেই
 বর্তমানে সূর্যটা গতানুগতিক উঁচু-নিচু
 পথে ছুঁটে চলেছে। আর এ কারনেই
 সৌরজগত সহ সূর্যটা (Our Solar System)
নির্দিষ্ট সময় অন্তর ক্রমান্বয়ে ছায়াপথ
 বা Milky Way Galaxy এর গ্যালাক্টিক
 প্ল্যানের উপরে উঠছে আবার
 নিচে নামছে। যেহেতু সৌরজগত সহ
 সূর্যটা ছায়া পথের
 কেন্দ্রেকে ঘিরে ইতিমধ্যে প্রায় ২০
 থেকে ২২ বার প্রদক্ষিণ করে ফেলেছে।
 সুতরাং সৌরজগত সহ সূর্যটা (Our Solar
 System) এ পর্যন্ত প্রায় ৫৫ থেকে ৬০ বার
 মাথা নত করে (সিজদারত অবস্থায়) Milky
 Way Galaxy এর গ্যালাক্টিক প্ল্যানের
 নিচে নেমেছে এবং মাথা উঁচিয়ে (সিজদা থেকে উঠে)
গ্যালাক্টিক প্ল্যানের উপরে উঠেছে
 বলে ধরে নেয়া যায়।
 কিন্তু মহান স্রষ্টা যখন সূর্যের এই ঢেউ-
খেলানো পথকে পরিবর্তন করতে চাইবেন
 তখন (সেই নির্দিষ্ট সময়ে- কেয়ামতের
 পূর্বক্ষণে) আল্লাহতায়ালার আদেশে এই
 পথের সর্বনিম্ন স্থান
 থেকে সূর্যটাকে আর উপরের
 দিকে উঠবার অনুমতি দেয়া হবে না।
 ফলে সূর্যটা আল্লাহর আরশের
 নিচে অর্থাৎ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কর্তৃক
 নির্ধারিত পথের সর্বনিম্ন
 স্থানে গিয়ে অবনত
 মস্তকে বা অস্তগামী অবস্থাতেই
 থাকবে। পূণরায় নির্ধারিত পথে উদিত
 হতে অর্থাৎ Solar Apex বরাবর সম্মুখভাগ
 বা মাথা উঠিয়ে চলবার অনুমতি পাবে না।
 বরং আল্লাহতায়ালার
 আদেশে সূর্যটা যে পথে এসেছিল
 সে পথেই ফিরে যেতে অর্থাৎ পশ্চাদগমন
 করতে বাধ্য হবে। সুতরাং এ থেকে এই
 ইংগিত পাওয়া যায় যে, মহান স্রষ্টার
 আদেশে সে সময় সৌরজগতের গতানুগতিক
 পদ্ধতিতে একটা বিরাট পরিবর্তন সাধিত
 হবে। এর ফলে সেই সময় পশ্চিম দিক
 থেকে সূর্যের উদিত হওয়াটা মোটেই
 অস্বাভাবিক নয়। আসল জ্ঞান তো সর্বজ্ঞ
 মহান স্রষ্টা আল্লাহতায়ালার নিকটে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন