হিল্লা বিবাহ বলতে (আমাদের বাংলাদেশের সমাজে প্ৰচলিত) আসলে ইসলামে কিছুই নাই। অথচ দেশের আনাচে-কানাচে একটি বর্বর নিয়মের উপর বিবাহ হয়ে থাকে যাকে বলা হয় 'হিল্লা বিবাহ'। অনেকেই হয়ত এ ব্যাপারে কিছু না কিছু জেনে থাকবেন। কারন, গ্রাম বাংলায় এই নির্মম ইসলামী প্রথাটি এখনও এই একবিংশ শতাব্দীতেও বহাল তবিয়তে আছে এবং অনেক পরিবারে অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যাপারটা হচ্ছে এই প্রকার যেঃ
যখন স্বামী তার স্ত্রীকে ইসলামী পন্থায় স্থায়ী অর্থাৎ তিন তালাক দিয়ে দিলো- তারপর সেই স্ত্রী তার ভূতপূর্ব স্বামীর জন্য সম্পূর্ণ হারাম হয়ে যাবে। স্বামী আর কিছুতেই সেই স্ত্রীর সাথে পুনরায় স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবে না। এমনকি সেই স্ত্রীকে বিবাহও করতে পারবে না। তবে এর মাঝে হেরফের আছে। তা হচ্ছে এই যে, ঐ তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে অন্য কোন পুরুষের সাথে বিবাহে বসতে হবে। তারপর তাদের মাঝে যৌন সঙ্গম হতে হবে। এরপর এই দ্বিতীয় অস্থায়ী স্বামী মহিলাটিকে তিন তালাক দিবে। মহিলাটি তিন মাসের ইদ্দত করবে এবং যদি সে গর্ভবতী না হয় তখনই তার ভূতপূর্ব স্বামী তাকে আবার বিবাহ করতে পারবে। যদি মহিলাটি অস্থায়ী স্বামী দ্বারা গর্ভবতী হয়ে পড়ে তবে এ ব্যাপারে ইসলামী কায়দা পালন করতে হবে। অনেক ইসলামীক আলেম নামের বদমাশরা এ ব্যাপারে খুব উৎফুল্লতা প্রকাশ করে এই বলে যেঃ দেখুন ইসলাম কতই না ন্যায় বিচার করছে: এই হিল্লা প্রথা মহিলাকে আরও একটি সুযোগ দিল অন্য স্বামীর ঘর করার। ঐ সব ইসলামীক আলেম নামের বদমাশরা এও বলে যে, এই হিল্লা প্রথার জন্যই পুরুষেরা যত্রতত্র তালাক দেওয়া থেকে বিরত থাকবে। কিন্তু ইসলামীক আলেম নামের বদমাশদের এই সব আবোল তাবোল কতই না হাস্যকর। স্বামী দিল স্ত্রীকে তালাক, কিন্তু তার ভুক্তভোগী স্ত্রীকে কেন আবার বিবাহ করতে হবে এক বেগানা পুরুষকে যদি তার ভূতপূর্ব স্বামী চায় তার পূর্বের স্ত্রীর সাথে একটা সমঝোতা করে নিতে? কিসের বাধা এতে? কেনই বা ভূতপূর্ব স্ত্রীকে আবার যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে অন্য এক পুরুষের সাথে? এটা কি স্ত্রীকে সাজা দেওয়া হল না? এই সাজা তো স্বামীরই পাওয়া উচিত ছিল। কারন, সেই তো তালাক দিয়েছিল। যাই হোক, আমরা এখন দেখব কুরআন ও হাদিস কি বলছে হিল্লা বিবাহ সম্পর্কে।
মহান আল্লাহ্ বলেছেনঃ
"তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয় বার) তালাক দেয়া হয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে, তার জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়, তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করতে কোন পাপ নেই, যদি আল্লাহ্র হুকুম বজায় রাখার ইচ্ছা থাকে। আর এই হল আল্লাহ্ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা, যারা উপলব্ধি করে তাদের জন্য এসব বর্ণনা করা হয়।"
***সূরা বাকারাঃ আয়াতঃ ২:২৩০।
এখানে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হল যে, হিল্লা বিবাহে অস্থায়ী স্বামীর সাথে মহিলাকে যৌন সঙ্গমে লিপ্ত হতেই হবে। তা না হলে এই হিল্লা বিবাহ সহিহ হবে না। যদি নামকা ওয়াস্তে এই হিল্লা বিবাহ, যা সাধারণত: মসজিদের ইমাম অথবা কর্মচারীর সাথে হয়ে থাকে - তবে তা মোটেই সিদ্ধ হবে না। এই আইন যেহেতু কুরআনে লিখিত; তাই বিশ্বের কারও সাধ্য নাই যে এই আইনের রদ বদল করে। এর রদের জন্য দুনিয়ার সমগ্র মুসলিম নারীরা জীবন দিয়ে ফেললেও কারও কিছু করার নেই। এটা হচ্ছে এমনই পরিস্থিতি যেমন হচ্ছে ইসলামী উত্তরাধিকারী আইন। যেমনঃমেয়ে পাবে ছেলের অর্ধেক। এই আইনও চিরকালের - বিশ্বের কোন শক্তি নেই আল্লাহ্র এই আইনের পরিবর্তন করতে পারে। হিল্লা বিবাহের ব্যাপারে দেখা যাক একটি হাদিস।
ইয়াহিয়া------মালিক------------ ইবনে সাইদ------আল কাশিম ইবনে মুহাম্মদ থেকে। ইয়াহিয়া বললেন রসুলুল্লাহর (সাঃ) স্ত্রী আয়েশা (রাদিঃ)-কে বলা হলঃ
"এক স্বামী তার স্ত্রীকে স্থায়ীভাবে তালাক দিয়েছে। সেই স্ত্রী অন্য এক পুরুষকে বিবাহ করল। সেই পুরুষ মহিলাকে তালাক দিয়ে দিল। মহিলাটির আগের স্বামী তার তালাক দেওয়া স্ত্রীকে পুনরায় বিবাহ করতে পারবে কি না? বিবি আয়েশা উত্তর দিলেন ততক্ষণ হবে না যতক্ষণ না সে মহিলাটি ঐ পুরুষটির সাথে যৌন সঙ্গমের মিষ্টি স্বাদ উপভোগ করেছে।"
***মালিক মুয়াত্তাঃ হাদিস নম্বরঃ ২৮/৭/১৮। এই হল হিল্লা বিবাহের মর্মকথা।
মন্তব্যঃ
হিল্লা বিবাহের নামে আমাদের সমাজে যা করা হয় তা সবচেয়ে নিকৃষ্ট সামাজিক ব্যাধি এবং কুরআন ও সুন্নাহর অবমাননা। হিল্লা বিবাহের আরও দলিল থাকলে মেহেরবানী করে মন্তব্য করুন।
▓▓▓▒▒░░ মূতা বিবাহ ░░▒▒▓▓▓
মুতা বিবাহ একটি স্বল্প সময়ের বিবাহ। অর্থাৎ কোন নারী ও পুরুষ অল্প কিছু সময়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়ে এ বিবাহ করতে পারে। তবে এই সময় সম্পর্কে কোন সর্ব নিম্ন বা সর্বোচ্চ সময় বাধা ধরা নাই। যেমনঃ
১ ঘন্টার জন্যও চাইলে কোন পুরুষ/নারীর সাথে বা কোন নারী/পুরুষের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে।সহজ ভাষায়, এক রাত্রির বিয়েকে ইসলামি পরিভাষায় বলা হয় মূতা বিবাহ। এই বিয়ের প্রথা হলো একজন পুরুষ কোন মেয়ের সাথে স্বল্প সময়ের জন্য বিয়ের চুক্তি করে তার সাথে সঙ্গম করতে পারবে। সুন্নী ইসলামে মুতা বিবাহ নিষিদ্ধ, তবে শিয়া ইসলামদের মধ্যে এটা এখনো প্রচলিত আছে। একসাথে একজন মুসলিম চার স্ত্রীর বেশি রাখতে পারে না কিন্তু মুতা বিয়ের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য নয়। মুতা বিয়ের মাধ্যমে একজন মুসলমান ইচ্ছে করলে যে কোন নারীর সাথে সঙ্গম সুখ লাভ করতে পারবে। মুতা বিবাহে কোন কাজী বা সাক্ষীর প্রয়োজন হয় না। কয়েকটি আয়াত পাঠের মাধমে এ বিবাহ সম্পন্ন করা হয় এবং এ বিয়ের কোন তালাক নেই। মুতা বিবাহ সম্পর্কে কিছু সহীহ হাদীস রয়েছে। হাদীসগুলো হলোঃ
১) সালামা ইবনে আল আকবা ও জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাদিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যেঃ আল্লাহর নবী (সাঃ) আমাদের কাছে আসলেন ও সাময়িক বিয়ের অনুমতি প্রদান করলেন।
***সহীহ মুসলিমঃ হাদিস নম্বরঃ ৩২৪৭।
২) ইবনে উরাইজ বর্ণিতঃ আতি বর্ণিত যে জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ উমরা পালনের জন্য আসল এবং আমরা কিছু লোক তার কাছে গেলাম ও বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তখন তিনি বললেন- আমরা নবীর আমলে সাময়িক বিয়ে করে আনন্দ করতাম ও এটা আবু বকর ও ওমরের আমল পর্যন্ত চালু ছিল।
***সহীহ মুসলিমঃ হাদিস নম্বরঃ ৩২৪৮।
৩) জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ বর্ণিতঃসামান্য কিছু খাদ্য বা অন্য কিছুর বিনিময়ে আমরা নবীর আমলে সাময়িক বিয়ে করতাম, এটা আবু বকরের আমলেও আমরা এটা করতাম। তবে ওমর এটা নিষেধ করে দেন।
***সহীহ মুসলিমঃ হাদিস নম্বরঃ ৩২৪৯।
৪) রাবি বিন ছাবরা হতে বর্নিত হয়েছে যেঃমক্কা বিজয়ের সময় তার পিতা রাসুলুল্লাহর সাথে এক যুদ্ধে শরীক হয়। আমরা সেখানে পনের দিন অবস্থান করি। আল্লাহর রাসূল আমাদের অস্থায়ী বিয়ের অনুমতি দেন। আমি আমারই গোত্রের এক লোকের সাথে মেয়ে খুজতে বেড়িয়ে পড়ি। আমার সঙ্গীর চেয়ে আমি দেখতে সুন্দর ছিলাম, পক্ষান্তরে সে ছিলো কদাকার। আমাদের উভয়েরই পরনে ছিল একটি উত্তরীয়। আমার উত্তরীয়টি ছিলো জীর্ন অন্যদিকে আমার সঙ্গীর ছিলো একবোরে নতুন। শহরের একপ্রান্তে একটি মেয়ে দৃষ্টি গোচর হলো আমাদের। অল্প বয়সী মেয়ে, ঠিক যেন মরাল গ্রীবা চটপটে এক মাদী উট। আমরা বললাম আমাদের মধ্যে একজন তোমার সাথে অস্থায়ী বিয়ের চুক্তিতে আবদ্ধ হতে চাই। তা কি সম্ভব? সে বলল তোমরা আমাকে কী দিতে পার। আমরা উভয়েই আমাদের স্ব স্ব উত্তরীয় মেলে ধরলাম। সে আমাদের উপর দৃষ্টি বুলিয়ে নিলো। আমার সঙ্গী মেয়েটির উপরও দৃষ্টি বুলিয়ে নিলো এবং বললো পুরাতনটি গ্রহন করায় ক্ষতি নাই। সুতরাং আমি তার সাথে অস্থায়ী বিয়ে সম্পন্ন করলাম।
***সহীহ মুসলিমঃ হাদিস নম্বরঃ ৩২৫৩।
উপরোক্ত হাদীসগুলো কিতাবুল নিকাহ (৮নং বই)-তে উল্লেখ করা আছে।
মূতা বিবাহ রহিতকরনঃ
মালিকানাভুক্ত দাসী বলতে জিহাদের ময়দানে বন্দীকৃত নারীদেরকে গনীমতের মাল হিসাবে ধরা হয়েছিল এবং তাদেরকে ঐ সময় সাময়িক বিবাহ করতো। যাকে বলা হতো মূতা বিবাহ। কিন্তু পরে উমর (রাদিঃ)-এর সময় থেকে রহিত করা হয় এবং বলা হয় এটি ঘৃনিত কাজ।
জাবির বিন আবদুল্লাহ বর্ণনা করেছেনঃ আমরা চুক্তি করে (মুতা) বিয়ে করতাম কয়েক মুঠো আটার বিনিময়ে। ঐ সময় আল্লাহ্র রসুল আমাদের মাঝে জীবিত ছিলেন। এই ব্যবস্থা চলতে থাকে আবু বকরের (রাদিঃ) সময় পর্যন্ত। কিন্তু হারিস নামক একজন সাহাবীর (রাদিঃ) ঘটনা শোনার পর উমর (রাদিঃ) এই ধরণের বিবাহ নিষিদ্ধ করে দেন।***সহিহ্ মুসলিমঃ বই নম্বরঃ ৮ হাদিস নম্বরঃ ২৩৪৯।
মূ'তা বা ভোগ বিবাহ হারামঃ
মূসাদ্দাদ ইবনে মুসারহাদ যূহরী (রহিঃ) থেকে বর্ণিত আছ যেঃ তিনি বলেছেন যেঃ
একদা আমি উমর ইবনে আবদুল আযীযের নিকট উপস্থিত ছিলাম। এই সময় আমরা মূ'তা বিবাহ নিয়ে আলোচনা করতে থাকাকালে জনৈক ব্যক্তি যার নাম ছিল রাবিয়া ইবনে সাবুরা- তিনি বলেছেনঃ আমি যখন আমার পিতার নিকট উপস্থিত ছিলাম, তখন তিনি বলেছেন, রাসুল (সাঃ) বিদায় হজ্জ্বের সময় এরুপ করতে (মূ'তা বিবাহ) নিষেধ করেছেন।
***আবু দাউদঃ ২০৬৮; অনুচ্ছেদঃ মূ'তা বা ভোগ বিবাহ।
মুহাম্মদ ইবনে ইয়াহইয়া -------- রাবীয়া ইবনে সাবূরা তার পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন যেঃ
রাসুল (সাঃ) মূ'তা বিবাহ হারাম করেছেন।
***আবু দাউদঃ ২০৬৯; অনুচ্ছেদঃ মূ'তা বা ভোগ বিবাহ।
টীকাঃ উপরের হাদিস দুইটি ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে আনীত হয়েছে। সরাসরি সাহাবী কর্তৃক আনীত হয়নি।
মন্তব্যঃ
২০১৩ সালে ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান সরকার সে দেশে মুতা বিবাহের আড়ালে “বৈধ বেশ্যালয়” স্থাপনের অনুমতি দিয়েছে। কিছুদিন আগেও খবরে প্রকাশিত হয়েছিল যে, সিরিয়ায় জিহাদের নামে নারীদেরকে মুজাহিদদের জন্য সাময়িকভাবে বরাদ্দ করা হয়েছিল। ঘটনার সত্যতা জানা যায়নি। যদি কারও কাছে এই বিষয়ে (মূতা বিবাহ) অতিরিক্ত দলিল থাকে তাহলে মন্তব্য করে জানাবেন।
অতিরিক্ত মন্তব্যঃ
হিল্লা বিবাহ এবং মূতা বিবাহ কোনটারই ইসলামে স্বীকৃতি নেই। অথচ আমাদের বাংলাদেশের সমাজে হিল্লা বিবাহ চালু রয়েছে। আর ইরানে বৈধ বেশ্যাবৃত্বির নামে মূতা বিবাহ চালূ রয়েছে।
▓▓▓▒▒░░ রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সময় হিল্লা বিবাহ প্ৰচলিত ছিল ░░▒▒▓▓▓
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হিল্লা বিবাহকে শুধু ঘৃনাই করতেন না বরং উভয়কেই লানত করেছেন। তারপরও, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সময় এবং আবু বকর (রাদিঃ)-এর সময় অবধি হিল্লা বিবাহ প্ৰচলিত ছিল। অতঃপর উমর (রাদিঃ) উক্ত প্ৰচলিত হিল্লা বিবাহ বন্ধ করে দেন।
প্রশ্ন হলঃ
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এবং আবু বকর (রাদিঃ)-এর সময় অবধি হিল্লা বিবাহ বন্ধ হল না কেন? উমর (রাদিঃ)-এর সময়ে হিল্লা বিবাহ বন্ধ হল কেন?
হাদিসে এসেছে যেঃ ইবনে মাসউদ (রাদিঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেছেনঃ
"রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হিল্লাকারী এবং যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়কে লানত করেছেন।"
ইমাম তিরমিজী (রহিঃ) বলেছেন যে, এই হাদিসটি হাসান সহিহ।
***জামে আত তিরমিযীঃ ২য় খন্ড, হাদিস নম্বরঃ ১১২০, হুসাইন আল মাদানী প্রকাশনী।
ইবনে মাজাহতেও আলী (রাদিঃ) হতে বর্ণিত আছে যেঃ
“রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হিল্লাকারী এবং যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়কে লানত ((অভিসম্পাত) করেছেন।”
***সুনানে ইবনে মাজাহঃ ২য় খন্ড, হাদিস নম্বরঃ ১৯৩৫; ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
হিল্লা সম্পর্কে সাহাবী উকবা বিন আমের (রাদিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যেঃ তিনি বলেছেনঃ
“রাসূলুল্লুাহ (সাঃ) বলেছেনঃ আমি কি তোমাদেরকে ভাড়া করা পাঠা সম্পর্কে বলবো? তারা বললোঃ অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল।
তিনি বললেনঃ হিল্লাকারী।
অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ আল্লাহ হিল্লাকারী ও যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়কে অভিসম্পাত করেছেন।"
***সুনানে ইবনে মাজাহঃ ২য় খন্ড, হাদিস নম্বরঃ ১৯৩৬; ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
ইবনে আব্বাস (রাদিঃ) হতে বর্ণিত আছে যেঃ তিনি বলেছেনঃ
রুকানার পিতা আবদ ইয়াযীদ উম্মে রুকানাকে তালাক প্রদান করেন এবং যুযায়না গোত্রের জনৈক স্ত্রীলোককে বিবাহ করেন। সেই মহিলা নবী (সাঃ)-এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে বলে, সে সহবাসে অক্ষম, যেমন- আমার মাথার চুল অন্য চুলের কোন উপকারে আসে না। কাজেই আপনি তার ও আমার মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দিন। এতদ শ্রবণে নবী (সাঃ) রাগান্বিত হন এবং তিনি রুকানা ও তার ভাইদিগকে আহবান করেন। এরপর তিনি সেখানে উপস্থিত করে সাথীদের সম্বোধন করে বলেন, তোমরা লক্ষ্য করে দেখ যে, এদের মধ্যে অমুক অমুকের বিশেষ অঙ্গ প্রত্যঙ্গ তাদের পিতা আবদ ইয়াযীদের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সঙ্গে কি মিল খাচ্ছে না? তখন তারা বলেন, হ্যাঁ। নবী (সাঃ) আবদ ইয়াযীদকে বলেনঃ তুমি তাকে তালাক দিয়ে দাও। তিনি তাকে তালাক দিলেন। এরপর তিনি তাকে নির্দেশ দেন যে, তুমি উম্মে রুকানাকে (পূর্ব স্ত্রী) পুনরায় গ্রহণ কর। তখন তিনি বলেনঃ আমি তো তাকে তিন তালাক প্রদান করেছি, ইয়া রাসূল্লাহ! তখন তিনি বলেনঃ আমি তোমার তালাক প্রদানের কথা অবগত আছি। তুমি তাকে পুনরায় গ্রহণ কর।এরপর তিনি কুরআনের আয়াত তিলাওয়াত করেনঃ ‘হে নবী! যখন তোমাদের স্ত্রীদের তালাক প্রদান করবে, তখন তাদেরকে ইদ্দত পালনের জন্য তালাক দিবে।”
ইমাম আবু দাউদ (রহিঃ) বলেছেনঃ
আবদ ইয়াযীদ তার স্ত্রীকে তালাক প্রদান করলে নবী (সাঃ) তাকে পুনরায় গ্রহণের জন্য নির্দেশ প্রদান করেন।
***আবু দাউদঃ ৩য় খন্ড, হাদিস নম্বরঃ ২১৯৩; ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
উক্ত হাদিসে দেখা যাচ্ছে যে, উম্মে রুকানাকে নবী (সাঃ) হিল্লা বিবাহ ছাড়াই তার স্বামী আবদ ইয়াযীদ এর সাথে পুনরায় বিবাহ দিলেন। অতএব, নবীজি হিল্লা বিবাহকে হারাম জানতেন তা প্রমানিত হলো।
▓▓▓▒▒░░ হিল্লা ছাড়াই নবী (সাঃ)- হাফসা (রাদিঃ)-কে পুনরায় বিবাহ করেন ░░▒▒▓▓▓
ইবনূ আব্বাস (রাদিঃ) ও উমর (রাদিঃ) হতে বর্ণিত আছে যেঃ ‘নবী (সাঃ)- হাফসা (রাদিঃ)-কে তালাক প্রদান করেন। তারপর তিনি তাঁকে পুনরায় স্বীয় স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেন।'
***আবু দাউদঃ ৩য় খন্ড, হাদিস নম্বরঃ ২২৭৭ এবং সুনানে নাসাঈঃ ৩য় খন্ড, হাদিস নম্বরঃ ৩৫৬১; ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
এ হাদিসে হিল্লা বিবাহের কোন অস্তিত্ব নেই। হিল্লা বিবাহ ছাড়াই নবীজি (সাঃ)- হাফসা (রাদিঃ)-কে পুনরায় বিবাহ করলেন।
উল্লেখ্য যে, নবী (সাঃ)- হাফসা (রাদিঃ)-কে তিন তালাক প্রদান করেছিলেন না।
অতএব, হিল্লা বিবাহ অবৈধ, ইহাতে কোনই সন্দেহ নেই।
যেহেতু সূরা বাকারার ২৩২ নং আয়াত সম্পর্কে হাদিসে কোন প্রমান পাওয়া যায় যে, হিল্লা বিবাহ ছাড়াই তালাকের পর পুনরায় স্ত্রীকে গ্রহণ করা যায়, সেহেতু ২৩০ নং আয়াতের ব্যাখ্যা ভুল। সূরা বাকারার ২৩০ নং আয়াত ঐ সমস্ত নারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যারা তালাক প্রাপ্ত হয়ে যাবার পর স্বেচ্ছায় দ্বিতীয় স্বামী গ্রহণ করে এবং পরবর্তীতে আবার পুর্বের স্বামীর নিকট ফিরে যেতে চায়।
মন্তব্যঃ
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হিল্লা বিবাহকে শুধু ঘৃনাই করতেন না বরং উভয়কেই লানত করেছেন। যাহা উপরের হাদিসগুলোর আলোকেই প্রমানীত হয়।
প্রশ্ন হলঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এবং আবু বকর (রাদিঃ)-এর সময় অবধি হিল্লা বিবাহ প্ৰচলিত ছিল কেন? উমর (রাদিঃ)-এর সময়ে হিল্লা বিবাহ বন্ধ হল কেন?
উমর (রাদিঃ) বলেছেনঃ আসরাম (রঃ) কাবি সাবিল জাবের (রাদিঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যেঃ
একদিন হযরত উমর (রাদিঃ) তাঁর খেলাফতকালে মসজিদের মিম্বরে উঠে বললেনঃ আমার নিকট যদি এমন মামলা আসে যাতে হিল্লাকারী (২য় স্বামী) এবং যার জন্য হিল্লা করা হয় (১ম স্বামী) এমন কাউকে আনা হয়, আমি দুজনকেই পাথর মেরে হত্যা করবো।”
যারা পাপ করে তারা পাপী এবং যারা সেই পাপের সহযোগিতা করে তারাও পাপী। অতএব, সাবধান! যারা হিল্লা বিবাহকে সহযোগিতা করবে তারাও সমান পাপের অংশীদার হবে।
একটি সংগৃহিত প্রবন্ধঃ
"হিল্লা বিয়ে ইসলাম বিরোধী ও নারীর প্রতি বৈষম্য"
লেখকঃ মুফতি কাযী ইব্রাহিম
হিল্লা বিয়ে কি? আভিধানিকভাবে হিল্লা বলতে উপায়, গতি, ব্যবস্থা, আশ্রয় ও অবলম্বন বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন- তোমার কি কোন হিল্লা (গতি বা উপায়) হয়েছে? বা মেয়েটির কোন হিল্লা বা আশ্রয় হয়েছে? কিন্তু প্রচলিত পরিভাষায় হিল্লা বলতে, কোন স্বামীর তিন তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে এ শর্তে বিয়ে করা যে, বিয়ের পর সহবাস শেষে স্ত্রীকে তালাক দেবে, যেন সে পূর্বের স্বামীর জন্য হালাল হয়, সে তাকে পুনরায় বিয়ে করতে পারে।এই হিল্লা বিয়ে শুধু বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আর ভারতে নয়, পৃথিবীর সব মুসলিম অধ্যুষিত দেশেই কম-বেশী প্রচলিত আছে। আরবে এই হিল্লা বিয়েকে হাল্লালা বলে। হিল্লা শব্দটি আরবী (حلة) ‘হালা’ থেকে এসেছে। এর অর্থ বৈধতা/বৈধকরণ। যদিও আরবী হালাল শব্দের অর্থ হলো ইসলামে অনুমোদনপ্রাপ্ত। কিন্তু হিল্লা বিয়ে মোটেই হালাল নয়। হিল্লা বিবাহ হারাম এবং তা মূলত কোনো বিয়েই নয় বরং হিল্লা স্বামীর সাথে বিয়ে ও সহবাস হারাম। সে যাই হোক এখন প্রশ্ন হলো, তালাকের পরে আপন স্ত্রী যদি পর নারী হয়েই যায় তবে তাকে আবার বিয়ে করা বৈধ হওয়া উচিৎ। কেননা আপন ভগ্নী, খালা-ফুফু ইত্যাদি ছাড়া অন্য কাউকে বিবাহ করা জায়েজ। সে তো তখন ঐ গোত্রেই পরে।
• প্রসঙ্গ বাংলাদেশ •
হিল্লা বিয়ে জানেন না এমন বাংলাদেশী হয়ত একজনও খুঁজে পাওয়া যাবে না। বাংলায় এটা কোনকালেই ছিল না। কিন্তু এখন গত পনেরো বিশ বছর ধরে এটা খবরের কাগজে প্রায়ই ওঠে। গ্রাম-গঞ্জের কাঠমোল্লা ও মাতুব্বররা মিলে ফতোয়ার তাৎক্ষণিক আদালতে বিভিন্ন মামলার শারিয়া-মাফিক বিচার করে রায় ঘোষণা করেন। রাষ্ট্রীয় বৈধতা না থাকলেও সে-রায় প্রচণ্ড সামাজিক শক্তিতে অপরাধীর ওপরে প্রয়োগ করা হয়। হিল্লা হল এরই একধরনের শারিয়া-মামলা যাতে কোন হিল্লা বিয়ের-কারণে শারিয়া-আদালত কোন দম্পতির বিয়ে বাতিল ঘোষণা করেন। তারপর তাদের আবার বিয়ে দেবার শর্ত হিসেবে স্ত্রীকে অন্য লোকের সাথে বিয়ে ও সহবাসে বাধ্য করেন। দ্বিতীয় স্বামী স্বেচ্ছায় তালাক দিলে তবে সে আবার আগের স্বামীকে বিয়ে করতে পারে। এটা ঘটে প্রধানত স্বামী রাগের মাথায় স্ত্রীকে একসাথে তিনবার তালাক বলে ফেলেছে বলে, তার কথা শোনার সাক্ষী কখনো থাকে, কখনো থাকে না।এক শ্রেণীর মূর্খ ও বক ধার্মিক লোকেরা, শিক্ষিত ও ব্যক্তিত্বশালী আলেমদের কাছে না গিয়ে অল্প শিক্ষিত মোল্লাদের পরামর্শে তালাক প্রাপ্তা মহিলাকে তার আগের স্বামীর কাছে ফিরিয়ে দেওয়া বা হালাল করে দেয়ার জন্য হিল্লা বিয়ের আয়োজন করে এবং এটিকে ইসলামের বিধান বলে চালিয়ে দেয়। যার ফলে বিতর্কিত এবং কলুষিত হচ্ছে ইসলামের সুন্দর বিধান ও মহান আদর্শ। আর ইসলামের শত্রুরা এটাকে তাদের মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে পেয়ে কুরআন ও ইসলামের কুৎসা রটনার ক্ষেত্রে তাদের কোন প্রচেষ্টার ত্রুটি রাখছে না। অথচ তারা হাদিস সম্পর্কে কোন জ্ঞানই রাখে না। স্বামী কর্মক্ষেত্র থেকে বাড়ীতে ফিরেছে। এসে দেখলো এখনও রান্না শেষ হয়নি। বাস মাথায় উঠে গেল প্রচন্ড রাগ। স্ত্রীর সাথে শুরু করে দিল ঝগড়া। পেটে ক্ষুধা এবং মাথায় রাগ। এক পর্যাযে বলে ফেললো তালাক। বাস আর যাবে কোথায়? মসজিদের কাঠমোল্লা দিয়ে দিল তালাকের ফতোয়া। স্ত্রী চলে গেল বাবার বাড়ী। কিন্তু যখন স্বামীর মাথা ঠান্ডা হলো যখন নিজের ভুল বুঝতে পারলো। এবার স্ত্রীকে আনার জন্য উদগ্রীব। কিন্তু বাঁধ বসালো কাঠমোল্লা আর মাতুব্বর। স্ত্রীকে আনতে হলে হিল্লা বিয়ে দিতে হবে। কিন্তু কাঠমোল্লারা একটু চিন্তা-ভাবনা করে না যে, যেখানে রাগ হলো স্বামীর, দোষ করলো স্বামী এবং অপরাধী হলো স্বামী। সেখানে স্ত্রী কেন অপরাধী হবে? স্ত্রী কেন স্বামীর পাপের বোঝা বহন করবে?
► কুরআন কি বলে?
কিছু কাঠমোল্লারা না বুঝলেও আল্লাহ পাক ঠিকই বোঝেন। তাই মহান আল্লাহ পাক এরশাদ করেন-
“একে অপরের কৃতকর্মের জন্য দায়ী হইবে না” (সূরা নজম ৩৮)।
এ কথা সবাই স্বীকার করবেন যে, অপরাধ হোক বা না-হোক, সেটা করেছে স্বামী। অথচ হঠাৎ তালাক দিলে নিরপরাধ স্ত্রীর জীবন ধ্বংস হয়ে যায়। সে হারায় তার স্বামী-সংসার ও সন্তান। কিন্তু একজনের অপরাধে অন্যের শাস্তি হওয়া চরম অন্যায়। সে জন্যই কুরআন কি চমৎকার বলেছে -
“তাহাদের কর্ম সম্পর্কে তোমাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে না” [সূরা বাকারা-১৪১]
তালাক এবং তাৎক্ষণিক-দ্বিতীয় বিয়ে (হিল্লা বিয়ে) সম্পূর্ণ কুরআন বিরোধী। কুরআন মোতাবেক কোন নারীকে বিয়েতে বাধ্য করার অধিকার কারো নেই। সেই সময়ে নারীকে এ অসাধারণ অধিকার দিয়েছে কুরআন। হিল্লা বিবাহ স্ত্রীকে দিয়ে জোরপূর্বক এক ধরণের বেশ্যাবৃত্তি, যা সম্পূর্ণ হারাম। এই হারাম কাজে যারা জড়িত থাকবে হোক সে মসজিদের ইমাম, অবশ্যই সে জাহান্নামী হবে।
► নাবী কারীম (সাঃ) কি বলেছেন?
এবার আসুন নবী করিম (সাঃ) হিল্লা বিয়ে সম্পর্কে কি বলেন। ইসলামের ইতিহাসে হিল্লা বিবাহের কোন ঠাই নাই। নবীজি (সাঃ) হিল্লা বিবাহকে শুধু ঘৃনাই করতেন না, হিল্লাকারীদের উপর লানত করতেন। জামে আত তিরমিজী ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিস।
ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,
“রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হিল্লাকারী এবং যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়কে লানত করেছেন।” **ইমাম তিরমিজী বলেন (র), এই হাদিসটি হাসান সহিহ। (জামে আত তিরমিজী, ২য় খন্ড, হাদিস নং ১১২০, হুসাইন আল মাদানী প্রকাশনী) ইবনে মাজাহ শরীফেও হযরত আলী (রা) হতে বর্ণিত আছে, “রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হিল্লাকারী এবং যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়কে লানত (অভিসম্পাত) করেছেন।” **(সুনানে ইবনে মাজাহ, ২য় খন্ড, ১৯৩৫ নং হাদিস, ইসলামিক ফাউন্ডেশন)*
উল্লেখ্য যে, হিল্লাকারী হলো দ্বিতীয় স্বামী এবং যার জন্য হিল্লা করা হয় সে হলো প্রথম স্বামী।
হিল্লা সম্পর্কে সাহাবী উকবা বিন আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিস:
উকবা ইবনে আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসূলুল্লুাহ (সাঃ) বলেছেন আমি কি তোমাদেরকে ভাড়া করা পাঠা সম্পর্কে বলবো? তারা বললোঃ অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল, তিনি বললেন, হিল্লাকারী। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, আল্লাহ হিল্লাকারী ও যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়কে অভিসম্পাত করেছেন। " [সুনানে ইবনে মাজাহ, ২য় খন্ড, ১৯৩৬ নং হাদিস, ইসলামিক ফাউন্ডেশন]
হাদিস দুটিতে লক্ষ্য করুন। প্রথম হাদিসে স্বামী এবং হিল্লাকারী পুরুষকে লানত করা হয়েছে। অর্থাৎ অভিশাপ দেওয়া হয়েছে, তারা আল্লাহর রহমত হতে বঞ্চিত।
দ্বিতীয় হাদিসে হিল্লাকারী পুরুষকে ভাড়া করা পাঠার সাথে তুলনা করা হয়েছে। কোন ব্যক্তি যদি বলে আমি অমুকের স্ত্রীকে হিল্লা বিয়ে করে আবার তালাক দিব যাতে সে তার স্ত্রীকে পুনরায় গ্রহণ করতে পারে। হাদিস অনুযায়ী সে ব্যক্তি হলো ভাড়া করা পাঠা। আর এ পাঠার দলে যারা থাকে তারাও পাঠার দল। অতএব যে সমস্ত কাঠমোল্লা বা মাতুব্বর হিল্লাকে বৈধ মনে করবে তারাও পাঠা। আমার জানা মতে এই পাঠাকে একমাত্র কালি পূজায় বলি দেওয়া হয়।
দেখুন হযরত উমর (রা) কি বলেন।
“হযরত আসরাম (র) কাবিসাবিল জাবের (রা) হতে বর্ণনা করেন, একদিন হযরত উমর (রা) তাঁর খেলাফতকালে মসজিদের মিম্বরে উঠে বললেন, আমার নিকট যদি এমন মামলা আসে যাতে হিল্লাকারী (২য় স্বামী) এবং যার জন্য হিল্লা করা হয় (১ম স্বামী) এমন কাউকে আনা হয়, আমি দুজনকেই পাথর মেরে হত্যা করবো।”
যারা পাপ করে তারা পাপী এবং যারা সেই পাপের সহযোগিতা করে তারাও পাপী। অতএব সাবধান যারা হিল্লা বিবাহকে সহযোগিতা করবে তারাও পাপের অংশীদার।
► যেভাবে শুরু হলো হিল্লা বিয়ের প্রথা:
এখন আসি কিভাবে হিল্লা বিয়ের প্রথা শুরু হলো। নবী (সাঃ) এর ওফাতের পর মানুষ ধীরে ধীরে ধর্ম থেকে দূরে সরে আসার কারণে এই মুসলিম সমাজে তালাকের প্রবণতা বেড়ে যায়। ফলে এর সমাধানের জন্য এক শ্রেণীর মোল্লাদের দ্বারা হিল্লা বিয়ের মত কু-প্রথা সমাজে চালু হয়ে পড়ে। আর এর জন্য নিন্মের কুরআনের আয়াতকে অপব্যবহার করা হয়। মূলত যে সমস্ত আলেম বা কাঠমোল্লা হিল্লা বিয়ে জায়েজ করতে চায় তারা কুরআন-হাদিস সম্পর্কে অজ্ঞ এবং অপব্যাখ্যা করে। আর তারা তাদের স্বার্থে সূরা বাকারার ২৩০ নং আয়াতকে দলিল হিসাবে তুলে ধরে।
“তারপর যদি সে স্ত্রীকে তালাক দেয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে, তার জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়, তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরষ্পরকে পুনরায় বিয়ে করাতে কোন পাপ নেই, যদি আল্লাহ হুকুম বজায় রাখার ইচ্ছা থাকে।
আর এই হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা; যারা উপলব্ধি করে তাদের জন্য এসব বর্ণনা করা হয়।” [সূরা বাকারা-২৩০]
• প্রকৃত বিশ্লেষণ •
কাঠ মোল্লারা উপরের আয়াতের দোহাই দিয়ে হিল্লা বিবাহ জায়েজ করতে চায়। কিন্তু তারা গবেষণা করে না যে এই আয়াতটি কাদের জন্য প্রযোজ্য। তারা এটাও লক্ষ্য করে না যে, পরবর্তী ২৩২ নং আয়াতে আল্লাহ কি বলেছেন। এবার সূরা বাবাকার ২৩২ নং আয়াত লক্ষ্য করি।
মহান আল্লাহ এরশাদ করেনঃ
“তোমরা যখন স্ত্রীদেরকে তালাক দাও এবং তারা তাদের ইদ্দতকাল পূর্ণ করে তবে স্ত্রীগণ নিজেদের স্বামীদেরকে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে বিয়ে করতে চাইলে তাদের বাঁধা দিও না। এ উপদেশ তাকেই দেয়া হচ্ছে, যে আল্লাহ ও কেয়ামত দিনের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করেছে। এর মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে একান্ত পরিশুদ্ধতা ও অনেক পবিত্রতা। আর আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না।” [সুরা বাকারা-২৩২]
উল্লেখিত আয়াতে দেখা যাচ্ছে যে, স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার পর যদি নির্ধারিত ইদ্দত শেষও হয়ে যায়, তখন স্বামীর সাথে পারস্পারিক সম্মতিক্রমে বিয়ে করা যাবে। এখানে মনে হতে পারে যে, সূরা বাকারার ২৩০নং আয়াত ২৩২ নং আয়াতের সাথে বিরোধপূর্ণ, কিন্তু বাস্তবে তা নয়। উক্ত দুটি আয়াত ব্যাখ্যাগত দিক দিয়ে বিরোধপুর্ণ নয়। এ দুটি আয়াত বোঝার জন্য এখন হাদিস শরীফ অনুসন্ধন করতে হবে। দেখতে হবে নবীজি (সাঃ) কি করেছেন। তার আগে আমি সূরা বাকারার ২৩২ নং আয়াতে শানে নুজুল উল্লেখ করতে চাই। অর্থাৎ কোন প্রেক্ষাপটে সূরা বাকারার ২৩২ নং আয়াত নাজিল হযেছে।
তাফসীরে ইবনে কাসীর-এ সূরা বাকারার ২৩২ নং আয়াতের শানে নুজুল সম্পর্কে উল্লেখ আছে- “আয়াতটি হযরত মা’কাল বিন ইয়াসার (রা) এবং তাঁর বোনের সম্বন্ধে অবর্তীর্ণ হয়।
হযরত মা’কাল বিন ইয়াসার (রা) বলেন, ‘আমার নিকট আমার বোনের বিয়ের প্রস্তাব আসলে আমি তার বিয়ে দেই। তার স্বামী কিছুদিন পর তাকে তালাক দেয়। ইদ্দত অতিক্রান্ত হওয়ার পর পুনরায় সে আমার নিকট বিয়ের প্রস্তাব করে। আমি তা প্রত্যাখ্যান করি। আমি শপথ করি যে, তার সাথে আমার বোনে বিবাহ দিব না। তখন এই আয়াতটি (সূরা বাকারার ২৩২ নং আয়াত) অবতীর্ণ হয়। এটা শুনে হযরত মা’কাল (রা) বলেন, শপথ করা সত্বেও আমি আল্লাহর নির্দেশ শুনেছি এবং মেনে নিয়েছি। অতঃপর তিনি তাঁর বোনকে ডেকে পাঠিয়ে পুনরায় তার সাথে তাঁর বোনের বিয়ে দিয়ে দেন এবং নিজের কসমের কাফ্ফারা আদায় করেন। তাঁর বোনের নাম ছিল জামীল বিনতে ইয়াসার (রা) এবং তাঁর স্বামীর নাম ছিল আবুল বাদাহ (রা)।”
আয়াতের শানে নুজুলে দেখা যাচ্ছে কোন হিল্লা বিয়ে ছাড়াই হযরত মা’কাল বিন ইয়াসার (রা) তার বোনকে পূর্বের স্বামীর সাথে বিবাহ দিলেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত বুখারী শরীফ ৭ম খন্ড, ৪১৭৩ নং হাদিসেও উক্ত ঘটনা বর্ণিত আছে। তাই জোর দিয়ে বলা যায় সূরা বাকারার ২৩০ নং আয়াত দিয়ে হিল্লা বিবাহের যে অপব্যাখ্যা দেয়া হয় তা সম্পূর্ণ বানোয়াট। সূরা বাকারার ২৩০ নং আয়াতের ব্যাখ্যা ভিন্ন হবে যা, পরে আলোচনা করছি। আসলে ঐ সব মোল্লারা এই আয়াতের শানে নজুল জানে না বা নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য এই আয়াতের অপব্যাখ্যা করে থাকে। এবার আমি ২৩২ নং আয়াতের স্বপক্ষে কিছু হাদিস শরীফ পেশ করছি।*আবু দাউদ শরীফের কিতাবুত তালাক অধ্যায়ে ইবনে আব্বাস (রা) হতে বর্ণিত*তিনি বলেন, রুকানার পিতা আবদ ইয়াযীদ উম্মে রুকানাকে তালাক প্রদান করেন এবং যুযায়না গোত্রের জনৈক স্ত্রীলোককে বিবাহ করেন। সেই মহিলা নবী করীম (সা) এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে বলে, সে সহবাসে অক্ষম, যেমন আমার মাথার চুল অন্য চুলের কোন উপকারে আসে না। কাজেই আপনি তার ও আমার মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দিন। এতশ্রবণে নবী করীম (সা) রাগান্বিত হন এবং তিনি রুকানা ও তার ভাইদিগকে আহবান করেন। এরপর তিনি সেখানে উপস্থিত করে সাথীদের সম্বোধন করে বলেন, তোমারা লক্ষ্য করে দেখ যে, এদের মধ্যে অমুক অমুকের বিশেষ অঙ্গ প্রত্যঙ্গ তাদের পিতা আবদ ইয়াযীদের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সঙ্গে কি মিল খাচ্ছে না? তখন তারা বলেন, হ্যাঁ। নবী করীম (সাঃ) আবদ ইয়াযীদকে বলেন, তুমি তাকে তালাক দিয়ে দাও। তিনি তাকে তালাক দিলেন। এরপর তিনি তাকে নির্দেশ দেন যে, তুমি উম্মে রুকানাকে (পূর্ব স্ত্রী) পুনরায় গ্রহণ কর। তখন তিনি বলেন, আমি তো তাকে তিন তালাক প্রদান করেছি, ইয়া রাসূল্লাহ! তখন তিনি বলেন, আমি তোমার তালাক প্রদানের কথা অবগত আছি। তুমি তাকে পুনরায় গ্রহণ কর। এরপর তিনি কুরআনের আয়াত তিলাওয়াত করেন, ‘হে নবী! যখন তোমাদের স্ত্রীদের তালাক প্রদান করবে, তখন তাদেরকে ইদ্দত পালনের জন্য তালাক দিবে।”
ইমাম আবু দাউদ (র) বলেন, আবদ ইয়াযীদ তার স্ত্রীকে তালাক প্রদান করলে নবী করিম (সা) তাকে পুনরায় গ্রহণের জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। [আবু দাউদ শরীফ, ৩য় খন্ড, ২১৯৩নং হাদিস, ইসলামিক ফাউন্ডেশন]
উক্ত হাদিস শরীফে দেখা যাচ্ছে যে, উম্মে রুকানাকে নবী করীম (সাঃ)হিল্লা বিবাহ ছাড়াই তার স্বামী আবদ ইয়াযীদ এর সাথে পুনরায় বিবাহ দিলেন। অতএব নবীজি হিল্লা বিবাহকে হারাম জানতেন তা প্রমানিত হলো।
** ইবনে আব্বাস (রা) ও উমার (রা) হতে বর্ণিত **
‘নবী করীম (সাঃ) হযরত হাফসা (রা) কে তালাক প্রদান করেন। এরপর তিনি তাঁকে পুনরায় স্বীয় স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেন।”
[আবু দাউদ শরীফ, ৩য় খন্ড, ২২৭৭ নং হাদিস এবং সুনানে নাসাই শরীফ, ৩য় খন্ড, ৩৫৬১নং হাদিস, ইসলামিক ফাউন্ডেশন]
এ হাদিসেও হিল্লা বিবাহের কোন অস্তিত্ব নেই। হিল্লা বিবাহ ছাড়াই নবীজি (সাঃ) হযরত হাফসা (রাঃ) কে পুনরায় বিবাহ করলেন।
তাই হিল্লা বিবাহ অবৈধ, ইহাতে কোন সন্দেহ নেই। যেহেতু সূরা বাকারার ২৩২ নং আয়াত সম্পর্কে হাদিস শরীফে প্রমান পাওয়া যায় যে, হিল্লা বিয়ে ছাড়াই তালাকের পর পুনরায় স্ত্রীকে গ্রহণ করা যায়, সেহেতু ২৩০ নং আয়াতের ব্যাখ্যা ভুল। সূরা বাকারার ২৩০ নং আয়াত ঐ সমস্ত নারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যারা তালাক প্রাপ্ত হয়ে যাবার পর স্বেচ্ছায় দ্বিতীয় স্বামী গ্রহণ করে এবং পরবর্তীতে আবার পুর্বের স্বামীর নিকট ফিরে যেতে চায়।
শেষ কথাঃ
উল্লেখিত হাদিসসমূহ হতে আমরা সূরা বাকারার ২৩০ নং আয়াতে ব্যাখ্যা বুঝতে পারলাম। অর্থাৎ প্রথম স্বামী স্ত্রীকে তালাক দিলে ঐ স্ত্রী যদি স্বেচ্ছায় দ্বিতীয় বিবাহ করে, তবে ঐ স্ত্রী পূর্বের স্বামীর নিকট ফিরে যেতে পারবে না, যতক্ষন না দ্বিতীয় স্বামী স্বেচ্ছায় ঐ স্ত্রীকে তালাক না দেয়।
আর সূরা বাকারার ২৩২ নং আয়াতের ব্যাখ্যা হলো, যদি স্ত্রী প্রথম স্বামীর নিকট হতে তালাক প্রাপ্ত হওয়ার অন্য কোথাও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ না হয়, তবে সে পূর্বের স্বামীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে উভয়ের সম্মতিতে। এতে কোন ধমীয় বা আইনি বাঁধা থাকবে না। হিল্লা বিয়ে নামে যা প্রচলিত আছে, তা হারাম এবং অনৈসলামিক কর্মকান্ড। তাই সূরা বাকারার ২৩০ ও ২৩২ নং আয়াত দুটি ব্যাখ্যাগত দিক দিয়ে অনুরসণ যোগ্য।
আমাদের দেশে সেই পাকিস্তানী আমল থেকে ১৯৬১ সালে মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ দ্বারা তালাকে বিদা নিষিদ্ধ এবং হিল্লা বিয়ের প্রথা নিষিদ্ধ করা হয়। আশা করি বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশেও এই আইন কার্যকর হবে এবং হিল্লা বিয়ের মত অনৈসলামিক প্রথা চিরতরে ইসলামী সমাজ থেকে বন্ধ করা যাবে। এ ব্যাপারে আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে যেন ধর্মের নামে হিল্লা বিয়ে দিয়ে কোন মা-বোনের ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেলা না হয়। যদি কোথাও এরকম কোন দুঃখজনক পরিস্থিতি দেখা দেয় তবে সেই বিপদের হাত থেকে অসহায় নারীকে উদ্ধার করা ওয়াজিব। জেনে শুনে যারা অসহায়কে সাহায্য করে না তাদের উপর আল্লাহর রহমত আসে না। এ ব্যাপারে কারো সহযোগিতা না পেলে সরাসরি স্থানীয় প্রশাসন, থানা অথবা গণমাধ্যমকর্মীর সাহায্য নিন। একজন অসহায় নারীকে বিপদ হতে উদ্ধারের জন্য আল্লাহ পাক আপনাকে বড় ধরণের কোন পুরস্কার দিবেন। আল্লাহ আমাদের সকলকে ইসলামের সঠিক বুঝ দান করুন এবং হিল্লা বিবাহে প্রতিরোধ গড়ে তোলার তাওফিক দিন। আমিন।
যখন স্বামী তার স্ত্রীকে ইসলামী পন্থায় স্থায়ী অর্থাৎ তিন তালাক দিয়ে দিলো- তারপর সেই স্ত্রী তার ভূতপূর্ব স্বামীর জন্য সম্পূর্ণ হারাম হয়ে যাবে। স্বামী আর কিছুতেই সেই স্ত্রীর সাথে পুনরায় স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবে না। এমনকি সেই স্ত্রীকে বিবাহও করতে পারবে না। তবে এর মাঝে হেরফের আছে। তা হচ্ছে এই যে, ঐ তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে অন্য কোন পুরুষের সাথে বিবাহে বসতে হবে। তারপর তাদের মাঝে যৌন সঙ্গম হতে হবে। এরপর এই দ্বিতীয় অস্থায়ী স্বামী মহিলাটিকে তিন তালাক দিবে। মহিলাটি তিন মাসের ইদ্দত করবে এবং যদি সে গর্ভবতী না হয় তখনই তার ভূতপূর্ব স্বামী তাকে আবার বিবাহ করতে পারবে। যদি মহিলাটি অস্থায়ী স্বামী দ্বারা গর্ভবতী হয়ে পড়ে তবে এ ব্যাপারে ইসলামী কায়দা পালন করতে হবে। অনেক ইসলামীক আলেম নামের বদমাশরা এ ব্যাপারে খুব উৎফুল্লতা প্রকাশ করে এই বলে যেঃ দেখুন ইসলাম কতই না ন্যায় বিচার করছে: এই হিল্লা প্রথা মহিলাকে আরও একটি সুযোগ দিল অন্য স্বামীর ঘর করার। ঐ সব ইসলামীক আলেম নামের বদমাশরা এও বলে যে, এই হিল্লা প্রথার জন্যই পুরুষেরা যত্রতত্র তালাক দেওয়া থেকে বিরত থাকবে। কিন্তু ইসলামীক আলেম নামের বদমাশদের এই সব আবোল তাবোল কতই না হাস্যকর। স্বামী দিল স্ত্রীকে তালাক, কিন্তু তার ভুক্তভোগী স্ত্রীকে কেন আবার বিবাহ করতে হবে এক বেগানা পুরুষকে যদি তার ভূতপূর্ব স্বামী চায় তার পূর্বের স্ত্রীর সাথে একটা সমঝোতা করে নিতে? কিসের বাধা এতে? কেনই বা ভূতপূর্ব স্ত্রীকে আবার যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে অন্য এক পুরুষের সাথে? এটা কি স্ত্রীকে সাজা দেওয়া হল না? এই সাজা তো স্বামীরই পাওয়া উচিত ছিল। কারন, সেই তো তালাক দিয়েছিল। যাই হোক, আমরা এখন দেখব কুরআন ও হাদিস কি বলছে হিল্লা বিবাহ সম্পর্কে।
মহান আল্লাহ্ বলেছেনঃ
"তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয় বার) তালাক দেয়া হয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে, তার জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়, তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করতে কোন পাপ নেই, যদি আল্লাহ্র হুকুম বজায় রাখার ইচ্ছা থাকে। আর এই হল আল্লাহ্ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা, যারা উপলব্ধি করে তাদের জন্য এসব বর্ণনা করা হয়।"
***সূরা বাকারাঃ আয়াতঃ ২:২৩০।
এখানে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হল যে, হিল্লা বিবাহে অস্থায়ী স্বামীর সাথে মহিলাকে যৌন সঙ্গমে লিপ্ত হতেই হবে। তা না হলে এই হিল্লা বিবাহ সহিহ হবে না। যদি নামকা ওয়াস্তে এই হিল্লা বিবাহ, যা সাধারণত: মসজিদের ইমাম অথবা কর্মচারীর সাথে হয়ে থাকে - তবে তা মোটেই সিদ্ধ হবে না। এই আইন যেহেতু কুরআনে লিখিত; তাই বিশ্বের কারও সাধ্য নাই যে এই আইনের রদ বদল করে। এর রদের জন্য দুনিয়ার সমগ্র মুসলিম নারীরা জীবন দিয়ে ফেললেও কারও কিছু করার নেই। এটা হচ্ছে এমনই পরিস্থিতি যেমন হচ্ছে ইসলামী উত্তরাধিকারী আইন। যেমনঃমেয়ে পাবে ছেলের অর্ধেক। এই আইনও চিরকালের - বিশ্বের কোন শক্তি নেই আল্লাহ্র এই আইনের পরিবর্তন করতে পারে। হিল্লা বিবাহের ব্যাপারে দেখা যাক একটি হাদিস।
ইয়াহিয়া------মালিক------------ ইবনে সাইদ------আল কাশিম ইবনে মুহাম্মদ থেকে। ইয়াহিয়া বললেন রসুলুল্লাহর (সাঃ) স্ত্রী আয়েশা (রাদিঃ)-কে বলা হলঃ
"এক স্বামী তার স্ত্রীকে স্থায়ীভাবে তালাক দিয়েছে। সেই স্ত্রী অন্য এক পুরুষকে বিবাহ করল। সেই পুরুষ মহিলাকে তালাক দিয়ে দিল। মহিলাটির আগের স্বামী তার তালাক দেওয়া স্ত্রীকে পুনরায় বিবাহ করতে পারবে কি না? বিবি আয়েশা উত্তর দিলেন ততক্ষণ হবে না যতক্ষণ না সে মহিলাটি ঐ পুরুষটির সাথে যৌন সঙ্গমের মিষ্টি স্বাদ উপভোগ করেছে।"
***মালিক মুয়াত্তাঃ হাদিস নম্বরঃ ২৮/৭/১৮। এই হল হিল্লা বিবাহের মর্মকথা।
মন্তব্যঃ
হিল্লা বিবাহের নামে আমাদের সমাজে যা করা হয় তা সবচেয়ে নিকৃষ্ট সামাজিক ব্যাধি এবং কুরআন ও সুন্নাহর অবমাননা। হিল্লা বিবাহের আরও দলিল থাকলে মেহেরবানী করে মন্তব্য করুন।
▓▓▓▒▒░░ মূতা বিবাহ ░░▒▒▓▓▓
মুতা বিবাহ একটি স্বল্প সময়ের বিবাহ। অর্থাৎ কোন নারী ও পুরুষ অল্প কিছু সময়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়ে এ বিবাহ করতে পারে। তবে এই সময় সম্পর্কে কোন সর্ব নিম্ন বা সর্বোচ্চ সময় বাধা ধরা নাই। যেমনঃ
১ ঘন্টার জন্যও চাইলে কোন পুরুষ/নারীর সাথে বা কোন নারী/পুরুষের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে।সহজ ভাষায়, এক রাত্রির বিয়েকে ইসলামি পরিভাষায় বলা হয় মূতা বিবাহ। এই বিয়ের প্রথা হলো একজন পুরুষ কোন মেয়ের সাথে স্বল্প সময়ের জন্য বিয়ের চুক্তি করে তার সাথে সঙ্গম করতে পারবে। সুন্নী ইসলামে মুতা বিবাহ নিষিদ্ধ, তবে শিয়া ইসলামদের মধ্যে এটা এখনো প্রচলিত আছে। একসাথে একজন মুসলিম চার স্ত্রীর বেশি রাখতে পারে না কিন্তু মুতা বিয়ের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য নয়। মুতা বিয়ের মাধ্যমে একজন মুসলমান ইচ্ছে করলে যে কোন নারীর সাথে সঙ্গম সুখ লাভ করতে পারবে। মুতা বিবাহে কোন কাজী বা সাক্ষীর প্রয়োজন হয় না। কয়েকটি আয়াত পাঠের মাধমে এ বিবাহ সম্পন্ন করা হয় এবং এ বিয়ের কোন তালাক নেই। মুতা বিবাহ সম্পর্কে কিছু সহীহ হাদীস রয়েছে। হাদীসগুলো হলোঃ
১) সালামা ইবনে আল আকবা ও জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাদিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যেঃ আল্লাহর নবী (সাঃ) আমাদের কাছে আসলেন ও সাময়িক বিয়ের অনুমতি প্রদান করলেন।
***সহীহ মুসলিমঃ হাদিস নম্বরঃ ৩২৪৭।
২) ইবনে উরাইজ বর্ণিতঃ আতি বর্ণিত যে জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ উমরা পালনের জন্য আসল এবং আমরা কিছু লোক তার কাছে গেলাম ও বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তখন তিনি বললেন- আমরা নবীর আমলে সাময়িক বিয়ে করে আনন্দ করতাম ও এটা আবু বকর ও ওমরের আমল পর্যন্ত চালু ছিল।
***সহীহ মুসলিমঃ হাদিস নম্বরঃ ৩২৪৮।
৩) জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ বর্ণিতঃসামান্য কিছু খাদ্য বা অন্য কিছুর বিনিময়ে আমরা নবীর আমলে সাময়িক বিয়ে করতাম, এটা আবু বকরের আমলেও আমরা এটা করতাম। তবে ওমর এটা নিষেধ করে দেন।
***সহীহ মুসলিমঃ হাদিস নম্বরঃ ৩২৪৯।
৪) রাবি বিন ছাবরা হতে বর্নিত হয়েছে যেঃমক্কা বিজয়ের সময় তার পিতা রাসুলুল্লাহর সাথে এক যুদ্ধে শরীক হয়। আমরা সেখানে পনের দিন অবস্থান করি। আল্লাহর রাসূল আমাদের অস্থায়ী বিয়ের অনুমতি দেন। আমি আমারই গোত্রের এক লোকের সাথে মেয়ে খুজতে বেড়িয়ে পড়ি। আমার সঙ্গীর চেয়ে আমি দেখতে সুন্দর ছিলাম, পক্ষান্তরে সে ছিলো কদাকার। আমাদের উভয়েরই পরনে ছিল একটি উত্তরীয়। আমার উত্তরীয়টি ছিলো জীর্ন অন্যদিকে আমার সঙ্গীর ছিলো একবোরে নতুন। শহরের একপ্রান্তে একটি মেয়ে দৃষ্টি গোচর হলো আমাদের। অল্প বয়সী মেয়ে, ঠিক যেন মরাল গ্রীবা চটপটে এক মাদী উট। আমরা বললাম আমাদের মধ্যে একজন তোমার সাথে অস্থায়ী বিয়ের চুক্তিতে আবদ্ধ হতে চাই। তা কি সম্ভব? সে বলল তোমরা আমাকে কী দিতে পার। আমরা উভয়েই আমাদের স্ব স্ব উত্তরীয় মেলে ধরলাম। সে আমাদের উপর দৃষ্টি বুলিয়ে নিলো। আমার সঙ্গী মেয়েটির উপরও দৃষ্টি বুলিয়ে নিলো এবং বললো পুরাতনটি গ্রহন করায় ক্ষতি নাই। সুতরাং আমি তার সাথে অস্থায়ী বিয়ে সম্পন্ন করলাম।
***সহীহ মুসলিমঃ হাদিস নম্বরঃ ৩২৫৩।
উপরোক্ত হাদীসগুলো কিতাবুল নিকাহ (৮নং বই)-তে উল্লেখ করা আছে।
মূতা বিবাহ রহিতকরনঃ
মালিকানাভুক্ত দাসী বলতে জিহাদের ময়দানে বন্দীকৃত নারীদেরকে গনীমতের মাল হিসাবে ধরা হয়েছিল এবং তাদেরকে ঐ সময় সাময়িক বিবাহ করতো। যাকে বলা হতো মূতা বিবাহ। কিন্তু পরে উমর (রাদিঃ)-এর সময় থেকে রহিত করা হয় এবং বলা হয় এটি ঘৃনিত কাজ।
জাবির বিন আবদুল্লাহ বর্ণনা করেছেনঃ আমরা চুক্তি করে (মুতা) বিয়ে করতাম কয়েক মুঠো আটার বিনিময়ে। ঐ সময় আল্লাহ্র রসুল আমাদের মাঝে জীবিত ছিলেন। এই ব্যবস্থা চলতে থাকে আবু বকরের (রাদিঃ) সময় পর্যন্ত। কিন্তু হারিস নামক একজন সাহাবীর (রাদিঃ) ঘটনা শোনার পর উমর (রাদিঃ) এই ধরণের বিবাহ নিষিদ্ধ করে দেন।***সহিহ্ মুসলিমঃ বই নম্বরঃ ৮ হাদিস নম্বরঃ ২৩৪৯।
মূ'তা বা ভোগ বিবাহ হারামঃ
মূসাদ্দাদ ইবনে মুসারহাদ যূহরী (রহিঃ) থেকে বর্ণিত আছ যেঃ তিনি বলেছেন যেঃ
একদা আমি উমর ইবনে আবদুল আযীযের নিকট উপস্থিত ছিলাম। এই সময় আমরা মূ'তা বিবাহ নিয়ে আলোচনা করতে থাকাকালে জনৈক ব্যক্তি যার নাম ছিল রাবিয়া ইবনে সাবুরা- তিনি বলেছেনঃ আমি যখন আমার পিতার নিকট উপস্থিত ছিলাম, তখন তিনি বলেছেন, রাসুল (সাঃ) বিদায় হজ্জ্বের সময় এরুপ করতে (মূ'তা বিবাহ) নিষেধ করেছেন।
***আবু দাউদঃ ২০৬৮; অনুচ্ছেদঃ মূ'তা বা ভোগ বিবাহ।
মুহাম্মদ ইবনে ইয়াহইয়া -------- রাবীয়া ইবনে সাবূরা তার পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন যেঃ
রাসুল (সাঃ) মূ'তা বিবাহ হারাম করেছেন।
***আবু দাউদঃ ২০৬৯; অনুচ্ছেদঃ মূ'তা বা ভোগ বিবাহ।
টীকাঃ উপরের হাদিস দুইটি ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে আনীত হয়েছে। সরাসরি সাহাবী কর্তৃক আনীত হয়নি।
মন্তব্যঃ
২০১৩ সালে ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান সরকার সে দেশে মুতা বিবাহের আড়ালে “বৈধ বেশ্যালয়” স্থাপনের অনুমতি দিয়েছে। কিছুদিন আগেও খবরে প্রকাশিত হয়েছিল যে, সিরিয়ায় জিহাদের নামে নারীদেরকে মুজাহিদদের জন্য সাময়িকভাবে বরাদ্দ করা হয়েছিল। ঘটনার সত্যতা জানা যায়নি। যদি কারও কাছে এই বিষয়ে (মূতা বিবাহ) অতিরিক্ত দলিল থাকে তাহলে মন্তব্য করে জানাবেন।
অতিরিক্ত মন্তব্যঃ
হিল্লা বিবাহ এবং মূতা বিবাহ কোনটারই ইসলামে স্বীকৃতি নেই। অথচ আমাদের বাংলাদেশের সমাজে হিল্লা বিবাহ চালু রয়েছে। আর ইরানে বৈধ বেশ্যাবৃত্বির নামে মূতা বিবাহ চালূ রয়েছে।
▓▓▓▒▒░░ রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সময় হিল্লা বিবাহ প্ৰচলিত ছিল ░░▒▒▓▓▓
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হিল্লা বিবাহকে শুধু ঘৃনাই করতেন না বরং উভয়কেই লানত করেছেন। তারপরও, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সময় এবং আবু বকর (রাদিঃ)-এর সময় অবধি হিল্লা বিবাহ প্ৰচলিত ছিল। অতঃপর উমর (রাদিঃ) উক্ত প্ৰচলিত হিল্লা বিবাহ বন্ধ করে দেন।
প্রশ্ন হলঃ
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এবং আবু বকর (রাদিঃ)-এর সময় অবধি হিল্লা বিবাহ বন্ধ হল না কেন? উমর (রাদিঃ)-এর সময়ে হিল্লা বিবাহ বন্ধ হল কেন?
হাদিসে এসেছে যেঃ ইবনে মাসউদ (রাদিঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেছেনঃ
"রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হিল্লাকারী এবং যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়কে লানত করেছেন।"
ইমাম তিরমিজী (রহিঃ) বলেছেন যে, এই হাদিসটি হাসান সহিহ।
***জামে আত তিরমিযীঃ ২য় খন্ড, হাদিস নম্বরঃ ১১২০, হুসাইন আল মাদানী প্রকাশনী।
ইবনে মাজাহতেও আলী (রাদিঃ) হতে বর্ণিত আছে যেঃ
“রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হিল্লাকারী এবং যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়কে লানত ((অভিসম্পাত) করেছেন।”
***সুনানে ইবনে মাজাহঃ ২য় খন্ড, হাদিস নম্বরঃ ১৯৩৫; ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
হিল্লা সম্পর্কে সাহাবী উকবা বিন আমের (রাদিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যেঃ তিনি বলেছেনঃ
“রাসূলুল্লুাহ (সাঃ) বলেছেনঃ আমি কি তোমাদেরকে ভাড়া করা পাঠা সম্পর্কে বলবো? তারা বললোঃ অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল।
তিনি বললেনঃ হিল্লাকারী।
অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ আল্লাহ হিল্লাকারী ও যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়কে অভিসম্পাত করেছেন।"
***সুনানে ইবনে মাজাহঃ ২য় খন্ড, হাদিস নম্বরঃ ১৯৩৬; ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
ইবনে আব্বাস (রাদিঃ) হতে বর্ণিত আছে যেঃ তিনি বলেছেনঃ
রুকানার পিতা আবদ ইয়াযীদ উম্মে রুকানাকে তালাক প্রদান করেন এবং যুযায়না গোত্রের জনৈক স্ত্রীলোককে বিবাহ করেন। সেই মহিলা নবী (সাঃ)-এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে বলে, সে সহবাসে অক্ষম, যেমন- আমার মাথার চুল অন্য চুলের কোন উপকারে আসে না। কাজেই আপনি তার ও আমার মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দিন। এতদ শ্রবণে নবী (সাঃ) রাগান্বিত হন এবং তিনি রুকানা ও তার ভাইদিগকে আহবান করেন। এরপর তিনি সেখানে উপস্থিত করে সাথীদের সম্বোধন করে বলেন, তোমরা লক্ষ্য করে দেখ যে, এদের মধ্যে অমুক অমুকের বিশেষ অঙ্গ প্রত্যঙ্গ তাদের পিতা আবদ ইয়াযীদের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সঙ্গে কি মিল খাচ্ছে না? তখন তারা বলেন, হ্যাঁ। নবী (সাঃ) আবদ ইয়াযীদকে বলেনঃ তুমি তাকে তালাক দিয়ে দাও। তিনি তাকে তালাক দিলেন। এরপর তিনি তাকে নির্দেশ দেন যে, তুমি উম্মে রুকানাকে (পূর্ব স্ত্রী) পুনরায় গ্রহণ কর। তখন তিনি বলেনঃ আমি তো তাকে তিন তালাক প্রদান করেছি, ইয়া রাসূল্লাহ! তখন তিনি বলেনঃ আমি তোমার তালাক প্রদানের কথা অবগত আছি। তুমি তাকে পুনরায় গ্রহণ কর।এরপর তিনি কুরআনের আয়াত তিলাওয়াত করেনঃ ‘হে নবী! যখন তোমাদের স্ত্রীদের তালাক প্রদান করবে, তখন তাদেরকে ইদ্দত পালনের জন্য তালাক দিবে।”
ইমাম আবু দাউদ (রহিঃ) বলেছেনঃ
আবদ ইয়াযীদ তার স্ত্রীকে তালাক প্রদান করলে নবী (সাঃ) তাকে পুনরায় গ্রহণের জন্য নির্দেশ প্রদান করেন।
***আবু দাউদঃ ৩য় খন্ড, হাদিস নম্বরঃ ২১৯৩; ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
উক্ত হাদিসে দেখা যাচ্ছে যে, উম্মে রুকানাকে নবী (সাঃ) হিল্লা বিবাহ ছাড়াই তার স্বামী আবদ ইয়াযীদ এর সাথে পুনরায় বিবাহ দিলেন। অতএব, নবীজি হিল্লা বিবাহকে হারাম জানতেন তা প্রমানিত হলো।
▓▓▓▒▒░░ হিল্লা ছাড়াই নবী (সাঃ)- হাফসা (রাদিঃ)-কে পুনরায় বিবাহ করেন ░░▒▒▓▓▓
ইবনূ আব্বাস (রাদিঃ) ও উমর (রাদিঃ) হতে বর্ণিত আছে যেঃ ‘নবী (সাঃ)- হাফসা (রাদিঃ)-কে তালাক প্রদান করেন। তারপর তিনি তাঁকে পুনরায় স্বীয় স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেন।'
***আবু দাউদঃ ৩য় খন্ড, হাদিস নম্বরঃ ২২৭৭ এবং সুনানে নাসাঈঃ ৩য় খন্ড, হাদিস নম্বরঃ ৩৫৬১; ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
এ হাদিসে হিল্লা বিবাহের কোন অস্তিত্ব নেই। হিল্লা বিবাহ ছাড়াই নবীজি (সাঃ)- হাফসা (রাদিঃ)-কে পুনরায় বিবাহ করলেন।
উল্লেখ্য যে, নবী (সাঃ)- হাফসা (রাদিঃ)-কে তিন তালাক প্রদান করেছিলেন না।
অতএব, হিল্লা বিবাহ অবৈধ, ইহাতে কোনই সন্দেহ নেই।
যেহেতু সূরা বাকারার ২৩২ নং আয়াত সম্পর্কে হাদিসে কোন প্রমান পাওয়া যায় যে, হিল্লা বিবাহ ছাড়াই তালাকের পর পুনরায় স্ত্রীকে গ্রহণ করা যায়, সেহেতু ২৩০ নং আয়াতের ব্যাখ্যা ভুল। সূরা বাকারার ২৩০ নং আয়াত ঐ সমস্ত নারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যারা তালাক প্রাপ্ত হয়ে যাবার পর স্বেচ্ছায় দ্বিতীয় স্বামী গ্রহণ করে এবং পরবর্তীতে আবার পুর্বের স্বামীর নিকট ফিরে যেতে চায়।
মন্তব্যঃ
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হিল্লা বিবাহকে শুধু ঘৃনাই করতেন না বরং উভয়কেই লানত করেছেন। যাহা উপরের হাদিসগুলোর আলোকেই প্রমানীত হয়।
প্রশ্ন হলঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এবং আবু বকর (রাদিঃ)-এর সময় অবধি হিল্লা বিবাহ প্ৰচলিত ছিল কেন? উমর (রাদিঃ)-এর সময়ে হিল্লা বিবাহ বন্ধ হল কেন?
উমর (রাদিঃ) বলেছেনঃ আসরাম (রঃ) কাবি সাবিল জাবের (রাদিঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যেঃ
একদিন হযরত উমর (রাদিঃ) তাঁর খেলাফতকালে মসজিদের মিম্বরে উঠে বললেনঃ আমার নিকট যদি এমন মামলা আসে যাতে হিল্লাকারী (২য় স্বামী) এবং যার জন্য হিল্লা করা হয় (১ম স্বামী) এমন কাউকে আনা হয়, আমি দুজনকেই পাথর মেরে হত্যা করবো।”
যারা পাপ করে তারা পাপী এবং যারা সেই পাপের সহযোগিতা করে তারাও পাপী। অতএব, সাবধান! যারা হিল্লা বিবাহকে সহযোগিতা করবে তারাও সমান পাপের অংশীদার হবে।
একটি সংগৃহিত প্রবন্ধঃ
"হিল্লা বিয়ে ইসলাম বিরোধী ও নারীর প্রতি বৈষম্য"
লেখকঃ মুফতি কাযী ইব্রাহিম
হিল্লা বিয়ে কি? আভিধানিকভাবে হিল্লা বলতে উপায়, গতি, ব্যবস্থা, আশ্রয় ও অবলম্বন বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন- তোমার কি কোন হিল্লা (গতি বা উপায়) হয়েছে? বা মেয়েটির কোন হিল্লা বা আশ্রয় হয়েছে? কিন্তু প্রচলিত পরিভাষায় হিল্লা বলতে, কোন স্বামীর তিন তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে এ শর্তে বিয়ে করা যে, বিয়ের পর সহবাস শেষে স্ত্রীকে তালাক দেবে, যেন সে পূর্বের স্বামীর জন্য হালাল হয়, সে তাকে পুনরায় বিয়ে করতে পারে।এই হিল্লা বিয়ে শুধু বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আর ভারতে নয়, পৃথিবীর সব মুসলিম অধ্যুষিত দেশেই কম-বেশী প্রচলিত আছে। আরবে এই হিল্লা বিয়েকে হাল্লালা বলে। হিল্লা শব্দটি আরবী (حلة) ‘হালা’ থেকে এসেছে। এর অর্থ বৈধতা/বৈধকরণ। যদিও আরবী হালাল শব্দের অর্থ হলো ইসলামে অনুমোদনপ্রাপ্ত। কিন্তু হিল্লা বিয়ে মোটেই হালাল নয়। হিল্লা বিবাহ হারাম এবং তা মূলত কোনো বিয়েই নয় বরং হিল্লা স্বামীর সাথে বিয়ে ও সহবাস হারাম। সে যাই হোক এখন প্রশ্ন হলো, তালাকের পরে আপন স্ত্রী যদি পর নারী হয়েই যায় তবে তাকে আবার বিয়ে করা বৈধ হওয়া উচিৎ। কেননা আপন ভগ্নী, খালা-ফুফু ইত্যাদি ছাড়া অন্য কাউকে বিবাহ করা জায়েজ। সে তো তখন ঐ গোত্রেই পরে।
• প্রসঙ্গ বাংলাদেশ •
হিল্লা বিয়ে জানেন না এমন বাংলাদেশী হয়ত একজনও খুঁজে পাওয়া যাবে না। বাংলায় এটা কোনকালেই ছিল না। কিন্তু এখন গত পনেরো বিশ বছর ধরে এটা খবরের কাগজে প্রায়ই ওঠে। গ্রাম-গঞ্জের কাঠমোল্লা ও মাতুব্বররা মিলে ফতোয়ার তাৎক্ষণিক আদালতে বিভিন্ন মামলার শারিয়া-মাফিক বিচার করে রায় ঘোষণা করেন। রাষ্ট্রীয় বৈধতা না থাকলেও সে-রায় প্রচণ্ড সামাজিক শক্তিতে অপরাধীর ওপরে প্রয়োগ করা হয়। হিল্লা হল এরই একধরনের শারিয়া-মামলা যাতে কোন হিল্লা বিয়ের-কারণে শারিয়া-আদালত কোন দম্পতির বিয়ে বাতিল ঘোষণা করেন। তারপর তাদের আবার বিয়ে দেবার শর্ত হিসেবে স্ত্রীকে অন্য লোকের সাথে বিয়ে ও সহবাসে বাধ্য করেন। দ্বিতীয় স্বামী স্বেচ্ছায় তালাক দিলে তবে সে আবার আগের স্বামীকে বিয়ে করতে পারে। এটা ঘটে প্রধানত স্বামী রাগের মাথায় স্ত্রীকে একসাথে তিনবার তালাক বলে ফেলেছে বলে, তার কথা শোনার সাক্ষী কখনো থাকে, কখনো থাকে না।এক শ্রেণীর মূর্খ ও বক ধার্মিক লোকেরা, শিক্ষিত ও ব্যক্তিত্বশালী আলেমদের কাছে না গিয়ে অল্প শিক্ষিত মোল্লাদের পরামর্শে তালাক প্রাপ্তা মহিলাকে তার আগের স্বামীর কাছে ফিরিয়ে দেওয়া বা হালাল করে দেয়ার জন্য হিল্লা বিয়ের আয়োজন করে এবং এটিকে ইসলামের বিধান বলে চালিয়ে দেয়। যার ফলে বিতর্কিত এবং কলুষিত হচ্ছে ইসলামের সুন্দর বিধান ও মহান আদর্শ। আর ইসলামের শত্রুরা এটাকে তাদের মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে পেয়ে কুরআন ও ইসলামের কুৎসা রটনার ক্ষেত্রে তাদের কোন প্রচেষ্টার ত্রুটি রাখছে না। অথচ তারা হাদিস সম্পর্কে কোন জ্ঞানই রাখে না। স্বামী কর্মক্ষেত্র থেকে বাড়ীতে ফিরেছে। এসে দেখলো এখনও রান্না শেষ হয়নি। বাস মাথায় উঠে গেল প্রচন্ড রাগ। স্ত্রীর সাথে শুরু করে দিল ঝগড়া। পেটে ক্ষুধা এবং মাথায় রাগ। এক পর্যাযে বলে ফেললো তালাক। বাস আর যাবে কোথায়? মসজিদের কাঠমোল্লা দিয়ে দিল তালাকের ফতোয়া। স্ত্রী চলে গেল বাবার বাড়ী। কিন্তু যখন স্বামীর মাথা ঠান্ডা হলো যখন নিজের ভুল বুঝতে পারলো। এবার স্ত্রীকে আনার জন্য উদগ্রীব। কিন্তু বাঁধ বসালো কাঠমোল্লা আর মাতুব্বর। স্ত্রীকে আনতে হলে হিল্লা বিয়ে দিতে হবে। কিন্তু কাঠমোল্লারা একটু চিন্তা-ভাবনা করে না যে, যেখানে রাগ হলো স্বামীর, দোষ করলো স্বামী এবং অপরাধী হলো স্বামী। সেখানে স্ত্রী কেন অপরাধী হবে? স্ত্রী কেন স্বামীর পাপের বোঝা বহন করবে?
► কুরআন কি বলে?
কিছু কাঠমোল্লারা না বুঝলেও আল্লাহ পাক ঠিকই বোঝেন। তাই মহান আল্লাহ পাক এরশাদ করেন-
“একে অপরের কৃতকর্মের জন্য দায়ী হইবে না” (সূরা নজম ৩৮)।
এ কথা সবাই স্বীকার করবেন যে, অপরাধ হোক বা না-হোক, সেটা করেছে স্বামী। অথচ হঠাৎ তালাক দিলে নিরপরাধ স্ত্রীর জীবন ধ্বংস হয়ে যায়। সে হারায় তার স্বামী-সংসার ও সন্তান। কিন্তু একজনের অপরাধে অন্যের শাস্তি হওয়া চরম অন্যায়। সে জন্যই কুরআন কি চমৎকার বলেছে -
“তাহাদের কর্ম সম্পর্কে তোমাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে না” [সূরা বাকারা-১৪১]
তালাক এবং তাৎক্ষণিক-দ্বিতীয় বিয়ে (হিল্লা বিয়ে) সম্পূর্ণ কুরআন বিরোধী। কুরআন মোতাবেক কোন নারীকে বিয়েতে বাধ্য করার অধিকার কারো নেই। সেই সময়ে নারীকে এ অসাধারণ অধিকার দিয়েছে কুরআন। হিল্লা বিবাহ স্ত্রীকে দিয়ে জোরপূর্বক এক ধরণের বেশ্যাবৃত্তি, যা সম্পূর্ণ হারাম। এই হারাম কাজে যারা জড়িত থাকবে হোক সে মসজিদের ইমাম, অবশ্যই সে জাহান্নামী হবে।
► নাবী কারীম (সাঃ) কি বলেছেন?
এবার আসুন নবী করিম (সাঃ) হিল্লা বিয়ে সম্পর্কে কি বলেন। ইসলামের ইতিহাসে হিল্লা বিবাহের কোন ঠাই নাই। নবীজি (সাঃ) হিল্লা বিবাহকে শুধু ঘৃনাই করতেন না, হিল্লাকারীদের উপর লানত করতেন। জামে আত তিরমিজী ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিস।
ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,
“রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হিল্লাকারী এবং যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়কে লানত করেছেন।” **ইমাম তিরমিজী বলেন (র), এই হাদিসটি হাসান সহিহ। (জামে আত তিরমিজী, ২য় খন্ড, হাদিস নং ১১২০, হুসাইন আল মাদানী প্রকাশনী) ইবনে মাজাহ শরীফেও হযরত আলী (রা) হতে বর্ণিত আছে, “রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হিল্লাকারী এবং যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়কে লানত (অভিসম্পাত) করেছেন।” **(সুনানে ইবনে মাজাহ, ২য় খন্ড, ১৯৩৫ নং হাদিস, ইসলামিক ফাউন্ডেশন)*
উল্লেখ্য যে, হিল্লাকারী হলো দ্বিতীয় স্বামী এবং যার জন্য হিল্লা করা হয় সে হলো প্রথম স্বামী।
হিল্লা সম্পর্কে সাহাবী উকবা বিন আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিস:
উকবা ইবনে আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসূলুল্লুাহ (সাঃ) বলেছেন আমি কি তোমাদেরকে ভাড়া করা পাঠা সম্পর্কে বলবো? তারা বললোঃ অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল, তিনি বললেন, হিল্লাকারী। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, আল্লাহ হিল্লাকারী ও যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়কে অভিসম্পাত করেছেন। " [সুনানে ইবনে মাজাহ, ২য় খন্ড, ১৯৩৬ নং হাদিস, ইসলামিক ফাউন্ডেশন]
হাদিস দুটিতে লক্ষ্য করুন। প্রথম হাদিসে স্বামী এবং হিল্লাকারী পুরুষকে লানত করা হয়েছে। অর্থাৎ অভিশাপ দেওয়া হয়েছে, তারা আল্লাহর রহমত হতে বঞ্চিত।
দ্বিতীয় হাদিসে হিল্লাকারী পুরুষকে ভাড়া করা পাঠার সাথে তুলনা করা হয়েছে। কোন ব্যক্তি যদি বলে আমি অমুকের স্ত্রীকে হিল্লা বিয়ে করে আবার তালাক দিব যাতে সে তার স্ত্রীকে পুনরায় গ্রহণ করতে পারে। হাদিস অনুযায়ী সে ব্যক্তি হলো ভাড়া করা পাঠা। আর এ পাঠার দলে যারা থাকে তারাও পাঠার দল। অতএব যে সমস্ত কাঠমোল্লা বা মাতুব্বর হিল্লাকে বৈধ মনে করবে তারাও পাঠা। আমার জানা মতে এই পাঠাকে একমাত্র কালি পূজায় বলি দেওয়া হয়।
দেখুন হযরত উমর (রা) কি বলেন।
“হযরত আসরাম (র) কাবিসাবিল জাবের (রা) হতে বর্ণনা করেন, একদিন হযরত উমর (রা) তাঁর খেলাফতকালে মসজিদের মিম্বরে উঠে বললেন, আমার নিকট যদি এমন মামলা আসে যাতে হিল্লাকারী (২য় স্বামী) এবং যার জন্য হিল্লা করা হয় (১ম স্বামী) এমন কাউকে আনা হয়, আমি দুজনকেই পাথর মেরে হত্যা করবো।”
যারা পাপ করে তারা পাপী এবং যারা সেই পাপের সহযোগিতা করে তারাও পাপী। অতএব সাবধান যারা হিল্লা বিবাহকে সহযোগিতা করবে তারাও পাপের অংশীদার।
► যেভাবে শুরু হলো হিল্লা বিয়ের প্রথা:
এখন আসি কিভাবে হিল্লা বিয়ের প্রথা শুরু হলো। নবী (সাঃ) এর ওফাতের পর মানুষ ধীরে ধীরে ধর্ম থেকে দূরে সরে আসার কারণে এই মুসলিম সমাজে তালাকের প্রবণতা বেড়ে যায়। ফলে এর সমাধানের জন্য এক শ্রেণীর মোল্লাদের দ্বারা হিল্লা বিয়ের মত কু-প্রথা সমাজে চালু হয়ে পড়ে। আর এর জন্য নিন্মের কুরআনের আয়াতকে অপব্যবহার করা হয়। মূলত যে সমস্ত আলেম বা কাঠমোল্লা হিল্লা বিয়ে জায়েজ করতে চায় তারা কুরআন-হাদিস সম্পর্কে অজ্ঞ এবং অপব্যাখ্যা করে। আর তারা তাদের স্বার্থে সূরা বাকারার ২৩০ নং আয়াতকে দলিল হিসাবে তুলে ধরে।
“তারপর যদি সে স্ত্রীকে তালাক দেয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে, তার জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়, তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরষ্পরকে পুনরায় বিয়ে করাতে কোন পাপ নেই, যদি আল্লাহ হুকুম বজায় রাখার ইচ্ছা থাকে।
আর এই হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা; যারা উপলব্ধি করে তাদের জন্য এসব বর্ণনা করা হয়।” [সূরা বাকারা-২৩০]
• প্রকৃত বিশ্লেষণ •
কাঠ মোল্লারা উপরের আয়াতের দোহাই দিয়ে হিল্লা বিবাহ জায়েজ করতে চায়। কিন্তু তারা গবেষণা করে না যে এই আয়াতটি কাদের জন্য প্রযোজ্য। তারা এটাও লক্ষ্য করে না যে, পরবর্তী ২৩২ নং আয়াতে আল্লাহ কি বলেছেন। এবার সূরা বাবাকার ২৩২ নং আয়াত লক্ষ্য করি।
মহান আল্লাহ এরশাদ করেনঃ
“তোমরা যখন স্ত্রীদেরকে তালাক দাও এবং তারা তাদের ইদ্দতকাল পূর্ণ করে তবে স্ত্রীগণ নিজেদের স্বামীদেরকে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে বিয়ে করতে চাইলে তাদের বাঁধা দিও না। এ উপদেশ তাকেই দেয়া হচ্ছে, যে আল্লাহ ও কেয়ামত দিনের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করেছে। এর মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে একান্ত পরিশুদ্ধতা ও অনেক পবিত্রতা। আর আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না।” [সুরা বাকারা-২৩২]
উল্লেখিত আয়াতে দেখা যাচ্ছে যে, স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার পর যদি নির্ধারিত ইদ্দত শেষও হয়ে যায়, তখন স্বামীর সাথে পারস্পারিক সম্মতিক্রমে বিয়ে করা যাবে। এখানে মনে হতে পারে যে, সূরা বাকারার ২৩০নং আয়াত ২৩২ নং আয়াতের সাথে বিরোধপূর্ণ, কিন্তু বাস্তবে তা নয়। উক্ত দুটি আয়াত ব্যাখ্যাগত দিক দিয়ে বিরোধপুর্ণ নয়। এ দুটি আয়াত বোঝার জন্য এখন হাদিস শরীফ অনুসন্ধন করতে হবে। দেখতে হবে নবীজি (সাঃ) কি করেছেন। তার আগে আমি সূরা বাকারার ২৩২ নং আয়াতে শানে নুজুল উল্লেখ করতে চাই। অর্থাৎ কোন প্রেক্ষাপটে সূরা বাকারার ২৩২ নং আয়াত নাজিল হযেছে।
তাফসীরে ইবনে কাসীর-এ সূরা বাকারার ২৩২ নং আয়াতের শানে নুজুল সম্পর্কে উল্লেখ আছে- “আয়াতটি হযরত মা’কাল বিন ইয়াসার (রা) এবং তাঁর বোনের সম্বন্ধে অবর্তীর্ণ হয়।
হযরত মা’কাল বিন ইয়াসার (রা) বলেন, ‘আমার নিকট আমার বোনের বিয়ের প্রস্তাব আসলে আমি তার বিয়ে দেই। তার স্বামী কিছুদিন পর তাকে তালাক দেয়। ইদ্দত অতিক্রান্ত হওয়ার পর পুনরায় সে আমার নিকট বিয়ের প্রস্তাব করে। আমি তা প্রত্যাখ্যান করি। আমি শপথ করি যে, তার সাথে আমার বোনে বিবাহ দিব না। তখন এই আয়াতটি (সূরা বাকারার ২৩২ নং আয়াত) অবতীর্ণ হয়। এটা শুনে হযরত মা’কাল (রা) বলেন, শপথ করা সত্বেও আমি আল্লাহর নির্দেশ শুনেছি এবং মেনে নিয়েছি। অতঃপর তিনি তাঁর বোনকে ডেকে পাঠিয়ে পুনরায় তার সাথে তাঁর বোনের বিয়ে দিয়ে দেন এবং নিজের কসমের কাফ্ফারা আদায় করেন। তাঁর বোনের নাম ছিল জামীল বিনতে ইয়াসার (রা) এবং তাঁর স্বামীর নাম ছিল আবুল বাদাহ (রা)।”
আয়াতের শানে নুজুলে দেখা যাচ্ছে কোন হিল্লা বিয়ে ছাড়াই হযরত মা’কাল বিন ইয়াসার (রা) তার বোনকে পূর্বের স্বামীর সাথে বিবাহ দিলেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত বুখারী শরীফ ৭ম খন্ড, ৪১৭৩ নং হাদিসেও উক্ত ঘটনা বর্ণিত আছে। তাই জোর দিয়ে বলা যায় সূরা বাকারার ২৩০ নং আয়াত দিয়ে হিল্লা বিবাহের যে অপব্যাখ্যা দেয়া হয় তা সম্পূর্ণ বানোয়াট। সূরা বাকারার ২৩০ নং আয়াতের ব্যাখ্যা ভিন্ন হবে যা, পরে আলোচনা করছি। আসলে ঐ সব মোল্লারা এই আয়াতের শানে নজুল জানে না বা নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য এই আয়াতের অপব্যাখ্যা করে থাকে। এবার আমি ২৩২ নং আয়াতের স্বপক্ষে কিছু হাদিস শরীফ পেশ করছি।*আবু দাউদ শরীফের কিতাবুত তালাক অধ্যায়ে ইবনে আব্বাস (রা) হতে বর্ণিত*তিনি বলেন, রুকানার পিতা আবদ ইয়াযীদ উম্মে রুকানাকে তালাক প্রদান করেন এবং যুযায়না গোত্রের জনৈক স্ত্রীলোককে বিবাহ করেন। সেই মহিলা নবী করীম (সা) এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে বলে, সে সহবাসে অক্ষম, যেমন আমার মাথার চুল অন্য চুলের কোন উপকারে আসে না। কাজেই আপনি তার ও আমার মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দিন। এতশ্রবণে নবী করীম (সা) রাগান্বিত হন এবং তিনি রুকানা ও তার ভাইদিগকে আহবান করেন। এরপর তিনি সেখানে উপস্থিত করে সাথীদের সম্বোধন করে বলেন, তোমারা লক্ষ্য করে দেখ যে, এদের মধ্যে অমুক অমুকের বিশেষ অঙ্গ প্রত্যঙ্গ তাদের পিতা আবদ ইয়াযীদের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সঙ্গে কি মিল খাচ্ছে না? তখন তারা বলেন, হ্যাঁ। নবী করীম (সাঃ) আবদ ইয়াযীদকে বলেন, তুমি তাকে তালাক দিয়ে দাও। তিনি তাকে তালাক দিলেন। এরপর তিনি তাকে নির্দেশ দেন যে, তুমি উম্মে রুকানাকে (পূর্ব স্ত্রী) পুনরায় গ্রহণ কর। তখন তিনি বলেন, আমি তো তাকে তিন তালাক প্রদান করেছি, ইয়া রাসূল্লাহ! তখন তিনি বলেন, আমি তোমার তালাক প্রদানের কথা অবগত আছি। তুমি তাকে পুনরায় গ্রহণ কর। এরপর তিনি কুরআনের আয়াত তিলাওয়াত করেন, ‘হে নবী! যখন তোমাদের স্ত্রীদের তালাক প্রদান করবে, তখন তাদেরকে ইদ্দত পালনের জন্য তালাক দিবে।”
ইমাম আবু দাউদ (র) বলেন, আবদ ইয়াযীদ তার স্ত্রীকে তালাক প্রদান করলে নবী করিম (সা) তাকে পুনরায় গ্রহণের জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। [আবু দাউদ শরীফ, ৩য় খন্ড, ২১৯৩নং হাদিস, ইসলামিক ফাউন্ডেশন]
উক্ত হাদিস শরীফে দেখা যাচ্ছে যে, উম্মে রুকানাকে নবী করীম (সাঃ)হিল্লা বিবাহ ছাড়াই তার স্বামী আবদ ইয়াযীদ এর সাথে পুনরায় বিবাহ দিলেন। অতএব নবীজি হিল্লা বিবাহকে হারাম জানতেন তা প্রমানিত হলো।
** ইবনে আব্বাস (রা) ও উমার (রা) হতে বর্ণিত **
‘নবী করীম (সাঃ) হযরত হাফসা (রা) কে তালাক প্রদান করেন। এরপর তিনি তাঁকে পুনরায় স্বীয় স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেন।”
[আবু দাউদ শরীফ, ৩য় খন্ড, ২২৭৭ নং হাদিস এবং সুনানে নাসাই শরীফ, ৩য় খন্ড, ৩৫৬১নং হাদিস, ইসলামিক ফাউন্ডেশন]
এ হাদিসেও হিল্লা বিবাহের কোন অস্তিত্ব নেই। হিল্লা বিবাহ ছাড়াই নবীজি (সাঃ) হযরত হাফসা (রাঃ) কে পুনরায় বিবাহ করলেন।
তাই হিল্লা বিবাহ অবৈধ, ইহাতে কোন সন্দেহ নেই। যেহেতু সূরা বাকারার ২৩২ নং আয়াত সম্পর্কে হাদিস শরীফে প্রমান পাওয়া যায় যে, হিল্লা বিয়ে ছাড়াই তালাকের পর পুনরায় স্ত্রীকে গ্রহণ করা যায়, সেহেতু ২৩০ নং আয়াতের ব্যাখ্যা ভুল। সূরা বাকারার ২৩০ নং আয়াত ঐ সমস্ত নারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যারা তালাক প্রাপ্ত হয়ে যাবার পর স্বেচ্ছায় দ্বিতীয় স্বামী গ্রহণ করে এবং পরবর্তীতে আবার পুর্বের স্বামীর নিকট ফিরে যেতে চায়।
শেষ কথাঃ
উল্লেখিত হাদিসসমূহ হতে আমরা সূরা বাকারার ২৩০ নং আয়াতে ব্যাখ্যা বুঝতে পারলাম। অর্থাৎ প্রথম স্বামী স্ত্রীকে তালাক দিলে ঐ স্ত্রী যদি স্বেচ্ছায় দ্বিতীয় বিবাহ করে, তবে ঐ স্ত্রী পূর্বের স্বামীর নিকট ফিরে যেতে পারবে না, যতক্ষন না দ্বিতীয় স্বামী স্বেচ্ছায় ঐ স্ত্রীকে তালাক না দেয়।
আর সূরা বাকারার ২৩২ নং আয়াতের ব্যাখ্যা হলো, যদি স্ত্রী প্রথম স্বামীর নিকট হতে তালাক প্রাপ্ত হওয়ার অন্য কোথাও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ না হয়, তবে সে পূর্বের স্বামীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে উভয়ের সম্মতিতে। এতে কোন ধমীয় বা আইনি বাঁধা থাকবে না। হিল্লা বিয়ে নামে যা প্রচলিত আছে, তা হারাম এবং অনৈসলামিক কর্মকান্ড। তাই সূরা বাকারার ২৩০ ও ২৩২ নং আয়াত দুটি ব্যাখ্যাগত দিক দিয়ে অনুরসণ যোগ্য।
আমাদের দেশে সেই পাকিস্তানী আমল থেকে ১৯৬১ সালে মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ দ্বারা তালাকে বিদা নিষিদ্ধ এবং হিল্লা বিয়ের প্রথা নিষিদ্ধ করা হয়। আশা করি বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশেও এই আইন কার্যকর হবে এবং হিল্লা বিয়ের মত অনৈসলামিক প্রথা চিরতরে ইসলামী সমাজ থেকে বন্ধ করা যাবে। এ ব্যাপারে আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে যেন ধর্মের নামে হিল্লা বিয়ে দিয়ে কোন মা-বোনের ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেলা না হয়। যদি কোথাও এরকম কোন দুঃখজনক পরিস্থিতি দেখা দেয় তবে সেই বিপদের হাত থেকে অসহায় নারীকে উদ্ধার করা ওয়াজিব। জেনে শুনে যারা অসহায়কে সাহায্য করে না তাদের উপর আল্লাহর রহমত আসে না। এ ব্যাপারে কারো সহযোগিতা না পেলে সরাসরি স্থানীয় প্রশাসন, থানা অথবা গণমাধ্যমকর্মীর সাহায্য নিন। একজন অসহায় নারীকে বিপদ হতে উদ্ধারের জন্য আল্লাহ পাক আপনাকে বড় ধরণের কোন পুরস্কার দিবেন। আল্লাহ আমাদের সকলকে ইসলামের সঠিক বুঝ দান করুন এবং হিল্লা বিবাহে প্রতিরোধ গড়ে তোলার তাওফিক দিন। আমিন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন