আল্লাহর নামে শুরু যিনি পরম করুণাময় ও দয়ালু।
বর্তমানে কিছু মুসলিম ভাই-বোন ডাঃ জাকির
নায়েক এর বিরদ্ধে এমন ভাবে লেগে পরেছেন
যা কিনা কাফিরদের বিরদ্ধেও
তারা লাগেন না। আমাদের
সমাজে শিরক,কুফর,বিদ’আত এত
পরিমাণে বিদ্যমান যা বলার অবকাশ
রাখে না কিন্তু আমরা তার
বিরোধিতা না করে বিরোধিতা করছি তার,
যে দ্বীন(ইসলাম) এর একজন বড় দায়ী।
যিনি অমুসলিমদের কাছে ইসলামকে সুন্দর
করে উপস্থাপন করছেন তার
পিছনে আমরা লেগে আমরা কিসের পরিচয়
দিচ্ছি?
ডাঃ জাকির নায়েক এর বই ‘রচনা সমগ্র’
অথবা ‘লেকচার সমগ্র’ বই থেকে তারা বিভিন্ন
বিভ্রান্তমূলক কথা বলছে। তার ই জবাব আজ
এখানে আমি দেওয়ার চেষ্টা করবো……।।
(আল্লাহ আমাদের হক কে বুঝার তৌফিক দান
করুন।-আমিন)
১. অপবাদঃ ডাঃ যাকির নায়েক বলেছেন
আল্লাহকে আমরা ব্রাহ্ম ও বিষ্ণু
নামে ডাকতে পারবো।
উত্তরঃ ব্রাহ্ম ও বিষ্ণু এই নামগুল সংস্কৃত নাম। এই
২টি নামই আরবীতে নিলে আল্লাহর
৯৯টি নামের মধ্য হতে ২টি নামের
কাছে চলে যায়। যেমনঃ ব্রাহ্ম
নামটি আরবীতে নিলে তা অনেকটা ‘খালিক’
নামের মত অর্থ করে। বাংলাতে অর্থ হয় ‘স্রষ্টা’
আর যেহেতু আমরা আল্লাহকে ‘খালিক’
অথবা ‘স্রষ্টা’ নামে ডাকতে পারবো তাই
ডাঃ যাকির নায়েক এই কথা বলেছেন।
তাহলে যারা আল্লাহকে ‘ব্রাহ্ম’
নামে ডাকতে বলাতে নিন্দা করছেন
তারা ‘স্রষ্টা’ নামে ডাকতেও বাধা দেওয়ার
দরকার। কারণ হিন্দুরাও তো তাদের
দেবতাদের ‘স্রষ্টা’ বলে ডাকে। যেহেতু
‘ব্রাহ্ম’ বলে ডাকা যাবে না সেহেতু ‘স্রষ্টা’
বলেও ডাকা যাবে না কারণ এই ২ টি অর্থ এক।
কিন্তু ডাঃ জাকির নায়েক এটিও বলেছেন
যদি কেও বলে ‘ব্রাহ্ম’ হল সে যার
কয়েকটা হাত আছে,এরকম করে যদি আকার
দেওয়া হয়
তাহলে আমরা মুসলিমরা আপত্তি জানাবো(লেকচারঃ ইসলাম
ও হিন্দু ধর্মের মধ্যে সাদৃশ্য/প্রধান ধর্ম
গুলতে স্রষ্টার ধারনা) কিন্তু একটি জিনিস
আমাদের বুঝতে হবে তা হল ডাঃ জাকির
নায়েক এসব কথাগুলো হিন্দুদের বলেছেন।
তিনি মুসলিমদের এই কথা বলছেন
না যে আপনারা ‘খালিক’ নাম বাদে ব্রাহ্ম
নামে আল্লাহকে ডাকুন। তিনি শুধুমাত্র ইসলাম
ও হিন্দু ধর্মের মধ্যে সাদৃশ্য দেখিয়েছেন।
আমরা আল্লাহকে ‘খালিক’ নামেই ডাকব
‘ব্রাহ্ম’ নামে ডাকব না।
২. অপবাদঃ ডাঃ যাকির নায়েক বলেছেন
রাম আর অর্জুন নবী।
উত্তরঃ ডাঃ যাকির নায়েক কখনই এই
কথা বলেন নাই যে রাম আর অর্জুন নবী,
বরং তিনি বলেছেন তারা নবী হতেও
পারে আবার নাও হতে পারে।কারণ
কোরানে শুধু মাত্র ২৫ জন নবীর নাম
বলা হয়েছে।(লেকচারঃ ইসলাম ও হিন্দু ধর্মের
মধ্যে সাদৃশ্য/প্রধান ধর্ম গুলতে স্রষ্টার ধারনা)
রাসুলুল্লাহ(সা) এর হাদিস
অনুসারে পৃথিবীতে প্রায় ১ লক্ষেরও
বেশী নবী এসেছেন। এর মধ্যে কোরআনে ২৫ জন
নবীর নাম এসেছে। রাম আর অর্জুন এর কিছু কাজ
নবীদের কাজের সাথে মিলে। তাই
ডাঃ যাকির নায়েক বলেছেন রাম আর অর্জুন
নবী হতে পারেন আবার নাও হতে পারেন।
কিন্তু আমরা(মুসলিমরা) কখনই রাম আর অর্জুন এর
উপর নবী হিসাবে ঈমান আনব না। কারন
তারা নবী বলে প্রমানিত নয়।
৩. অপবাদঃ ডাঃ জাঁকির নায়েক
নাকি বলেছেন কোরআনে ব্যাকারনগত ভুল
আছে।
উত্তরঃ কোরআনে ব্যাকারনগত ভুল আছে এই
কথা ডাঃ জাঁকির নায়েক বলতেই পারেন
না। বরং, আমেরিকাতে ডাঃ উইলিয়াম
ক্যাম্পবেল এর সাথে বিতর্ক করার
সময়ে ডাঃ জাকির নায়েককে এক অমুসলিম
প্রশ্ন করেছিলেন, তার প্রশ্ন ছিলঃ
“ডাঃ জাঁকির নায়েক আপনি বলেছেন
কোরআনে কোন ভুল নেই কিন্তু
আমি দেখছি যে এতে ২০ টিরও অধিক
আরবি ব্যাকারনগত ভুল রয়েছে। আমি এর মধ্য
থেকে কয়েকটি উল্লেখ্য করতে চাই যেমন
সুরা বাঁকারা ও সুরা হাজ্জ এ বলা হয়েছে-
‘আসাবিউন’ কিংবা ‘আসাবিরীন’ এটা ১ নম্বর
ভুল। ২য় ভুল হচ্ছে, আপনি বলেছেন, প্রায় একই
বিষয় যা সুরা ত্ব-হা’র ৬৩
নং আয়াতে রয়েছে এটাও ভুল।
এটি কি আপনি ব্যাখ্যা করতে পারেন? আর
সেখানে রয়েছে আর মারাত্মক ভুল”
এর উত্তরে ডাঃ জাকির নায়েক
বললেনঃ “আমার ভাই একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন
করেছেন। আমাকে আর অধিক যথার্থ হতে হবে।
তিনি ২০টি ব্যাকারনগত সমস্যার
কথা বলেছেন।আর তিনি সম্ভবত আব্দুল ফাঁদির
রচিত বই থেকে উল্লেখ
করেছেন,বইটা কি সঠিক? কোরআন কি ভুল-
ভ্রান্তির উর্ধে নয়? ” এখানে আমি ২০
টি প্রশ্নেরই উত্তর দিব কারণ আমি উল্লেখিত
বইটি পরেছি। প্রথম বিষয়ে টি হচ্ছে সমস্ত
আরবি ব্যাকারনই কোরআন কে সংকলিত। আর
কোরআন হচ্ছে উচ্চমানের আরবি বই। এটি এমন
একটি বই যেখানে সর্বচ্চমানের সাহিত্য
সন্নিবেশিত রয়েছে। যেহেতু কোরআন
হচ্ছে আরবি ব্যাকারনের নিদর্শন আর সকল
আরবি ব্যাকারনই পবিত্র কোরআন
থেকে সংকলিত সেহেতু এখানে(কোরআনে)
কোন ভুলই থাকতে পারে না। আরবের অঞ্চল
ভেদে শব্দের পরিবর্তন রয়েছে যেমন কোন
অঞ্চলে যেই শব্দ পুরুষবাচক অন্য
অঞ্চলে তা স্ত্রীবাচক। আরবের
অঞ্চলভেদে ভাষার পরিবর্তন বিদ্যমান।
সুতরাং আপনি কি ভুলকৃত ব্যাকারন
দিয়ে কোরআন যাচাই করবেন? কখনই না।
(রচনা সমগ্র;পৃ-৮৯,খণ্ড-১,অধ্যায়-২,কোরআন ও
বাইবেল। লেকচারঃ Quran & Bible In The Light Of
Mordern Science,Questions & Answers Session)
ডাঃ জাকির নায়েকের এই কথার মাধ্যমেই
প্রমাণ হয় তিনি কোরআনকে নির্ভুল মানেন।
আর কোরআনে ব্যাকারনগত ভুল আছে এই
কথা ডাঃ জাকির নায়েক বলেছেন
বলে কথাও আমি পাইনি এবং ইনশা আল্লাহ
পাবোও না।
৪. অপবাদঃ ডাঃ জাকির নায়েক বলেছেন
‘বেদ’ আল্লাহর কিতাব।
উত্তরঃ ডাঃ জাকির নায়েক এই কথা বলেন
নি বরং তিনি বলেছেন ‘বেদ’ আল্লাহর
কিতাব হতেও পারে আবার নাও হতে পারে।
যদি হয়েও থাকে তার পরও এই কিতাব এখন
আল্লাহর কাছে গ্রহণ যোগ্য নয়।
কোরআনে আল্লাহ ৪ টি কিতাবের নাম
বলেছেন। যেহেতু, ‘বেদ’ বলছে এক
আল্লাহকে নিয়ে, বলছে নাবী(সা)
কে নিয়ে তাই এই কিতাবকে ডাঃ জাকির
নায়েক আল্লাহর কিতাব হতেও পারে আবার
নাও হতে পারে বলে দাবী করেছেন। যদি এই
কিতাব আল্লাহর পাঠান না হয়
তাহলে কিভাবে এই কিতাবে এক আল্লাহ ও
নাবী মুহাম্মাদ(সা) এর ব্যাপারে বলছে? তাই
ডাঃ জাকির নায়েক এই কথা বলেছেন। কিন্তু
আমরা বেদ কে আল্লাহর কিতাব বলে ইমান আনব
না।
৫. অপবাদঃ ডাঃ জাকির নায়েক
নাকি বলেছেন যে ৪ জন মহিলা নবী এসেছেন
আর তারা হলেন-
বিবি মরিয়ম,বিবি আসিয়া,বিবি ফাতিমা,বিবি খাদিজা
উত্তরঃ ডাঃ জাকির নায়েক এর লেকচার
দেখলেই আপনারা দেখবেন
তিনি বিবি ফাতিমা ও মা খাদিযা(রা) এর
পর (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) বলেন,
তিনি যদি তাদের নবী মানতেন
তাহলে তিনি তাদের নামের পর বলতেন
(আঃ)।
এছাড়াও এই কথা ডাঃ জাকির নায়েক কখনই
বলেন নি, তার কোন বইতেও এই লেখা নেই।
বরং তার বই রচনা সমগ্র এর খণ্ড-১ এর প্রশ্ন-উত্তর পর্ব
অধ্যায় এর ৬৭৭ পৃঃ বলেছেন-
‘যদি নবী বলতে আপনি বুঝেন এমন এক
ব্যক্তি যিনি আল্লাহর কাছ থেকে বানী গ্রহণ
করেন ও যিনি মানব জাতির
নেতা হিসাবে কাজ করেন
তাহলে আমি নিঃসন্দেহে বলতে পারি ইসলামে আমরা কোন
নারী নাবী পাইনি’
এখানে তিনি নারী নবী হওয়ার বিরদ্ধে আর
যুক্তি দিতে গিয়ে বলেনঃ “যদি মহিলা নবী হত
আর স্বাভাবিক ভাবে সে গর্ভবতী হত
তবে তার পক্ষে কয়েক মাস নবুয়াত এর
নির্ধারিত দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হত না। আর
যদি আপনি নবী বলতে বুঝান আল্লাহর প্রিয়
ব্যক্তি তাহলে কিছু মহিলার উদাহরণ হল-
বিবি মরিয়াম,আসিয়া,খাদিজা,ফাতেমা(রা)”
কিন্তু তিনি এখানে তাদেরকে নবী বলেন
নি বরং আল্লাহর প্রিয় ব্যক্তি বলেছেন।
৬. অপবাদঃ ডাঃ জাকির নায়েক বলেছেন
নবী মুহাম্মাদ(সা) তার কবরে স-শরীরে মৃত।
উত্তরঃ আল্লাহ কোরআনে বলেছেনঃ “বল
(হে নবী!) আমিও তমাদেরই মত একজন
মানুষ”(সুরা কাহাফ;১১০) এছাড়াও আল্লাহ
কোরআনে নাবী(সা)কে লক্ষ্য
করে বলেছেনঃ “তোমাকেও
মরতে হবে তাদেরও মরতে হবে”(সুরা জুমার;৩০)
এখানে আমরা দেখতে পারছি ডাঃ জাকির
নায়েক ঠিক কথাই বলেছেন। এছাড়াও
আপনি তাফসীর ইবনে কাসীর এ এই আয়াত
(সুরা জুমার;৩০) এর তাফসীর দেখতে পারেন।
সেখানেও ইমাম ইবন কাসীর(রহ) সুরা জুমার ৩০
নং আয়াতের তাফসীরে বলেছেন
যে “রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মৃত”
৭. অপবাদঃ ডাঃ জাকির নায়েক বলেছেন
হায়েজ-নেফাস কালে কোরআন তেলাওয়াত
করা যাবে
উত্তরঃ হায়েজ-নেফাস কালে কোরআন
তেলাওয়াত করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আর এই
কথা ডাঃ জাকির নায়েক বলেছেন
বলে কোন কিতাবে বা লেকচার এ
আমি পাইনি। আর আসলেই
তিনি এটি বলে থাকলে আমি মনে করি তিনি ভুল
বলেছেন।
৮. অপবাদঃ ডাঃ জাকির নায়েক বলেছেন
ঈদের দিন জুমা নামাজ পড়া লাগে না
উত্তরঃ এটি সঠিক কথা।
এর পক্ষে হাদীসঃ ১. হযরত আইয়াশ ইবনে আবু
রামলা আশ-শামি(র)হতে বর্ণিত,তিনি বলেন-
একদা হযরত মুয়াবিয়া(রা) হযরত জায়েদ
ইবনে আরকাম(রা)কে কিছু জিজ্ঞাসা করার
সময় আমি তার সামনে উপস্থিত ছিলাম।
তিনি বলেন- আপনি কি রাসুল(সা) এর সময় একই
দিনে ঈদ ও জুমা অনুষ্ঠিত হতে দেখেছেন?
তিনি বললেন- হ্যা। তিনি পুনরায়
জিজ্ঞাসা করলেন, তিনি কিরূপে তা আদায়
করেন? তিনি বলেন- নাবী(সা) প্রথমে ঈদের
নামায আদায় করেন অতঃপর জুমা নামায
আদায়ের ব্যাপারে অবকাশ প্রদান
করে বলেনঃ যে ব্যক্তি তা আদায় করতে চায়,
সে তা আদায় করতে পারে।(আবু
দাউদ,হাদীস-১০৭০; নাসাই,ইবনে মাজাহ)
তাই ডাঃ জাকিরের কথা সঠিক। এছাড়াও
মুজতাহিদ(ইমাম আবু
হানিফা,মালিক,শাফিঈ,আহমাদ,ছাওরী,ইসহাক)
দের মধ্যে এ বিষয়ে ইত্তিলাফ আছে। ইমাম
আহমাদের মতে অর্থাৎ
হাম্বলী ফেকাহতে ঈদের দিন জুমা নামাজ
পড়া লাগে না।
৯. অপবাদঃ ঈদের নামায ১২ তাকবীর এ আদায়
করা
উত্তরঃ আমার অবাক লাগে তাদের দেখে,
তারা(ডাঃ জাকিরের বিরদ্ধে যারা আছে)
নিজেরা মাজহাব মানা সত্ত্বেও অন্য
মাজহাবের মাসআলা কে অপছন্দ করে।
রাসুলুল্লাহ(সা) ঈদের নামায ১২
তাকবীরে আদায় করেছেন।(আবু দাউদ,হাদীস
নং-১১৪৯,১১৫০,১১৫১;মুসনাদে আহমাদ)।
ইমাম মালিক,শাফিঈ,আহমাদ ইবনে হাম্মব(র) এর
মত ঈদের নামায ১২ তাকবীর এ আদায়
করতে হবে, মাসজিদুল হারাম ও নববী সহ
সৌদি আরবেও ১২ তাকবীরে ঈদের সালাত
আদায় হয়ে থাকে।
১০. অপবাদঃ ডাঃ জাকির নায়েক বলেছেন
তারাবীহ নামায ৮ রাকাত
উত্তরঃ ডাঃ জাকির নায়েক বলেছেন
তারাবীহ নামায ৮ রাকাত আদায়
করা যাবে কিন্তু ২০ রাকাত ও আদায়
করা যাবে। উমার(রা) ৮ রাকাত তারাবীহ
পরেছেন(মুয়াত্তা ইমাম মালিক) এবং ২০
রাকাত তারাবীহ পরবর্তীতে চালু করেছেন।
(ইমাম ইবনে তাইমিয়া ও ইমাম ইবনে কাইয়ুম)।
রাসুলুল্লাহ(সা) বলেছেনঃ রাতের নামায দু দু
রাকাত করে। এর উপর
ভিত্তি করে মালেকী মাযহাবের ইমাম
মালেক (রহঃ) বলেছেন, একশ বছরেরও বেশী সময়
ধরে লোকেরা ৩৬ রাকআত তারাবীহ পড়েছে।
হাম্বলী মাজহাবে তারাবীহ নামায ৮
রাকাত। শ্রদ্ধেয় আলেমে দ্বীন
আল্লামা মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল উসাইমীন
(রহ.) ৮ রাকআতের মাসআলাকে প্রাধান্য
দিয়েছেন। এজাতীয় মত পার্থক্যের
সমাধানকল্পে শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু
তাইমিয়্যা (রহ.) বলেছেন, অধিক সংখ্যক
রাকআত পড়াই উত্তম। আর যদি কেউ কম সংখ্যক
রাকআত পড়তে চায় তাহলে তার উচিত
হবে তিলাওয়াত, কিয়াম, রুকু ও সিজদা দীর্ঘ
করা। তিনি আরো বলেছেন যে,
তারাবীহকে রাকআত সংখ্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ
না রেখে বরং সময় ব্যয়ের পরিমাণ
দিয়ে মূল্যায়ন করা উচিত। কারণ রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু ১১
রাকআতের মধ্যে ৫ ঘণ্টা সময় অতিবাহিত
করেছেন। ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল(রহঃ) এর
মতে অর্থাৎ হাম্বলী ফেকাহতে তারাবীহ
নামাজ ৮ রাকাত। এছাড়াও
মুসনাদে আহমাদের সালাত
অধ্যায়ে রাসুলুল্লাহ(সা) ৮ রাকাত তারাবীহ
সালাত আদায় করেছেন বলে হাদীস রয়েছে।
১১. অপবাদঃ ডাঃ জাকির নায়েক বলেছেন
নারী ও পুরুষের নামায একই রকম
উত্তরঃ তিনি সঠিক কথাই বলেছেন।
নবী(সা) বলেন ‘তোমরা ঠিক
সেইভাবে নামায পড়
যেইভাবে আমাকে নামায
পড়তে দেখেছো’ (বোখারী) তাই নারী পুরুষ
সকলেরই রাসুল(সা) এর মত করে নামায আদায়
করতে হবে।
ইমাম ইমাম বুখারী (রহঃ) সহীহ সনদের
সঙ্গে উম্মে দারদা (রাঃ)
থেকে বর্ণনা করেছেন যে,
তিনি নামাযে পুরুষদের মতই বসতেন [আল
তারিখ আল সাগীর আল বুখারী ৯০]
ইব্রাহিম আল নাখাই বলেন
“নারীরা নামাযে পুরুষদের মতই
বসবে” [ইবনে আবি শায়বাহ ১/১৭০]
ইবনে হাজম বলেন ‘পুরুষ এবং মহিলাদের
নামাযের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই’ [আল
মাহাল্লা ৩/৩৭]
ইবনে হাজার বলেন ‘পুরুষ এবং মহিলাদের জন্য
তাকবীরের সময় হাত তোলার
মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই’ [ফাতহুল
বারী ২/২২২]
ইবনে কুদামাহ(হাম্বলী ফেকাহবীদ) বলেন
‘প্রকৃতপক্ষে পুরুষ এবং মহিলাদের জন্য নামাযের
পদ্ধতি এক বলেই প্রমাণিত হয়েছে শুধুমাত্র
এটা ছাড়া যে তারজন্য রুকু এবং সিজদার সময়
নিজেকে আবৃত রাখা মুস্তাহাব’ [আল
মুগনি ২/২৫৮]
ইমাম নববী বলেন ‘নারীদের
নামাযে দাঁড়ানো অবস্থায় পুরুষদের মতই বুকের
উপর হাত বাঁধা উচিত’ [শরাহ মুসলিম ১/১৯৫]
এ ব্যাপারে যারা পার্থক্য করে থাকেন কিছু
হাদিসকে দলিল হিসাবে পেশ করে তাদের
হাদিস গুল দুর্বল, তা জানতে এখানে ক্লিক করুন
১২. অপবাদঃ জুমা নামাযের খুতবা মাতৃই
ভাষায়ে দেওয়া।
উত্তরঃ জুমা নামাযের খুতবা মাতৃই
ভাষায়ে দেওয়ার মত পোষণ করেছেন শ্রেষ্ঠও
আলেমগণ, সৌদি আরব এর শ্রেষ্ঠ আলেমগণ এইমত
পোষণ করেছেন ও প্রকাশ করেছেন। নবী(সা)
আরবী ভাষার মানুষ ছিলেন তাই
তিনি আরবী তে বলতেন এবং সাহাবীগণ
তা বুঝতেন। খুতবা হল ভাষণ এর মত। কেহ
যদি বাংলাদেশ এ এসে চাইনিস
ভাষায়ে মাহফিল
করে তাহলে সেইখানে কে যাবে? আর
গিয়েও লাভ কি? সে ত কিছুই বুঝবে তাই, ঠিক
তেমনি খুতবা হল বুঝার জন্য তা না বুঝলে লাভ
কি? এমনকি ইমাম আবু হানিফা এর মতেও জুম’আর
খুতবা মাতৃভাষায় দেওয়া যাবে। (রাদ আল-
মুহতার, ১/৫৪৩)
১৩. অপবাদঃ ৩ তালাক কে ১ তালাক বলা।
উত্তরঃ এটি ফেকিহ ইত্তিলাফ। অনেক
মুঝতাহিদ ইমামের মতে একসাথে ৩ তালাক
দিলে তা ১ তালাক বলে গণ্য হবে।
তবে হানাফি মাজহাবে ৩ তালাক বলেই গণ্য
হবে। তথাকথিত হানাফিরা অন্য
মাজহাবকে কতটুকু সম্মান করে তা এ থেকেই
প্রকাশ পায়ে। অন্য মাজহাবের
মতকে তারা ভ্রান্ত মত বলে। ইমাম
ইবনে তাইমিয়াহ(রহ) এর মতেও ৩ তালাক কে ১
তালাক ধরা হবে যা ইমাম ইবন কাসীর(রহ) সমর্থন
করেছেন। তবে এর পক্ষে সহীহ মুসলিমের
তালাক অধ্যায়ে কিছু হাদীস রয়েছে।
১৪. অপবাদঃ মহিলাদের
চেহারা ঢাকতে হবে না।
উত্তরঃ এটিও ইত্তিলাফি মাসলা।
শক্তিশালী মত হল মুখ ঢাকতে হবে।
তবে মুজতাহিদের কেহ কেহ মুখ খোলা রাখার
অনুমতি দিয়েছেন। যদিও এটি দুর্বল মত যে মুখ
খোলা রাখা যাবে।
১৫. অপবাদঃ শার্ট-প্যান্ট-টাই -কোর্ট এই
গুলো নামায আদায়ের সবচাইতে উত্তম
পোষাক।
উত্তরঃ এ কথা তিনি বলেননি।
তিনি বলেছেন শার্ট-প্যান্ট-টাই -কোর্ট এই
গুলো পরিধান করে সালাত আদায়
করা যাবে তবে এগুলো উত্তম পোশাক এ
কথা তিনি বলেন নাই। এবং কোন বড় আলেম
একে নিষেধ করেন নি।সৌদি আরব এর বড়
আলেমগণও একে জায়েজ বলেছেন। শুধু মাত্র
ভারত উপমহাদেশের কিছু গরু খাওয়া আলেম এর
সমালোচনা করেছে। কোরআন বা সহীহ হাদিস
এর কথাও এরুপ পোশাক পরিধান করাকে হারাম
বলা হয়ে নি। হিজাব এর নিয়মেও এরুপ পোশাক
পরিধান করাকে নিষেধ করা হয়ে নি।
হাদিসে রাসুলুল্লাহ(সা) কামিস পরিধান
করেছেন বলে প্রমান পাওয়া যায়ে। কিন্তু এই
কারনে সার্ট ও প্যান্ট পরিধান করাকে হারাম
বলা যাবে না। কেননা আজ আমরা মোবাইল
ব্যবহার করছি কিন্তু রাসুলুল্লাহ(সা)
তো তা করেন নি, তাই বলে কি মোবাইল
ব্যবহার করা হারাম হচ্ছে? না, ঠিক
তেমনি সার্ট ও প্যান্ট পরিধান করাও হারাম
হচ্ছে না। মজার বিষয় হচ্ছে- যারা পোশাক
পরিধানে রাসুলুল্লাহ(সা)
কে অনুসরণকে বাধ্যতামুলক বলছে তারাই
ইবাদাতে রাসুলুল্লাহ(সা) কে বাদ
দিয়ে বিভিন্ন মানুষের অনুসরণ করছে। কোরআন
বা সহীহ হাদিস এর কোথাও এবং বাইবেল এর
কোথাও এরুপ কোন কথা নেই যে ‘টাই’
খ্রিস্টানদের প্রতীক। এমনকি খ্রিস্টানদের
পাদ্রীরাও(ফাদার) ‘টাই’ পরিধান করে না।
এতেই স্পষ্ট যে, ‘টাই’ খ্রিস্টানদের প্রতীক না।
এছাড়াও ডাঃ যাকির নায়েক নিজেই
বলেছেনঃ “কেও যদি প্রমান করতে পারেন
যে ‘টাই’ খ্রিস্টানদের প্রতীক তাহলে আজকেই
আমি ‘টাই’ পরা বন্ধ করে দিব” আর ‘টাই’
কে সোজা করে ধরে দেখুন ‘টাই’ ক্রুস এর মত
নয়ে বরং সোজা লাঠির মত। কিন্তু
একটি পাঞ্জাবী বা জুব্বা সোজা করে ধরে দেখুন
এটি ক্রুস এর মত। তাই
বলে কি পাঞ্জাবী বা জুব্বা পরা হারাম?
না, কখনোই না।
১৬. অপবাদঃ কাকড়া ও কচ্ছপ খাওয়া হালাল।
উত্তরঃ হাদিসের কোথাও কাকড়া ও কচ্ছপ
খাওয়া হারাম বলা হয় নি। কচ্ছপ
কে ডাঃ জাঁকির হালাল বলেছেন
হলে আমার জানা নেই, আর কচ্ছপ হালাল
না হারাম তাও আমার জানা নেই।
কাকড়া খাওয়া ইমাম আহমাদ এর নিকট হালাল।
১৭. অপবাদঃ ডাঃ জাকির নায়েক বলেন-
মহিলাদের মসজিদে গিয়ে নামায
পড়তে কোন অসুবিধা নাই।
উত্তরঃ আসলেই অসুবিধা নেই।
হাম্বলি,শাফেয়ী ও
মালেকী মাজহাবে মহিলাদের
মসজিদে গিয়ে নামায পড়া জায়েজ।
এমনকি হানাফি অনেক আলেমের নিকটও
জায়েজ। সৌদি আরবেও তা হয়। এর
পক্ষে হাদীস যা আছে(আমার জানা) তার
রেফারেন্স হল-
মুসনাদে আহমাদ;হাদীস-১৩২৭,১৩২৮,১৩২৯,১৩৩০,১৩৩১,১৩৩২,১৩৩৩,১৩৩৪,১৩৩৫,১৩৩৬।
এমনকি উমার ইবনে খাত্তাব(রা) কে যখন আঘাত
(শহীদ) করা হয় তখন তার স্ত্রী মসজিদে।
(বোখারী,মুসলিম,মুসনাদে আহমাদ;হাদীস-১৩৩৬)
আব্দুল্লাহ ইবন উমার(রাদিয়াল্লাহু আনহু)
হতে বর্ণীত রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
তোমরা আল্লাহর বান্দীদেরকে(নারীদের)
মাসজিদে যেতে নিষেধ করো না। আব্দুল্লাহ
ইবন উমার(রাদিয়াল্লাহু আনহু) অন্য
সনদে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
(সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
তোমরা আল্লাহর
বান্দীদেরকে মাসজিদে গিয়ে সালাত
আদায় করতে নিষেধ করো না। [সহীহ মুসলিম,
মুয়াত্তা ইমাম মালিক,আবু দাউদ, মুসনাদ ইমাম
আহমাদ;হাদীস-১৩২৭,খণ্ড-২]
এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে
এখানে ক্লিক করুন
১৮. অপবাদঃ ডাঃ জাকির নায়েক
বলেনঃ ক্বাযা নামায পড়া লাগে না।
উত্তরঃ বে-নামাযী কাফের। বুরায়দা বিন
হুছাইব(রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
আমি শুনেছি নাবী(সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “তাদের
মাঝে এবং আমাদের
মাঝে চুক্তি হচ্ছে সালাতের,
যে ব্যাক্তি সালাত পরিত্যাগ
করবে সে কাফের হয়ে যাবে”[মুসনাদ ইমাম
আহমাদ, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ,তিরমিযী-
কিতাবুল ইমান,হাদীস-২৫৪৫]
উমার ইবন খাত্তাব(রা) বলেন,
“যে ব্যাক্তি সালাত পরিত্যাগ করে,
ইসলামে তার কোন অংশ নেই”[মুসান্নাফে ইবন
আবী শায়বা-কিতাবুল ইমান, ৩৪]
আব্দুল্লাহ ইবন শাকীক(রা) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, “নাবী(সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহাবীগন নামায
ব্যতীত কোন আমল পরিত্যাগ করার
কারনে কাউকে কাফের মনে করতেন
না” [তিরমিযী-কিতাবুল ইমান; হাকেম]
ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল র. বলেন:
“সালাত বর্জনকারী মুসলিম মিল্লাত
থেকে বহিষ্কার হয়ে যাওয়ার মত কাফির;
সে তাওবা করে সালাত আদায় করা শুরু
না করলে তাকে হত্যা করা হবে।”
অতঃপর যখন উপরোক্ত দলীলসমূহের
দাবি অনুযায়ী একথা পরিষ্কার হয়ে গেল যে,
শরীয়তসম্মত কোন ওযর ব্যতীত, সালাত
বর্জনকারী ব্যক্তি মুসলিম মিল্লাত
থেকে খারিজ করে দেওয়ার মত কাফির
হিসেবে গণ্য হবে, তখন সে মতটিই সঠিক,
যা ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল র. অবলম্বন করেছেন; আর
এটা ইমাম শাফেয়ী র. এর দু’টি মতের অন্যতম
একটি মত, যেমনটি ইবনু কাছীর র. এই আয়াতের
তাফসীরে উল্লেখ করেছেন,
যেখানে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
“তাদের পরে আসল অযোগ্য উত্তরসূরীরা,
তারা সালাত নষ্ট করল এবং কুপ্রবৃত্তির
অনুবর্তী হল।” – (সূরা মারইয়াম, আয়াত: ৫৯)।
আর ইবনুল কাইয়্যেম র. ‘কিতাবুস সালাত’ এর
মধ্যে উল্লেখ করেছেন যে, এটা হচ্ছে ইমাম
শাফেয়ী র. এর দু’টি মতের অন্যতম; আর ইমাম
ত্বাহাভী র. তা স্বয়ং ইমাম শাফেয়ী থেকেই
বর্ণনা করেছেন।
যেহেতু নামায ইচ্ছাকৃত ভাবে পরিত্যাগ
করা কালীন সে ব্যক্তি কাফের ছিল তাই
তাকে সালাত কাজা করতে হবে না।
যেমনটা নও মুসলিমদের করতে হয় না।
এটি হাম্বলী ফিকাহ এর মতামত।
১৯. অপবাদঃ ডাঃ জাকির নায়েক বলেন-
ইমাম আবু হানীফা (রাহঃ) ভুল করেছেন, ইমাম
শাফেয়ী (রহ) ভুল করেছেন, ইমাম মালেক (রহ)
ভুল করেছেন, ইমাম আহমাদ(রহ) সবাই ভুল
করেছেন।
উত্তরঃ ইমাম মালিক(রহ)
বলেছেনঃ রাসুলুল্লাহ(সা) ব্যাতিত কোন
মানুষ ভুলের উরধে নয়। এখানে ইমাম মালিকও
বলেছেন যে তারা ভুলের উরধে নয়
তাহলে ডাঃ জাঁকির ত ঠিক ই বলেছেন।
এছাড়াও ইমামগণের ভুল হয়েছে এমনটা তাদের
পূর্ববর্তী অনুসারীদের কাছে থেকে প্রকাশ
পায়। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন
২০. অপবাদঃ ২ ওয়াক্ত নামায কে একত্রিত করণ
সম্পর্কে ভ্রান্ত মতবাদ।
উত্তরঃ এটি ভ্রান্ত নয় বরং যারা একে ভ্রান্ত
বলছে তারাই ভ্রান্ত হচ্ছে।
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস(রা) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনায় অবস্থান
কালে যুহরের ৪ রাকাত ও আসরের ৪ রাকাত
মোট ৮ রাকাত এবং মাগরিবের ৩ রাকাত ও
ইশার ৪ রাকাত মোট ৭ রাকাত সালাত
একত্রে আদায় করেন[সহীহ
বুখারী,মুসলিম,নাসাই,আবু দাউদ-খণ্ড ২,অনুচ্ছেদ-
দুই ওয়াক্তের নামায একত্রে করা,হাদীস-১২১৪]
২ ওয়াক্ত নামায কে একত্রিত করণ সম্পর্কের
প্রায় সকল হাদীসের কিতাবেই হাদীস
বিদ্যমান রয়েছে। হাদিসের রেফারেনস-
সহীহ বুখারি, মুসনাদ ইমাম আহমাদ; হাদীস-
১২৩১,১২৩২,১২৩৩,১২৩৪; আবু দাউদ,
হাদীস-১২০৬,১২০৭,১২০৮,১২০৯,১২১০,১২১১,১২১২,১২১৩,১২১৪,১২১৫,১২১৬,১২১৭,১২১৮,১২১৯
১২২০।
হাম্বলী মাযহাব মতেও ২ ওয়াক্তের সালাত
একত্রে আদায় করা বৈধ।
২১. অপবাদঃ ডাঃ জাকির নায়েক কোন
মাদ্রাসা থেকে লেখা পরা করেন নি,তার
কোন ইসলামিক ডিগ্রী নেই। তাই তার ইসলাম
সম্পর্কে বলাল কোন অধিকার নেই।
উত্তরঃ কোরআন বা সহীহ হাদিস এর কোথাও
এমন কথা লেখা নেই যে,
মাদ্রাসা বা ইসলামিক
ডিগ্রী না থাকলে ইসলাম সম্পর্কে কিছু
বলা যাবে না। ইমাম আবু হানিফা(র) কোন
মাদ্রাসা থেকে লেখা পড়া করেছেন? কোন
ডিগ্রী অর্জন করেছেন? না তিনি কোন
মাদ্রাসা এ পড়েছেন না তিনি কোন
দিগ্রী অর্জন করেছেন। তার পরও ইমাম আবু
হানিফা(র) এর তাকলীদ করছে একদল মানুষ।
যদি মাদ্রাসা ও ডিগ্রী না থাকার পরও ইমাম
আবু হানিফার(র) তাকলীদ
করা যায়ে সেখানে কি ডাঃ যাকির
নায়েক ইসলাম সম্পর্কে কিছু বলতে পারেন না?
এই ২ মুখি নিতি কেন? ডাঃ যাকির নায়েক
মদিনা ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়
থেকে শিক্ষা গ্রহন করে থাকেন যখনই
সেখানে তিনি যান।
২২. অপবাদঃ ডাঃ যাকির নায়েক সার্ট ও
প্যান্ট পরিধান করেন। এটি জায়েজ নয়ে।
উত্তরঃ কোরআন বা সহীহ হাদিস এর কথাও এরুপ
পোশাক পরিধান করাকে হারাম বলা হয়ে নি।
হিজাব এর নিয়মেও এরুপ পোশাক পরিধান
করাকে নিষেধ করা হয়ে নি।
হাদিসে রাসুলুল্লাহ(সা) কামিস পরিধান
করেছেন বলে প্রমান পাওয়া যায়ে। কিন্তু এই
কারনে সার্ট ও প্যান্ট পরিধান করাকে হারাম
বলা যাবে না। কেননা আজ আমরা মোবাইল
ব্যবহার করছি কিন্তু রাসুলুল্লাহ(সা)
তো তা করেন নি, তাই বলে কি মোবাইল
ব্যবহার করা হারাম হচ্ছে? না, ঠিক
তেমনি সার্ট ও প্যান্ট পরিধান করাও হারাম
হচ্ছে না। মজার বিষয় হচ্ছে- যারা পোশাক
পরিধানে রাসুলুল্লাহ(সা)
কে অনুসরণকে বাধ্যতামুলক বলছে তারাই
ইবাদাতে রাসুলুল্লাহ(সা) কে বাদ
দিয়ে বিভিন্ন মানুষের অনুসরণ করছে।
২৩. অপবাদঃ ডাঃ যাকির নায়েক ‘টাই’
পরিধান করেন, এটি খ্রিস্টানদের প্রতীক।
উত্তরঃ কোরআন বা সহীহ হাদিস এর কোথাও
এবং বাইবেল এর কোথাও এরুপ কোন কথা নেই
যে ‘টাই’ খ্রিস্টানদের প্রতীক।
এমনকি খ্রিস্টানদের পাদ্রীরাও(ফাদার) ‘টাই’
পরিধান করে না। এতেই স্পষ্ট যে, ‘টাই’
খ্রিস্টানদের প্রতীক না। এছাড়াও
ডাঃ যাকির নায়েক নিজেই
বলেছেনঃ “কেও যদি প্রমান করতে পারেন
যে ‘টাই’ খ্রিস্টানদের প্রতীক তাহলে আজকেই
আমি ‘টাই’ পরা বন্ধ করে দিব” আর ‘টাই’
কে সোজা করে ধরে দেখুন ‘টাই’ ক্রুস এর মত
নয়ে বরং সোজা লাঠির মত। কিন্তু
একটি পাঞ্জাবী বা জুব্বা সোজা করে ধরে দেখুন
এটি ক্রুস এর মত। তাই
বলে কি পাঞ্জাবী বা জুব্বা পরা হারাম?
না, কখনোই না।
২৪. অপবাদঃ ডাঃ জাকির নায়েক
বলেছেন, দাড়ি রাখা ও টুপি পরার
কথা কোরান ও হাদিসে নেই।
উত্তরঃ ডাঃ জাকিরের
নামে তোলা অভিযোগ গুলর
মধ্যে এটি হাস্যকর। যাই হোক, ডাঃ জাকির
নায়েক বলেছেনঃ “দাড়ি রাখার
ব্যাপারে হুকুম এসেছে সহীহ হাদীসে” ও
টুপি পড়ার
ব্যাপারে বলেছেনঃ “টুপি পড়া ফরয নয়
তবে এটি রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর
সুন্নাহ” [ডাঃ জাকির নায়েক-লেকচার
সমগ্র,অধ্যায়-পোশাকের নিয়মাবলী, পৃঃ ৪৯৩ ও
৪৯৪;সত্যকথা প্রকাশনী]
বর্তমানে কিছু মুসলিম ভাই-বোন ডাঃ জাকির
নায়েক এর বিরদ্ধে এমন ভাবে লেগে পরেছেন
যা কিনা কাফিরদের বিরদ্ধেও
তারা লাগেন না। আমাদের
সমাজে শিরক,কুফর,বিদ’আত এত
পরিমাণে বিদ্যমান যা বলার অবকাশ
রাখে না কিন্তু আমরা তার
বিরোধিতা না করে বিরোধিতা করছি তার,
যে দ্বীন(ইসলাম) এর একজন বড় দায়ী।
যিনি অমুসলিমদের কাছে ইসলামকে সুন্দর
করে উপস্থাপন করছেন তার
পিছনে আমরা লেগে আমরা কিসের পরিচয়
দিচ্ছি?
ডাঃ জাকির নায়েক এর বই ‘রচনা সমগ্র’
অথবা ‘লেকচার সমগ্র’ বই থেকে তারা বিভিন্ন
বিভ্রান্তমূলক কথা বলছে। তার ই জবাব আজ
এখানে আমি দেওয়ার চেষ্টা করবো……।।
(আল্লাহ আমাদের হক কে বুঝার তৌফিক দান
করুন।-আমিন)
১. অপবাদঃ ডাঃ যাকির নায়েক বলেছেন
আল্লাহকে আমরা ব্রাহ্ম ও বিষ্ণু
নামে ডাকতে পারবো।
উত্তরঃ ব্রাহ্ম ও বিষ্ণু এই নামগুল সংস্কৃত নাম। এই
২টি নামই আরবীতে নিলে আল্লাহর
৯৯টি নামের মধ্য হতে ২টি নামের
কাছে চলে যায়। যেমনঃ ব্রাহ্ম
নামটি আরবীতে নিলে তা অনেকটা ‘খালিক’
নামের মত অর্থ করে। বাংলাতে অর্থ হয় ‘স্রষ্টা’
আর যেহেতু আমরা আল্লাহকে ‘খালিক’
অথবা ‘স্রষ্টা’ নামে ডাকতে পারবো তাই
ডাঃ যাকির নায়েক এই কথা বলেছেন।
তাহলে যারা আল্লাহকে ‘ব্রাহ্ম’
নামে ডাকতে বলাতে নিন্দা করছেন
তারা ‘স্রষ্টা’ নামে ডাকতেও বাধা দেওয়ার
দরকার। কারণ হিন্দুরাও তো তাদের
দেবতাদের ‘স্রষ্টা’ বলে ডাকে। যেহেতু
‘ব্রাহ্ম’ বলে ডাকা যাবে না সেহেতু ‘স্রষ্টা’
বলেও ডাকা যাবে না কারণ এই ২ টি অর্থ এক।
কিন্তু ডাঃ জাকির নায়েক এটিও বলেছেন
যদি কেও বলে ‘ব্রাহ্ম’ হল সে যার
কয়েকটা হাত আছে,এরকম করে যদি আকার
দেওয়া হয়
তাহলে আমরা মুসলিমরা আপত্তি জানাবো(লেকচারঃ ইসলাম
ও হিন্দু ধর্মের মধ্যে সাদৃশ্য/প্রধান ধর্ম
গুলতে স্রষ্টার ধারনা) কিন্তু একটি জিনিস
আমাদের বুঝতে হবে তা হল ডাঃ জাকির
নায়েক এসব কথাগুলো হিন্দুদের বলেছেন।
তিনি মুসলিমদের এই কথা বলছেন
না যে আপনারা ‘খালিক’ নাম বাদে ব্রাহ্ম
নামে আল্লাহকে ডাকুন। তিনি শুধুমাত্র ইসলাম
ও হিন্দু ধর্মের মধ্যে সাদৃশ্য দেখিয়েছেন।
আমরা আল্লাহকে ‘খালিক’ নামেই ডাকব
‘ব্রাহ্ম’ নামে ডাকব না।
২. অপবাদঃ ডাঃ যাকির নায়েক বলেছেন
রাম আর অর্জুন নবী।
উত্তরঃ ডাঃ যাকির নায়েক কখনই এই
কথা বলেন নাই যে রাম আর অর্জুন নবী,
বরং তিনি বলেছেন তারা নবী হতেও
পারে আবার নাও হতে পারে।কারণ
কোরানে শুধু মাত্র ২৫ জন নবীর নাম
বলা হয়েছে।(লেকচারঃ ইসলাম ও হিন্দু ধর্মের
মধ্যে সাদৃশ্য/প্রধান ধর্ম গুলতে স্রষ্টার ধারনা)
রাসুলুল্লাহ(সা) এর হাদিস
অনুসারে পৃথিবীতে প্রায় ১ লক্ষেরও
বেশী নবী এসেছেন। এর মধ্যে কোরআনে ২৫ জন
নবীর নাম এসেছে। রাম আর অর্জুন এর কিছু কাজ
নবীদের কাজের সাথে মিলে। তাই
ডাঃ যাকির নায়েক বলেছেন রাম আর অর্জুন
নবী হতে পারেন আবার নাও হতে পারেন।
কিন্তু আমরা(মুসলিমরা) কখনই রাম আর অর্জুন এর
উপর নবী হিসাবে ঈমান আনব না। কারন
তারা নবী বলে প্রমানিত নয়।
৩. অপবাদঃ ডাঃ জাঁকির নায়েক
নাকি বলেছেন কোরআনে ব্যাকারনগত ভুল
আছে।
উত্তরঃ কোরআনে ব্যাকারনগত ভুল আছে এই
কথা ডাঃ জাঁকির নায়েক বলতেই পারেন
না। বরং, আমেরিকাতে ডাঃ উইলিয়াম
ক্যাম্পবেল এর সাথে বিতর্ক করার
সময়ে ডাঃ জাকির নায়েককে এক অমুসলিম
প্রশ্ন করেছিলেন, তার প্রশ্ন ছিলঃ
“ডাঃ জাঁকির নায়েক আপনি বলেছেন
কোরআনে কোন ভুল নেই কিন্তু
আমি দেখছি যে এতে ২০ টিরও অধিক
আরবি ব্যাকারনগত ভুল রয়েছে। আমি এর মধ্য
থেকে কয়েকটি উল্লেখ্য করতে চাই যেমন
সুরা বাঁকারা ও সুরা হাজ্জ এ বলা হয়েছে-
‘আসাবিউন’ কিংবা ‘আসাবিরীন’ এটা ১ নম্বর
ভুল। ২য় ভুল হচ্ছে, আপনি বলেছেন, প্রায় একই
বিষয় যা সুরা ত্ব-হা’র ৬৩
নং আয়াতে রয়েছে এটাও ভুল।
এটি কি আপনি ব্যাখ্যা করতে পারেন? আর
সেখানে রয়েছে আর মারাত্মক ভুল”
এর উত্তরে ডাঃ জাকির নায়েক
বললেনঃ “আমার ভাই একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন
করেছেন। আমাকে আর অধিক যথার্থ হতে হবে।
তিনি ২০টি ব্যাকারনগত সমস্যার
কথা বলেছেন।আর তিনি সম্ভবত আব্দুল ফাঁদির
রচিত বই থেকে উল্লেখ
করেছেন,বইটা কি সঠিক? কোরআন কি ভুল-
ভ্রান্তির উর্ধে নয়? ” এখানে আমি ২০
টি প্রশ্নেরই উত্তর দিব কারণ আমি উল্লেখিত
বইটি পরেছি। প্রথম বিষয়ে টি হচ্ছে সমস্ত
আরবি ব্যাকারনই কোরআন কে সংকলিত। আর
কোরআন হচ্ছে উচ্চমানের আরবি বই। এটি এমন
একটি বই যেখানে সর্বচ্চমানের সাহিত্য
সন্নিবেশিত রয়েছে। যেহেতু কোরআন
হচ্ছে আরবি ব্যাকারনের নিদর্শন আর সকল
আরবি ব্যাকারনই পবিত্র কোরআন
থেকে সংকলিত সেহেতু এখানে(কোরআনে)
কোন ভুলই থাকতে পারে না। আরবের অঞ্চল
ভেদে শব্দের পরিবর্তন রয়েছে যেমন কোন
অঞ্চলে যেই শব্দ পুরুষবাচক অন্য
অঞ্চলে তা স্ত্রীবাচক। আরবের
অঞ্চলভেদে ভাষার পরিবর্তন বিদ্যমান।
সুতরাং আপনি কি ভুলকৃত ব্যাকারন
দিয়ে কোরআন যাচাই করবেন? কখনই না।
(রচনা সমগ্র;পৃ-৮৯,খণ্ড-১,অধ্যায়-২,কোরআন ও
বাইবেল। লেকচারঃ Quran & Bible In The Light Of
Mordern Science,Questions & Answers Session)
ডাঃ জাকির নায়েকের এই কথার মাধ্যমেই
প্রমাণ হয় তিনি কোরআনকে নির্ভুল মানেন।
আর কোরআনে ব্যাকারনগত ভুল আছে এই
কথা ডাঃ জাকির নায়েক বলেছেন
বলে কথাও আমি পাইনি এবং ইনশা আল্লাহ
পাবোও না।
৪. অপবাদঃ ডাঃ জাকির নায়েক বলেছেন
‘বেদ’ আল্লাহর কিতাব।
উত্তরঃ ডাঃ জাকির নায়েক এই কথা বলেন
নি বরং তিনি বলেছেন ‘বেদ’ আল্লাহর
কিতাব হতেও পারে আবার নাও হতে পারে।
যদি হয়েও থাকে তার পরও এই কিতাব এখন
আল্লাহর কাছে গ্রহণ যোগ্য নয়।
কোরআনে আল্লাহ ৪ টি কিতাবের নাম
বলেছেন। যেহেতু, ‘বেদ’ বলছে এক
আল্লাহকে নিয়ে, বলছে নাবী(সা)
কে নিয়ে তাই এই কিতাবকে ডাঃ জাকির
নায়েক আল্লাহর কিতাব হতেও পারে আবার
নাও হতে পারে বলে দাবী করেছেন। যদি এই
কিতাব আল্লাহর পাঠান না হয়
তাহলে কিভাবে এই কিতাবে এক আল্লাহ ও
নাবী মুহাম্মাদ(সা) এর ব্যাপারে বলছে? তাই
ডাঃ জাকির নায়েক এই কথা বলেছেন। কিন্তু
আমরা বেদ কে আল্লাহর কিতাব বলে ইমান আনব
না।
৫. অপবাদঃ ডাঃ জাকির নায়েক
নাকি বলেছেন যে ৪ জন মহিলা নবী এসেছেন
আর তারা হলেন-
বিবি মরিয়ম,বিবি আসিয়া,বিবি ফাতিমা,বিবি খাদিজা
উত্তরঃ ডাঃ জাকির নায়েক এর লেকচার
দেখলেই আপনারা দেখবেন
তিনি বিবি ফাতিমা ও মা খাদিযা(রা) এর
পর (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) বলেন,
তিনি যদি তাদের নবী মানতেন
তাহলে তিনি তাদের নামের পর বলতেন
(আঃ)।
এছাড়াও এই কথা ডাঃ জাকির নায়েক কখনই
বলেন নি, তার কোন বইতেও এই লেখা নেই।
বরং তার বই রচনা সমগ্র এর খণ্ড-১ এর প্রশ্ন-উত্তর পর্ব
অধ্যায় এর ৬৭৭ পৃঃ বলেছেন-
‘যদি নবী বলতে আপনি বুঝেন এমন এক
ব্যক্তি যিনি আল্লাহর কাছ থেকে বানী গ্রহণ
করেন ও যিনি মানব জাতির
নেতা হিসাবে কাজ করেন
তাহলে আমি নিঃসন্দেহে বলতে পারি ইসলামে আমরা কোন
নারী নাবী পাইনি’
এখানে তিনি নারী নবী হওয়ার বিরদ্ধে আর
যুক্তি দিতে গিয়ে বলেনঃ “যদি মহিলা নবী হত
আর স্বাভাবিক ভাবে সে গর্ভবতী হত
তবে তার পক্ষে কয়েক মাস নবুয়াত এর
নির্ধারিত দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হত না। আর
যদি আপনি নবী বলতে বুঝান আল্লাহর প্রিয়
ব্যক্তি তাহলে কিছু মহিলার উদাহরণ হল-
বিবি মরিয়াম,আসিয়া,খাদিজা,ফাতেমা(রা)”
কিন্তু তিনি এখানে তাদেরকে নবী বলেন
নি বরং আল্লাহর প্রিয় ব্যক্তি বলেছেন।
৬. অপবাদঃ ডাঃ জাকির নায়েক বলেছেন
নবী মুহাম্মাদ(সা) তার কবরে স-শরীরে মৃত।
উত্তরঃ আল্লাহ কোরআনে বলেছেনঃ “বল
(হে নবী!) আমিও তমাদেরই মত একজন
মানুষ”(সুরা কাহাফ;১১০) এছাড়াও আল্লাহ
কোরআনে নাবী(সা)কে লক্ষ্য
করে বলেছেনঃ “তোমাকেও
মরতে হবে তাদেরও মরতে হবে”(সুরা জুমার;৩০)
এখানে আমরা দেখতে পারছি ডাঃ জাকির
নায়েক ঠিক কথাই বলেছেন। এছাড়াও
আপনি তাফসীর ইবনে কাসীর এ এই আয়াত
(সুরা জুমার;৩০) এর তাফসীর দেখতে পারেন।
সেখানেও ইমাম ইবন কাসীর(রহ) সুরা জুমার ৩০
নং আয়াতের তাফসীরে বলেছেন
যে “রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মৃত”
৭. অপবাদঃ ডাঃ জাকির নায়েক বলেছেন
হায়েজ-নেফাস কালে কোরআন তেলাওয়াত
করা যাবে
উত্তরঃ হায়েজ-নেফাস কালে কোরআন
তেলাওয়াত করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আর এই
কথা ডাঃ জাকির নায়েক বলেছেন
বলে কোন কিতাবে বা লেকচার এ
আমি পাইনি। আর আসলেই
তিনি এটি বলে থাকলে আমি মনে করি তিনি ভুল
বলেছেন।
৮. অপবাদঃ ডাঃ জাকির নায়েক বলেছেন
ঈদের দিন জুমা নামাজ পড়া লাগে না
উত্তরঃ এটি সঠিক কথা।
এর পক্ষে হাদীসঃ ১. হযরত আইয়াশ ইবনে আবু
রামলা আশ-শামি(র)হতে বর্ণিত,তিনি বলেন-
একদা হযরত মুয়াবিয়া(রা) হযরত জায়েদ
ইবনে আরকাম(রা)কে কিছু জিজ্ঞাসা করার
সময় আমি তার সামনে উপস্থিত ছিলাম।
তিনি বলেন- আপনি কি রাসুল(সা) এর সময় একই
দিনে ঈদ ও জুমা অনুষ্ঠিত হতে দেখেছেন?
তিনি বললেন- হ্যা। তিনি পুনরায়
জিজ্ঞাসা করলেন, তিনি কিরূপে তা আদায়
করেন? তিনি বলেন- নাবী(সা) প্রথমে ঈদের
নামায আদায় করেন অতঃপর জুমা নামায
আদায়ের ব্যাপারে অবকাশ প্রদান
করে বলেনঃ যে ব্যক্তি তা আদায় করতে চায়,
সে তা আদায় করতে পারে।(আবু
দাউদ,হাদীস-১০৭০; নাসাই,ইবনে মাজাহ)
তাই ডাঃ জাকিরের কথা সঠিক। এছাড়াও
মুজতাহিদ(ইমাম আবু
হানিফা,মালিক,শাফিঈ,আহমাদ,ছাওরী,ইসহাক)
দের মধ্যে এ বিষয়ে ইত্তিলাফ আছে। ইমাম
আহমাদের মতে অর্থাৎ
হাম্বলী ফেকাহতে ঈদের দিন জুমা নামাজ
পড়া লাগে না।
৯. অপবাদঃ ঈদের নামায ১২ তাকবীর এ আদায়
করা
উত্তরঃ আমার অবাক লাগে তাদের দেখে,
তারা(ডাঃ জাকিরের বিরদ্ধে যারা আছে)
নিজেরা মাজহাব মানা সত্ত্বেও অন্য
মাজহাবের মাসআলা কে অপছন্দ করে।
রাসুলুল্লাহ(সা) ঈদের নামায ১২
তাকবীরে আদায় করেছেন।(আবু দাউদ,হাদীস
নং-১১৪৯,১১৫০,১১৫১;মুসনাদে আহমাদ)।
ইমাম মালিক,শাফিঈ,আহমাদ ইবনে হাম্মব(র) এর
মত ঈদের নামায ১২ তাকবীর এ আদায়
করতে হবে, মাসজিদুল হারাম ও নববী সহ
সৌদি আরবেও ১২ তাকবীরে ঈদের সালাত
আদায় হয়ে থাকে।
১০. অপবাদঃ ডাঃ জাকির নায়েক বলেছেন
তারাবীহ নামায ৮ রাকাত
উত্তরঃ ডাঃ জাকির নায়েক বলেছেন
তারাবীহ নামায ৮ রাকাত আদায়
করা যাবে কিন্তু ২০ রাকাত ও আদায়
করা যাবে। উমার(রা) ৮ রাকাত তারাবীহ
পরেছেন(মুয়াত্তা ইমাম মালিক) এবং ২০
রাকাত তারাবীহ পরবর্তীতে চালু করেছেন।
(ইমাম ইবনে তাইমিয়া ও ইমাম ইবনে কাইয়ুম)।
রাসুলুল্লাহ(সা) বলেছেনঃ রাতের নামায দু দু
রাকাত করে। এর উপর
ভিত্তি করে মালেকী মাযহাবের ইমাম
মালেক (রহঃ) বলেছেন, একশ বছরেরও বেশী সময়
ধরে লোকেরা ৩৬ রাকআত তারাবীহ পড়েছে।
হাম্বলী মাজহাবে তারাবীহ নামায ৮
রাকাত। শ্রদ্ধেয় আলেমে দ্বীন
আল্লামা মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল উসাইমীন
(রহ.) ৮ রাকআতের মাসআলাকে প্রাধান্য
দিয়েছেন। এজাতীয় মত পার্থক্যের
সমাধানকল্পে শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু
তাইমিয়্যা (রহ.) বলেছেন, অধিক সংখ্যক
রাকআত পড়াই উত্তম। আর যদি কেউ কম সংখ্যক
রাকআত পড়তে চায় তাহলে তার উচিত
হবে তিলাওয়াত, কিয়াম, রুকু ও সিজদা দীর্ঘ
করা। তিনি আরো বলেছেন যে,
তারাবীহকে রাকআত সংখ্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ
না রেখে বরং সময় ব্যয়ের পরিমাণ
দিয়ে মূল্যায়ন করা উচিত। কারণ রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু ১১
রাকআতের মধ্যে ৫ ঘণ্টা সময় অতিবাহিত
করেছেন। ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল(রহঃ) এর
মতে অর্থাৎ হাম্বলী ফেকাহতে তারাবীহ
নামাজ ৮ রাকাত। এছাড়াও
মুসনাদে আহমাদের সালাত
অধ্যায়ে রাসুলুল্লাহ(সা) ৮ রাকাত তারাবীহ
সালাত আদায় করেছেন বলে হাদীস রয়েছে।
১১. অপবাদঃ ডাঃ জাকির নায়েক বলেছেন
নারী ও পুরুষের নামায একই রকম
উত্তরঃ তিনি সঠিক কথাই বলেছেন।
নবী(সা) বলেন ‘তোমরা ঠিক
সেইভাবে নামায পড়
যেইভাবে আমাকে নামায
পড়তে দেখেছো’ (বোখারী) তাই নারী পুরুষ
সকলেরই রাসুল(সা) এর মত করে নামায আদায়
করতে হবে।
ইমাম ইমাম বুখারী (রহঃ) সহীহ সনদের
সঙ্গে উম্মে দারদা (রাঃ)
থেকে বর্ণনা করেছেন যে,
তিনি নামাযে পুরুষদের মতই বসতেন [আল
তারিখ আল সাগীর আল বুখারী ৯০]
ইব্রাহিম আল নাখাই বলেন
“নারীরা নামাযে পুরুষদের মতই
বসবে” [ইবনে আবি শায়বাহ ১/১৭০]
ইবনে হাজম বলেন ‘পুরুষ এবং মহিলাদের
নামাযের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই’ [আল
মাহাল্লা ৩/৩৭]
ইবনে হাজার বলেন ‘পুরুষ এবং মহিলাদের জন্য
তাকবীরের সময় হাত তোলার
মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই’ [ফাতহুল
বারী ২/২২২]
ইবনে কুদামাহ(হাম্বলী ফেকাহবীদ) বলেন
‘প্রকৃতপক্ষে পুরুষ এবং মহিলাদের জন্য নামাযের
পদ্ধতি এক বলেই প্রমাণিত হয়েছে শুধুমাত্র
এটা ছাড়া যে তারজন্য রুকু এবং সিজদার সময়
নিজেকে আবৃত রাখা মুস্তাহাব’ [আল
মুগনি ২/২৫৮]
ইমাম নববী বলেন ‘নারীদের
নামাযে দাঁড়ানো অবস্থায় পুরুষদের মতই বুকের
উপর হাত বাঁধা উচিত’ [শরাহ মুসলিম ১/১৯৫]
এ ব্যাপারে যারা পার্থক্য করে থাকেন কিছু
হাদিসকে দলিল হিসাবে পেশ করে তাদের
হাদিস গুল দুর্বল, তা জানতে এখানে ক্লিক করুন
১২. অপবাদঃ জুমা নামাযের খুতবা মাতৃই
ভাষায়ে দেওয়া।
উত্তরঃ জুমা নামাযের খুতবা মাতৃই
ভাষায়ে দেওয়ার মত পোষণ করেছেন শ্রেষ্ঠও
আলেমগণ, সৌদি আরব এর শ্রেষ্ঠ আলেমগণ এইমত
পোষণ করেছেন ও প্রকাশ করেছেন। নবী(সা)
আরবী ভাষার মানুষ ছিলেন তাই
তিনি আরবী তে বলতেন এবং সাহাবীগণ
তা বুঝতেন। খুতবা হল ভাষণ এর মত। কেহ
যদি বাংলাদেশ এ এসে চাইনিস
ভাষায়ে মাহফিল
করে তাহলে সেইখানে কে যাবে? আর
গিয়েও লাভ কি? সে ত কিছুই বুঝবে তাই, ঠিক
তেমনি খুতবা হল বুঝার জন্য তা না বুঝলে লাভ
কি? এমনকি ইমাম আবু হানিফা এর মতেও জুম’আর
খুতবা মাতৃভাষায় দেওয়া যাবে। (রাদ আল-
মুহতার, ১/৫৪৩)
১৩. অপবাদঃ ৩ তালাক কে ১ তালাক বলা।
উত্তরঃ এটি ফেকিহ ইত্তিলাফ। অনেক
মুঝতাহিদ ইমামের মতে একসাথে ৩ তালাক
দিলে তা ১ তালাক বলে গণ্য হবে।
তবে হানাফি মাজহাবে ৩ তালাক বলেই গণ্য
হবে। তথাকথিত হানাফিরা অন্য
মাজহাবকে কতটুকু সম্মান করে তা এ থেকেই
প্রকাশ পায়ে। অন্য মাজহাবের
মতকে তারা ভ্রান্ত মত বলে। ইমাম
ইবনে তাইমিয়াহ(রহ) এর মতেও ৩ তালাক কে ১
তালাক ধরা হবে যা ইমাম ইবন কাসীর(রহ) সমর্থন
করেছেন। তবে এর পক্ষে সহীহ মুসলিমের
তালাক অধ্যায়ে কিছু হাদীস রয়েছে।
১৪. অপবাদঃ মহিলাদের
চেহারা ঢাকতে হবে না।
উত্তরঃ এটিও ইত্তিলাফি মাসলা।
শক্তিশালী মত হল মুখ ঢাকতে হবে।
তবে মুজতাহিদের কেহ কেহ মুখ খোলা রাখার
অনুমতি দিয়েছেন। যদিও এটি দুর্বল মত যে মুখ
খোলা রাখা যাবে।
১৫. অপবাদঃ শার্ট-প্যান্ট-টাই -কোর্ট এই
গুলো নামায আদায়ের সবচাইতে উত্তম
পোষাক।
উত্তরঃ এ কথা তিনি বলেননি।
তিনি বলেছেন শার্ট-প্যান্ট-টাই -কোর্ট এই
গুলো পরিধান করে সালাত আদায়
করা যাবে তবে এগুলো উত্তম পোশাক এ
কথা তিনি বলেন নাই। এবং কোন বড় আলেম
একে নিষেধ করেন নি।সৌদি আরব এর বড়
আলেমগণও একে জায়েজ বলেছেন। শুধু মাত্র
ভারত উপমহাদেশের কিছু গরু খাওয়া আলেম এর
সমালোচনা করেছে। কোরআন বা সহীহ হাদিস
এর কথাও এরুপ পোশাক পরিধান করাকে হারাম
বলা হয়ে নি। হিজাব এর নিয়মেও এরুপ পোশাক
পরিধান করাকে নিষেধ করা হয়ে নি।
হাদিসে রাসুলুল্লাহ(সা) কামিস পরিধান
করেছেন বলে প্রমান পাওয়া যায়ে। কিন্তু এই
কারনে সার্ট ও প্যান্ট পরিধান করাকে হারাম
বলা যাবে না। কেননা আজ আমরা মোবাইল
ব্যবহার করছি কিন্তু রাসুলুল্লাহ(সা)
তো তা করেন নি, তাই বলে কি মোবাইল
ব্যবহার করা হারাম হচ্ছে? না, ঠিক
তেমনি সার্ট ও প্যান্ট পরিধান করাও হারাম
হচ্ছে না। মজার বিষয় হচ্ছে- যারা পোশাক
পরিধানে রাসুলুল্লাহ(সা)
কে অনুসরণকে বাধ্যতামুলক বলছে তারাই
ইবাদাতে রাসুলুল্লাহ(সা) কে বাদ
দিয়ে বিভিন্ন মানুষের অনুসরণ করছে। কোরআন
বা সহীহ হাদিস এর কোথাও এবং বাইবেল এর
কোথাও এরুপ কোন কথা নেই যে ‘টাই’
খ্রিস্টানদের প্রতীক। এমনকি খ্রিস্টানদের
পাদ্রীরাও(ফাদার) ‘টাই’ পরিধান করে না।
এতেই স্পষ্ট যে, ‘টাই’ খ্রিস্টানদের প্রতীক না।
এছাড়াও ডাঃ যাকির নায়েক নিজেই
বলেছেনঃ “কেও যদি প্রমান করতে পারেন
যে ‘টাই’ খ্রিস্টানদের প্রতীক তাহলে আজকেই
আমি ‘টাই’ পরা বন্ধ করে দিব” আর ‘টাই’
কে সোজা করে ধরে দেখুন ‘টাই’ ক্রুস এর মত
নয়ে বরং সোজা লাঠির মত। কিন্তু
একটি পাঞ্জাবী বা জুব্বা সোজা করে ধরে দেখুন
এটি ক্রুস এর মত। তাই
বলে কি পাঞ্জাবী বা জুব্বা পরা হারাম?
না, কখনোই না।
১৬. অপবাদঃ কাকড়া ও কচ্ছপ খাওয়া হালাল।
উত্তরঃ হাদিসের কোথাও কাকড়া ও কচ্ছপ
খাওয়া হারাম বলা হয় নি। কচ্ছপ
কে ডাঃ জাঁকির হালাল বলেছেন
হলে আমার জানা নেই, আর কচ্ছপ হালাল
না হারাম তাও আমার জানা নেই।
কাকড়া খাওয়া ইমাম আহমাদ এর নিকট হালাল।
১৭. অপবাদঃ ডাঃ জাকির নায়েক বলেন-
মহিলাদের মসজিদে গিয়ে নামায
পড়তে কোন অসুবিধা নাই।
উত্তরঃ আসলেই অসুবিধা নেই।
হাম্বলি,শাফেয়ী ও
মালেকী মাজহাবে মহিলাদের
মসজিদে গিয়ে নামায পড়া জায়েজ।
এমনকি হানাফি অনেক আলেমের নিকটও
জায়েজ। সৌদি আরবেও তা হয়। এর
পক্ষে হাদীস যা আছে(আমার জানা) তার
রেফারেন্স হল-
মুসনাদে আহমাদ;হাদীস-১৩২৭,১৩২৮,১৩২৯,১৩৩০,১৩৩১,১৩৩২,১৩৩৩,১৩৩৪,১৩৩৫,১৩৩৬।
এমনকি উমার ইবনে খাত্তাব(রা) কে যখন আঘাত
(শহীদ) করা হয় তখন তার স্ত্রী মসজিদে।
(বোখারী,মুসলিম,মুসনাদে আহমাদ;হাদীস-১৩৩৬)
আব্দুল্লাহ ইবন উমার(রাদিয়াল্লাহু আনহু)
হতে বর্ণীত রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
তোমরা আল্লাহর বান্দীদেরকে(নারীদের)
মাসজিদে যেতে নিষেধ করো না। আব্দুল্লাহ
ইবন উমার(রাদিয়াল্লাহু আনহু) অন্য
সনদে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
(সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
তোমরা আল্লাহর
বান্দীদেরকে মাসজিদে গিয়ে সালাত
আদায় করতে নিষেধ করো না। [সহীহ মুসলিম,
মুয়াত্তা ইমাম মালিক,আবু দাউদ, মুসনাদ ইমাম
আহমাদ;হাদীস-১৩২৭,খণ্ড-২]
এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে
এখানে ক্লিক করুন
১৮. অপবাদঃ ডাঃ জাকির নায়েক
বলেনঃ ক্বাযা নামায পড়া লাগে না।
উত্তরঃ বে-নামাযী কাফের। বুরায়দা বিন
হুছাইব(রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
আমি শুনেছি নাবী(সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “তাদের
মাঝে এবং আমাদের
মাঝে চুক্তি হচ্ছে সালাতের,
যে ব্যাক্তি সালাত পরিত্যাগ
করবে সে কাফের হয়ে যাবে”[মুসনাদ ইমাম
আহমাদ, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ,তিরমিযী-
কিতাবুল ইমান,হাদীস-২৫৪৫]
উমার ইবন খাত্তাব(রা) বলেন,
“যে ব্যাক্তি সালাত পরিত্যাগ করে,
ইসলামে তার কোন অংশ নেই”[মুসান্নাফে ইবন
আবী শায়বা-কিতাবুল ইমান, ৩৪]
আব্দুল্লাহ ইবন শাকীক(রা) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, “নাবী(সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহাবীগন নামায
ব্যতীত কোন আমল পরিত্যাগ করার
কারনে কাউকে কাফের মনে করতেন
না” [তিরমিযী-কিতাবুল ইমান; হাকেম]
ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল র. বলেন:
“সালাত বর্জনকারী মুসলিম মিল্লাত
থেকে বহিষ্কার হয়ে যাওয়ার মত কাফির;
সে তাওবা করে সালাত আদায় করা শুরু
না করলে তাকে হত্যা করা হবে।”
অতঃপর যখন উপরোক্ত দলীলসমূহের
দাবি অনুযায়ী একথা পরিষ্কার হয়ে গেল যে,
শরীয়তসম্মত কোন ওযর ব্যতীত, সালাত
বর্জনকারী ব্যক্তি মুসলিম মিল্লাত
থেকে খারিজ করে দেওয়ার মত কাফির
হিসেবে গণ্য হবে, তখন সে মতটিই সঠিক,
যা ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল র. অবলম্বন করেছেন; আর
এটা ইমাম শাফেয়ী র. এর দু’টি মতের অন্যতম
একটি মত, যেমনটি ইবনু কাছীর র. এই আয়াতের
তাফসীরে উল্লেখ করেছেন,
যেখানে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
“তাদের পরে আসল অযোগ্য উত্তরসূরীরা,
তারা সালাত নষ্ট করল এবং কুপ্রবৃত্তির
অনুবর্তী হল।” – (সূরা মারইয়াম, আয়াত: ৫৯)।
আর ইবনুল কাইয়্যেম র. ‘কিতাবুস সালাত’ এর
মধ্যে উল্লেখ করেছেন যে, এটা হচ্ছে ইমাম
শাফেয়ী র. এর দু’টি মতের অন্যতম; আর ইমাম
ত্বাহাভী র. তা স্বয়ং ইমাম শাফেয়ী থেকেই
বর্ণনা করেছেন।
যেহেতু নামায ইচ্ছাকৃত ভাবে পরিত্যাগ
করা কালীন সে ব্যক্তি কাফের ছিল তাই
তাকে সালাত কাজা করতে হবে না।
যেমনটা নও মুসলিমদের করতে হয় না।
এটি হাম্বলী ফিকাহ এর মতামত।
১৯. অপবাদঃ ডাঃ জাকির নায়েক বলেন-
ইমাম আবু হানীফা (রাহঃ) ভুল করেছেন, ইমাম
শাফেয়ী (রহ) ভুল করেছেন, ইমাম মালেক (রহ)
ভুল করেছেন, ইমাম আহমাদ(রহ) সবাই ভুল
করেছেন।
উত্তরঃ ইমাম মালিক(রহ)
বলেছেনঃ রাসুলুল্লাহ(সা) ব্যাতিত কোন
মানুষ ভুলের উরধে নয়। এখানে ইমাম মালিকও
বলেছেন যে তারা ভুলের উরধে নয়
তাহলে ডাঃ জাঁকির ত ঠিক ই বলেছেন।
এছাড়াও ইমামগণের ভুল হয়েছে এমনটা তাদের
পূর্ববর্তী অনুসারীদের কাছে থেকে প্রকাশ
পায়। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন
২০. অপবাদঃ ২ ওয়াক্ত নামায কে একত্রিত করণ
সম্পর্কে ভ্রান্ত মতবাদ।
উত্তরঃ এটি ভ্রান্ত নয় বরং যারা একে ভ্রান্ত
বলছে তারাই ভ্রান্ত হচ্ছে।
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস(রা) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনায় অবস্থান
কালে যুহরের ৪ রাকাত ও আসরের ৪ রাকাত
মোট ৮ রাকাত এবং মাগরিবের ৩ রাকাত ও
ইশার ৪ রাকাত মোট ৭ রাকাত সালাত
একত্রে আদায় করেন[সহীহ
বুখারী,মুসলিম,নাসাই,আবু দাউদ-খণ্ড ২,অনুচ্ছেদ-
দুই ওয়াক্তের নামায একত্রে করা,হাদীস-১২১৪]
২ ওয়াক্ত নামায কে একত্রিত করণ সম্পর্কের
প্রায় সকল হাদীসের কিতাবেই হাদীস
বিদ্যমান রয়েছে। হাদিসের রেফারেনস-
সহীহ বুখারি, মুসনাদ ইমাম আহমাদ; হাদীস-
১২৩১,১২৩২,১২৩৩,১২৩৪; আবু দাউদ,
হাদীস-১২০৬,১২০৭,১২০৮,১২০৯,১২১০,১২১১,১২১২,১২১৩,১২১৪,১২১৫,১২১৬,১২১৭,১২১৮,১২১৯
১২২০।
হাম্বলী মাযহাব মতেও ২ ওয়াক্তের সালাত
একত্রে আদায় করা বৈধ।
২১. অপবাদঃ ডাঃ জাকির নায়েক কোন
মাদ্রাসা থেকে লেখা পরা করেন নি,তার
কোন ইসলামিক ডিগ্রী নেই। তাই তার ইসলাম
সম্পর্কে বলাল কোন অধিকার নেই।
উত্তরঃ কোরআন বা সহীহ হাদিস এর কোথাও
এমন কথা লেখা নেই যে,
মাদ্রাসা বা ইসলামিক
ডিগ্রী না থাকলে ইসলাম সম্পর্কে কিছু
বলা যাবে না। ইমাম আবু হানিফা(র) কোন
মাদ্রাসা থেকে লেখা পড়া করেছেন? কোন
ডিগ্রী অর্জন করেছেন? না তিনি কোন
মাদ্রাসা এ পড়েছেন না তিনি কোন
দিগ্রী অর্জন করেছেন। তার পরও ইমাম আবু
হানিফা(র) এর তাকলীদ করছে একদল মানুষ।
যদি মাদ্রাসা ও ডিগ্রী না থাকার পরও ইমাম
আবু হানিফার(র) তাকলীদ
করা যায়ে সেখানে কি ডাঃ যাকির
নায়েক ইসলাম সম্পর্কে কিছু বলতে পারেন না?
এই ২ মুখি নিতি কেন? ডাঃ যাকির নায়েক
মদিনা ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়
থেকে শিক্ষা গ্রহন করে থাকেন যখনই
সেখানে তিনি যান।
২২. অপবাদঃ ডাঃ যাকির নায়েক সার্ট ও
প্যান্ট পরিধান করেন। এটি জায়েজ নয়ে।
উত্তরঃ কোরআন বা সহীহ হাদিস এর কথাও এরুপ
পোশাক পরিধান করাকে হারাম বলা হয়ে নি।
হিজাব এর নিয়মেও এরুপ পোশাক পরিধান
করাকে নিষেধ করা হয়ে নি।
হাদিসে রাসুলুল্লাহ(সা) কামিস পরিধান
করেছেন বলে প্রমান পাওয়া যায়ে। কিন্তু এই
কারনে সার্ট ও প্যান্ট পরিধান করাকে হারাম
বলা যাবে না। কেননা আজ আমরা মোবাইল
ব্যবহার করছি কিন্তু রাসুলুল্লাহ(সা)
তো তা করেন নি, তাই বলে কি মোবাইল
ব্যবহার করা হারাম হচ্ছে? না, ঠিক
তেমনি সার্ট ও প্যান্ট পরিধান করাও হারাম
হচ্ছে না। মজার বিষয় হচ্ছে- যারা পোশাক
পরিধানে রাসুলুল্লাহ(সা)
কে অনুসরণকে বাধ্যতামুলক বলছে তারাই
ইবাদাতে রাসুলুল্লাহ(সা) কে বাদ
দিয়ে বিভিন্ন মানুষের অনুসরণ করছে।
২৩. অপবাদঃ ডাঃ যাকির নায়েক ‘টাই’
পরিধান করেন, এটি খ্রিস্টানদের প্রতীক।
উত্তরঃ কোরআন বা সহীহ হাদিস এর কোথাও
এবং বাইবেল এর কোথাও এরুপ কোন কথা নেই
যে ‘টাই’ খ্রিস্টানদের প্রতীক।
এমনকি খ্রিস্টানদের পাদ্রীরাও(ফাদার) ‘টাই’
পরিধান করে না। এতেই স্পষ্ট যে, ‘টাই’
খ্রিস্টানদের প্রতীক না। এছাড়াও
ডাঃ যাকির নায়েক নিজেই
বলেছেনঃ “কেও যদি প্রমান করতে পারেন
যে ‘টাই’ খ্রিস্টানদের প্রতীক তাহলে আজকেই
আমি ‘টাই’ পরা বন্ধ করে দিব” আর ‘টাই’
কে সোজা করে ধরে দেখুন ‘টাই’ ক্রুস এর মত
নয়ে বরং সোজা লাঠির মত। কিন্তু
একটি পাঞ্জাবী বা জুব্বা সোজা করে ধরে দেখুন
এটি ক্রুস এর মত। তাই
বলে কি পাঞ্জাবী বা জুব্বা পরা হারাম?
না, কখনোই না।
২৪. অপবাদঃ ডাঃ জাকির নায়েক
বলেছেন, দাড়ি রাখা ও টুপি পরার
কথা কোরান ও হাদিসে নেই।
উত্তরঃ ডাঃ জাকিরের
নামে তোলা অভিযোগ গুলর
মধ্যে এটি হাস্যকর। যাই হোক, ডাঃ জাকির
নায়েক বলেছেনঃ “দাড়ি রাখার
ব্যাপারে হুকুম এসেছে সহীহ হাদীসে” ও
টুপি পড়ার
ব্যাপারে বলেছেনঃ “টুপি পড়া ফরয নয়
তবে এটি রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর
সুন্নাহ” [ডাঃ জাকির নায়েক-লেকচার
সমগ্র,অধ্যায়-পোশাকের নিয়মাবলী, পৃঃ ৪৯৩ ও
৪৯৪;সত্যকথা প্রকাশনী]
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন