সূচীপত্র -
১l খৃষ্টান জাতীর অবস্থা
২l ইঞ্ছিল বা বাইবেল প্রসঙ্গ
৩l ইঞ্জিল বারবানাস
৪l বারবানাস কে ছিলেন
৫l শেষ কথা
খৃষ্টান জাতীর অবস্থা
খ্রিষ্টিয় ধর্ম বলতে হযরত ঈসা (আঃ) কর্তৃক আনিত ধর্ম নয়,বরং ঈসা (আঃ)-এর বলে যাকে মনে করা হয় তাই । বর্তমান খ্রিষ্টবাদের শিক্ষা যে হযরত ঈসা (আঃ) দেননি সে সম্পর্কে অকাট্য প্রমান বিদ্যমান রয়েছে । প্রকৃত পক্ষে ঈসা (আঃ) মানব জাতীর কাছে সেই ইসলামই উপস্থাপন করেছিলেন,যা তার পূরবে সমস্ত নবী ও রাসূলগন উপস্থাপন করেছিলেন এবং তার পরে বিশ্ব নবী (সাঃ) উপস্থাপিত করেছিলেন ।
বর্তমানে খ্রিষ্ট ধর্ম বলতে যা উপস্থিত রয়েছে তা হযরত ঈসা (আঃ)-এর প্রচারিত খোদায়ি জীবন ব্যাবস্থা নয় বরং হযরত ঈসা (আঃ)-এর নামে পাদ্রিদের মনগড়া মতবাদ । ষষ্ঠ শতাব্দিতে খ্রিষ্টান জাতীর অবস্থা মোটেও ভাল ছিল না । অত্যন্ত শোচনীয় ছিল তাদের অবস্থা । হযরত ঈসা (আঃ)-এর শিক্ষা ও আদর্শ পাদ্রিদের হাতে এমন ভাবে বিকৃত হয়ে পড়েছিল যে , সয়ং ঈসা (আঃ) ফিরে এলেও প্রচারিত আদর্শকে নিজের বলে চিনতে পারতেন না ।
হযরত ঈসা (আঃ)-এর তাওহীদবাদি আদর্শকে ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ ত্রিতত্ববাদে পরিনত করেছিল । যে ঈসা (আঃ) পৃথিবীতে এসেছিলেন মুর্তি ধ্বংস করার জন্যে , খ্রিষ্টানরা সেই ঈসার মূর্তি বানিয়েই পূজা শুরু করে দিল । সেই সাথে তার মা মেরিও {মরিয়ম (আ)} ঈশ্বরের এক তৃতীয়াংশরূপে সর্বত্র পূজিত হতে লাগল । শুধু কি তাই ? সেন্ট পল ও পিটারের মূর্তি বানিয়েও পূজা শুরূ হল ! গোটা জীবন ধরে যে যত পাপই করুক না কেন , ত্রানকর্তা যিশুকে একবার পূজা করলেই সমস্ত পাপ ধুয়ে মুছে যাবে - এই মতবাদ সমস্ত খ্রিষ্টানদের মন ও মগজে প্রতিষ্ঠিত করে দেওয়া হল ।
এরপর 'Holy Roman Empire' নামে পৃথক একটি খ্রিষ্টান জগৎ প্রতিষ্ঠিত করা হল ।রোমের পোপের হাতে খ্রিষ্টানদের যাবতিয় ধর্ম সংক্রান্ত অপরাধের বিচারের দায়িত্ব অর্পন করা হল । এর পর ধর্মের দোহাই দিয়ে পোপ-পার্দিরা যে বীভৎস লীলাখেলা শুরু করেছিল , ইতিহাসের পৃষ্ঠা সে সব ঘৃন্য ঘটনায় আজও কলংকিত হয়ে আছে ।
পোপ-পার্দিগন ঘোষনা করেছিল - বেহেস্তের চাবি একমাত্র তাদেরই হাতে । যে যতবড় পাপই করুক না কেন , পোপকে উপযুক্ত মূল্যদান করলে তার আর কোন ভয় থাকবে না । তাকে বেহেস্তে যাবার পাস্পোর্ট দিয়ে দেয়া হবে ।
এই ঘোষনার ফলে গোটা খ্রিষ্টান জগতে পাপ-অন্যায়-অনাচারের প্লাবন বয়ে গিয়েছিল , অন্য জাতীর ইতিহাসে তার উপমা নেই । ঐ ঘৃন্য ঘোষনার ফলে আজও গোটা খ্রিষ্ট পৃথিবী পাপ পংকিলতার অতল তলে নিমজ্জিত হয়ে আছে । প্রকৃত অর্থে তাদের কাছে ধর্ম বলতে যা আছে তা হযরত ঈসা (আঃ) - এর শিক্ষা নয় ।
ইঞ্ছিল বা বাইবেল প্রসঙ্গ
বর্তমানে ইঞ্জিল বা বাইবেল যেটা,তা প্রধানত ৪ টি গ্রন্থের সমষ্টিঃ ১.লুক । ২.মার্ক । ৩.মথি । ৪.যোহন । কিন্তু এই ৪ টা কিতাবের কোনটাই ঈসা (আঃ)-এর নয় । তার উপরে নাযিলকৃত ওহি একত্রে পাওয়া যায়না । হযরত ঈসা (আঃ) ভ্রমনকালে বিভিন্ন স্থানে যে সব উপদেশ দিয়েছেন সেগুলো স্বয়ং তার ভাষা নয় । বর্তমানে যা আছে তা যেমন আল্লাহ'র বাণী নয় তেমনি ঈসা (আঃ)-এর বাণীও নয় । এগুলো আসলে ঈসা (আঃ)-এর শিষ্যদের বরং তস্য শিষ্যদের লিখিত গ্রন্থ । তারা তাদের জ্ঞানের পরিধি অনুসারে ঈসা (আঃ)-এর জীবনি,ইতিহাস এবং বাণী সমূহ লিখেছেন । মথি নামে যে গ্রন্থ রয়েছে তা স্বয়ং মথির লেখা যে নয়,তা ঐতিহাসীক ভাবে প্রমানীত । মথির আসল গ্রন্থ লেজিয়া বহু পূর্বেই গায়েব হয়ে গেছে ।
মথির নামে যে পুস্তক আছে তা যে কার লেখা তা জানার কোন উপায়ই পার্দিরা রাখেনি । স্বয়ং মথির নামের জায়গায় একজন অপরিচিত লোকের নামের মত উল্লেখ করা হয়েছে । মথি ৯ম অধ্যায়ে বলা হয়েছেঃ ইয়াসু সেখান থেকে সামনে অগ্রসর হয়ে মথি নামক একজন ব্যাক্তিকে দেখতে পেলেন ।
মথির রচয়িতা যদি স্বয়ং মথি হতেন তাহলে তিনি এমন করে তার নিজের নাম উল্লেখ করতেন না । মথির গ্রন্থ পাঠ করলে বুঝা যায়,তা মারকাস গ্রন্থ থেকে ধার করা । কারন মারকাস গ্রন্থের মোট আয়াতের সংখ্যা ১০৬৮ টি । এর মধ্যে ৪৭০ টি আয়াতের সাথে মারকাসের বাইবেলের আয়াতের অবিকল মিল আছে রয়েছে । মথির রচয়িতা যদি স্বয়ং মথি হতেন বা হযরত ঈসা (আঃ)-এর সঙ্গি হতেন তাহলে তাহলে অন্য কার লেখা বই থেকে তিনি সংকলন করতেন না । খৃষ্টান গবেষকদের ধারনা,এই গ্রন্থটি ইসার৪১ বছর পরে ৭০ খৃষ্টাব্দে লেখা । আবার কারো কারো ধারনা এটি ৯০ খৃষ্টাব্দে লেখা । যোহন নামে যে বাইবেল রয়েছে তাও হযরত ঈসা (আঃ)-এর সঙ্গি যে যোহন তার লিখা নয় তা বর্তমান খৃষ্টান গবেষকগনই স্বীকৃতি দিয়েছেন । যোহন নামে অন্য কোন লোক এই যোহন কিতাব বানিয়েছে । এই কিতাব ৯০ খৃষ্টাব্দে বা তার আরো পরে রচনা করা হয়েছে । খৃষ্টান গবেষক হ্যারিং বলেছেন এটা ১১০ সালে রচিত ।
মার্ক নামে যে বাইবেল আছে তা মারকাসের বাইবেল বলে স্বীকার করা হয় । কিন্তু মারকাস কোনদিন ঈসা (আঃ)-এর সাথে দেখা করেননি ও তার সঙ্গিও ছিলেন না । কেউ বলেছেন,এই মারকাস যিশুকে ক্রুশে বিদ্ধ করার সময় সেখানে দর্শক হিসাবে উপস্থিত ছিল । কিন্তু এ কথার কোন ভিত্তি নেই ।মারকাস হল সেন্ট পিটির নামক শিষ্যের শিষ্য এবং তার কাছ থেকে তিনি যা শুনেছেন তাই তিনি গ্রিক ভাষায় লিখেছিলেন । এ কারনে খৃষ্টান ধর্ম বিশারদগন তাকে সেন্ট পিটারের বাণীর ব্যাখ্যাতা বলে দাবি করেন ।৬৩ সালে বা ৭০ সালে এই মার্ক গ্রন্থ রচিত হয়েছে বলে ধারনা করা হয় । লুক যে বাইবেল লিখেছেন তার মধ্যেও মারাত্বক বিভ্রান্তি রয়েছে । এই লুক নামক ধর্ম নেতা যে কোন দিন ঈসা (আঃ)-কে দেখেননি এবং তার কথাও কোনদিন শোনেননি তা খৃষ্ট ধর্ম নেতারা এক বাক্যে শিকার করেছেন । লুক ছিলেন সেন্ট পলের শিষ্য এবং তার সাথেই তিনি থাকতেন । লুক যা লিখেছেন তা সেন্ট পলের বানী । স্বয়ং সেন্ট পল বলতেন লুক যে রচনা করেছে তা আমার ।
অথচ মজার বিষয় হল , এই সেন্ট পলও ঈসা (আঃ)-এর সাহচর্য লাভ করেননি । তিনি যিশু খৃষ্ট ক্রুসে বিদ্ধ হবার ৬০ বছর পরে খৃষ্ট ধর্মে দিক্ষীত হন । সূতরাং হযরত ইসা (আঃ) ও লুক এবং সেন্ট পলের এর মধ্যে অনেকগুলো বছরের শুন্যতা রয়ে গেছে ।
লুক নামক এই লোক হযরত ঈসা (আঃ)-এর বাণী কোত্থেকে জুটালো তা গবেষকদের কাছে রহস্যাবৃতই রয়ে গেছে ।তারপরর লুকের বাইবেল ইতিহাসের কোন সময়ে রচিতত তা এখন পর্যন্ত নির্নয় করা যাইনি । কেউ বলেছেন লুক রচিত হয়েছে ৫৭ সালে আবার কেউ বলেছেন ৭৪ সালে । খৃষ্টান গবেষক পোমার,ম্যাকগিফটিং ও হ্যারিং - এর মত বিখ্যাত ব্যাক্তিগন বলেছেন ৮০সালের পূর্ব পর্যন্ত লুক বাইবেল রচিত হয়নি ।
অতএব এই ৪ খানা বাইবেল এর একটাও ঈসা (আঃ) পর্যন্ত পৌছে না । সূতরাং আজ জানারও কোন উপায় নেই যে , হযরত ঈসা (আঃ)কি বলেছেন আর কি বলেননি ! এই ৪ খানা বাইবেলের বর্ননার মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য বিরাজমান । ঈসা (আঃ-এর নীতি ও আদর্শের যা প্রধান ভিত্তি সেই পর্বোতরি উপদেশ গুলি মথি,মারকাস ও লুক তিনজনে তিনভাবে পরস্পর বিরোধি পদ্ধতিতে বর্ননা করেছেন । প্রতিটি গ্রন্থেই লেখকের নিজস্ব ধ্যান-ধারনা ও মনোভাব সুস্পষ্টভাবে অভিব্যাক্ত হয়েছে ।
এসব পাঠ করলে মনে হয় যেন মথির প্রতিপক্ষ একজন ইহুদি এবং সে তার বিতর্কে বিজয় লাভ করতে উদগ্রীব । মারকাসের প্রতিপক্ষ যেন একজন রোমক এবং তাকে তিনি ইসরাইলী ইতিবৃত্ত শোনাতে চান । আর লুক যেন সেন্ট পলের উকিল এবং অন্যান্ন শিষ্যদের বিরুদ্ধে তার দাবি সমর্থন করতে চান । আর যোহন যেন খৃষ্টিয় প্রথম শতকের শেষের দিকে খৃষ্টানদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া দার্শনিক সূফিবাদী তত্ত কথা দ্বারা প্রভাবিত । এভাবে বাইবেল গুলোর ভেতরে তত্তগত মতভেদ শাব্দিক বিরোধের চেয়েও বেশি হয়ে গেছে ।
ওদিকে ইঙ্জিল গুলো লিপিবদ্ধ করার কোন চেষ্টাই খৃষ্টিই দ্বিতীয় দশকের আগে করা হয়নি । ১৫০ সাল পর্যন্ত এই ধরনের ধারনা প্রচলিত ছিল যে , লেখার চেয়ে মৌখিক বর্ননা অধিক ফলদায়ক । দ্বিতীয় শতাব্দির শেষের দিকে যা লিখা শুরু হল সেগুলোকে নির্ভরযোগ্য বলে মেনে নেওয়া হলোনা । নিউটেষ্টামেন্টের প্রথম প্রামান্য পান্ডুলীপিটি ৩৯৭ সালে অনুষ্ঠিত কর্টোজেনা কাউন্সিলে অনুমোদন দেওয়া হয় ।
৪ খানা বাইবেলই প্রথমে গ্রীক ভাষায় লিখিত হয়েছিল । অথচ হযরত ঈসা (আঃ)-ও তার সমস্ত শিষ্যদের ভাষা ছিল সূরিয়ানী । এভাবে ভাষার পরিবর্তনের কারনে চিন্তাধারা ও বক্তব্যের বিষয়ের পরিবর্তন হওয়া অত্যন্ত স্বভাবিক । ইঞ্জিলের যে প্রাচীন কপিটি বর্তমান পৃথিবীতে প্রচলিত তা খৃষ্টিয় চতুর্থ শতকের । দ্বিতীয় লিপিটি পঞ্চম শতকের।
আর তৃতীয় যে অসম্পূর্ন লিপিটি রোমের পোপের লাইব্রেরীতে আছে,সেটাও চতুর্থ শতাব্দির চেয়ে বেশি প্রাচিন নয় । সূতরাং প্রথম তিন শতাব্দিতে যে বাইবেল প্রচলিত ছিল তার সাথে বর্তমান বাইবেল কতখানি সংগতিপূর্ন তা বলা কতটা কঠিন,চিন্তাশীল ব্যাক্তিমাত্রই তা অনুধাবন করতে সক্ষম হবে ।
সে পরে যখন লিপিবদ্ধ করার কাজ শুরু হয় তখন তা নির্ভরশীল ছিল লিপিকারকদের কৃপার ওপর। লিপিকরনের সময় যে সকল জিনিষ লিপিকারকদের চিন্তা-চেতনা ও আদর্শ বিশ্বাসের পরিপন্থি তা কাট-ছাট করে নিজের চিন্তা-চেতনা ও আদর্শ বিশ্বাস অনুপ্রবিষ্ট করাটা অসম্ভবের কিছুই না । সূতরাং খৃষ্টানদের কাছে তাদের ধর্মের অবস্থা তখন যেমন ছিল বর্তমানে তারচেয়ে উন্নত তো নয়ই বরং অবনতিই আশা করা যায় ।
সময়ে বাইবেলকে কূরআনের মত মুখস্ত করার কোন চেষ্টাই করা হয়নি । প্রথম দিকে এর প্রচার ও প্রসার সম্পূর্ন রূপে মর্মগত বর্ননার ওপর নির্ভরশীল ছিল । বাইবেল এর শব্দ নয় - এর বিষয় বস্তু প্রচার করা হতো । এতে স্মৃতির ত্রুটি-বিচ্যুতি এবং বর্ননাকারকদের নিজস্ব ধ্যান-ধারনা প্রতিফলিত হওয়া স্বাভাবীক ।
ইঞ্জিল বারবানাস
হযরত ঈসা (আঃ)-এর নিজের সঠিক অবস্থা ও তার প্রদত্ব আসল শিক্ষাবলী জানার নির্ভরযোগ্য সূত্র সেই ৪ খানা ইঞ্জিল নয়,যেগুলোকে খৃষ্টান গির্জা নির্ভরযোগ্য ও সর্বসমর্থিত ইঞ্জিল (Canonical Gospels One Copy) রুপে গ্রহন করে নিয়েছে । বরং তার জন্য অধিক অধিক বিশ্বাসযোগ্য ও নির্ভরযোগ্য উপায় হল সেই 'ইঞ্জিল বারবানাস' ! যাকে গির্জা বেআইনি , সন্দেহজনক ও অপ্রমানিক (Apycryphal) বলে চিহ্নিত করেছে । খৃষ্টানরা এই ইঞ্জিল লুকিয়ে রাখার জন্য অনেক চেষ্টা-যন্ত করেছে । শত শত বছর পর্যন্ত তা দুনিয়ায় অপরিচিত ও অপ্রকাশিত হয়ে রয়েছে । ষষ্ঠদশ শতকে এর ইটালিয় অনুবাদের মাত্র একখানা বই One copy পোপ সিক্সটাস (Sixtus) এর গ্রন্থাগারে পাওয়া যেত , তা অন্য কারও পাঠ করার অনুমতি ছিল না । অষ্টাদশ শতাব্দির শুরুতে সেটা ডন টোলেগু নামক একজন ব্যাক্তির হস্তগত হয় । অতপর বিভিন্ন হাত ঘুরে ১৭৩৮ খৃষ্টব্দে তা ভিয়েনা ইম্পিরাল লাইব্রেরিতে পৌছে । ১৯০৭ খৃষ্টাব্দে এই বইয়ের ইংরেজি অনুবাদ অক্সফোর্ডের ক্লে'রিন্ডন প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়েছিল । কিন্তু তা প্রকাশিত হওয়ার পরই সম্ভবত খৃষ্টান জগত অনুভব করতে পারল যে,যে ধর্মমতকে হযরত ইসা (আঃ)-এর নামে চালানো হচ্ছে , এই বই সেই সেই ধর্মের মূল শিকড় কেটে ফেলে । এ কারনে ঐ মুদ্রিত বই গুলো বিশেষ ব্যাবস্থাপনায় লুকিয়ে ফেলা হয় । এরপর তা আর কখনও প্রকাশিত হতে পারেনি । অপর একখানা বই এই ইটালিও অনুবাদ হতে স্পেনিয় ভাষায় , তা অষ্টদশ শতকে পাওয়া যেত । জর্জ সেল তার কূরআনের ইংরেজি অনুবাদের ভূমিকায় এর কথা উল্লেখ করেছেন । কিন্তু তাও কোথাও লুকিয়ে রাখা হয়েছিল । ফলে বর্তমানে সেটারও কোন নাম-চিহ্ন কোথাও খুজে পাওয়া যায় না । অক্সফোর্ড থেকে প্রকাশিত এর ইংরেজি একটা কপি বহুকষ্টে একজন মুসলীম পন্ডিতের হস্তগত হয় ফলে শতশত বছর ধরে লুকায়িত সত্য প্রকাশিত হয়ে পড়ে । এই কপিটি সত্যিই অনেক বড় নিয়ামত ।খৃষ্টানরা নিছক হিংসা ও বিদ্বেশের কারনে সে ইঞ্জিল থেকে নিজেদের বষ্ণিত করে রেখেছে ।
খৃষ্টানদের বই-পুস্তকে যেখানেই এই ইঞ্জিলের উল্লেখ আসে , তখন তাকে এই বলে প্রত্যাখ্যান করা হয়যে , এটা নাকি জাল ইঞ্জিল ! কিন্ত তাদের এই কথা ডাহা মিথ্যা ছাড়া কিছুইনা । এই গ্রন্থের বিভিন্য স্থানে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর আগমন সম্পর্কে ভবিষ্যৎবানী উল্লেখর উল্লেখ আছে বলেই তারা উক্ত ইঞ্জিল সম্পর্কে এমন অপপ্রচার করেছে এবং করছে ।
নবী করীম (সাঃ)-এর জন্মের ৭৫ বছর পূর্বে পোপ প্রথম গেলাসিয়াস (Gelasius) এর সময়ে খারাপ বিশ্বাস ও বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী (heretical) গন্থাবলির যে তালিকা তৈরি হয়েছিল 'ইঞ্জিল বারবানাস' ও তার অন্তর্ভূক্ত ছিল । ইতিপূর্বে খৃষ্টান গির্জায় দির্ঘদিন পর্যন্ত বারবানাসের ইঞ্জিল প্রচলিত ছিল । একে নিষিদ্ধ করা হয় ষষ্ঠ শতাব্দিতে ।
বাইবেলে যে ৪ খানা ইঞ্জিল গ্রন্থকে আইনসম্মত ও নির্ভরযোগ্য ঘোষনা করে সামিল করা হয়েছে তন্মন্ধে একখানা গ্রন্থের লেখকও ঈসা (আঃ)-এর কোন সাহাবি । লেখকদের একজনও এই দাবি করেননি যে,তিনি হযরত ঈসা (আঃ)-এর সাহাবিদের কাছ থেকে তত্ত্ব ও তথ্য নিজের ইঞ্জিলে সামিল করেছেন । তারা যেসব উপায় ও সূত্র হতে তত্ত্ব ও তথ্য সংগ্রহ করেছেন তার পরিচয়ও তারা দেননি । এর মূল বর্ননাকারী নিজ চোখে যেসব ঘটনা দেখেছেন এবং যেসব কথা নিজের কানে শুনেছেন বলে তিনি বর্ননা করেছে , কিংবা এক বা একাধিক সূত্রের মাধ্যমে সেই কথাগুলো তার কাছে পৌছেছে,এ বিষয়ে কিছুই জানা যায় না । এটি একটি মৌলিক ত্রুটি । কিন্তু 'ইঞ্জিল বার্বানাস' এই সব দোষ ও ত্রুটি থেকে সম্পূর্ন মুক্ত । এই ইঞ্জিল রচয়িতা নিজেই বলেছেন,আমি নিজে হযরত ঈসা মসীহের প্রাথমিক বারোজন হাওয়ারীর একজন । শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমি নিজে হযরত ঈসা মসীহের সঙ্গে রয়েছি । আমার নিজের চোখে দেখা ঘটনাবলী ও নিজের কানে শোনা কথা এবং বানীসমূহ আমি এই গ্রন্থে সন্নিবেশিত করেছি । এতটুকু লিখেই তিনি ক্ষান্ত হননি । গ্রন্থের শেষভাগে তিনি বলেছেন,আমার সম্পর্কে যেসব ভুল ধারনা লোকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে তা দূর করে দিও এবং যথাযথ অবস্থায় দুনিয়ার সম্মুখে উদঘাটিত করে দেওয়া তোমারই দায়িত্য ।
বারবানাস কে ছিলেন
এই বারবানাস কে ছিলেন ? বাইবেলের কার্যাবলী (প্রেরিতদের কার্য) এ নামের এক ব্যাক্তির বার বার উল্লেখ এসেছে । এই ব্যাক্তি ছিল ইহুদি পরিবারের লোক খৃষ্টান ধর্ম প্রচার ও ঈসা মসীহর অনুসারিদের সাহায্য সহযোগিতা করার ব্যাপারে তার অবদানের খুব বেশি প্রশংসা করা হয়েছে । কিন্তু সে কবে খৃষ্টান ধর্ম গ্রহন করেছিল তা কোথাও বলা হয়নি । প্রাথমিক ১২ জনের যে তালিকা তিনখানা ইঞ্জিলে দেওয়া হয়েছে তাতে তার নাম উল্লেখ করা হয়নি । কাজেই এই ইঞ্জিলের লেখক সেই বারবানাস কিংবা অন্য কেউ তা নিশ্চিত করে বলা যায় না । মথি ও মার্ক শিষ্যদের (Apostles) যে তালিকা দিয়েছেন,বারবানাসের দেয়া তালিকার সাথে মাত্র দুইটা নামের পার্থক্য । একজনের নাম হলো তুমা । এর পরিবর্তে বারবানাস নিজের নাম উল্লেখ করেছেন । লুক ইঞ্জিলে এই ২য় নামটিও রয়েছে । একারনে এরুপ ধারনা করার যোক্তিকতা আছে যে,পরবর্তিকালে কোন এক সময় হাওয়ারি শিষ্যদের তালিকা থেকে বারবানাসকে বহিষ্কৃত করার উদ্দেশ্যে তুমা'র নাম শামীল করাহয়েছে,যেন বারবানাসের ইঞ্জিল থেকে নিষ্কৃতি লাভ করা যায় । আর নিজেদের ধর্মগ্রন্থ সমূহে এই ধরনের পরিবর্তন করে নেওয়া এদের কাছে কোন দিনই কোন দোষ বা পাপের কাজ ছিল না,তা সর্বজনবিদিত ।
৪টি ইঞ্জিলের অসংলগ্ন কাহিনীর তুলনায় এই গ্রন্থের ঐতিহাসীক বর্ননাবলীয় অধিক সুসংবদ্ধ । এর বর্ননায় মাধ্যমে ঘটনাবলীর ধারাবাহীকতা অতীব উত্তমভাবে বুঝতে পারা যায় । হযরত ঈসা (আঃ)-এর প্রদত্ব শিক্ষাবলী চার ইঞ্জিলের তুলনায় এই গ্রন্থটিতেই অধিক স্পষ্ট,বিস্তারিত ও মর্মস্পর্ষিভাবে বিবৃত হয়েছে । চারটি ইঞ্জিলের উদৃত তার বহু বানী ও কথার মধ্যে যে বিরোধ ও অসংগতি সুস্পষ্ট,এই গ্রন্থটিতে তার নাম গন্ধও পাওয়া যাবে না ।
এই ইঞ্জিলে হযরত ঈসা (আঃ)-এর জীবন ও তার শিক্ষাবলী একজন নবীর জীবন ও শিক্ষাবলীর মতই পুরাপুরিভাবে মনে হবে । তিনি এতে একজন নবী হিসাবেই নিজেকে উপস্থাপিত করেছেন ।
বারবানাসের ইঞ্জিলের নানা স্থানে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর আগমন সম্পর্কে স্পষ্ট ভবিষ্যৎবানী উদৃত হয়েছে । আর এই করনেই খৃষ্টানরা এই ইঞ্জিল প্রত্যাখ্যান করেছে সত্যকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ।
শেষ কথা
হযরত ঈসা (আঃ-এর প্রথম যুগের অনুসারিরা তাকে একজন নবী মাত্র জানতেন । মূসা (আঃ)-এর প্রবর্তিত শরিয়াত মেনে চলতেন । আকিদা-বিশ্বাস,হুকুম-আহকাম ও ইবাদত-বন্দেগির ব্যাপারে নিজেদেরকে অন্যান্ন বনী ইসরাইল হতে কিছু মাত্র ভিন্ন,স্বতন্ত্র,বিচ্ছিন্ন মনে করতেন না । ইহুদিদের সাথে তাদের মতবিরোধ ছিল শুধু এ ব্যাপারে যে,এরা হযরত ঈসা (আঃ) কে মসীহ মানতে অস্বীকার করেছিল । উত্তর কালে যখন সেন্ট পল এই দলে শামিল হলেন,তখন তিনি রোমান,গ্রিক ও অন্যান্ন অ-ইয়াহুদি লোকদেরকে ও অ-ইসরাঈলী লোকদের মধ্যেও এই দীনের প্রচার ও প্রসার শুরু করলেন । এই উদ্দেশ্যে তিনি একটি নতুন দীন রচনা করলেন ।
এই দীনের আকিদা-বিশ্বাস,মুলনীতি ও আদেশ-নিষেধ হযরত ঈসা (আঃ)-এর পেশ করা দীন থেকে সম্পূর্ন ভিন্নতর ও অন্য রকম ছিল । এই ব্যাক্তি হযরত ঈসা (আঃ)-এর কোন সাহচর্য পাননি । বরং তিনি ঈসা (আঃ)- জীবদ্দসায় তার চরম বিরোধি ছিলেন । তারপর কয়েক বছর পর্যন্ত তার অনুসারীদের শত্রু হয়ে ছিলেন । পরে এই দলে শামিল হয়ে তিনি যখন একটা নতুন ধর্মমত রচনা করতে শুরু করলেন,তখন তিনি হযরত ঈসা (আঃ)-এর কোন কথার সনদ পেশ করেননি । তিনি ভিত্তি করেছেন নিজের কাশফ ও ইহলাম এরই উপর । এই নূতন ধর্ম রূপায়নে তার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল,ধর্ম এমন হতে হবে যা সাধারন অ-ইয়াহুদি (Gentile) জগৎ গ্রহন করবে । তিনি ঘোষনা করেছিলেন,খৃষ্টানরা ইয়াহুদি শরীয়তের বাধ্যবাধকতা থেকে সম্পূর্ন মুক্ত । পানাহারের ক্ষেত্রে হালাল-হারামের সকল বিধান তিনি খতম করে দিয়েছিলেন । খাতনা করার বিধানও তিনি নাকচ করে দেন । আর এ সকল বিধান অ-ইয়াহুদিদের কাছে অসহ্যের ব্যাপার ছিল । এমনকি তিনি মসীহর ইলাহ হওয়া,খোদার পুত্র হওয়া এবং শূল বিদ্ধ হয়ে প্রানদান করতঃ আদম সন্তানের জন্মগত পাপের প্রায়শ্চিত্ত হয়ে যাওয়ার আকিদাও রচনা করেন । প্রাথমীক পর্যায়ের অনুসারীগন এসব বিদআতের বিরোধিতা করেন । কিন্তু যে দ্বার উন্মুক্ত করে দিলেন,তা থেকে অ-ইয়াহুদি খৃষ্টানদের একটা বিরাট বন্যা প্রবাহ এই ধর্মে অনুপ্রবেশ করার সুযোগ লাভ করল । ফলে সেন্টপল বিরোধি মুষ্টমেয় লোক এর মুকাবেলায় মুহূর্তের তরেও টিকতে পারলো না । এ স্বত্তেও খৃষ্টিয় তৃতীয় শতাব্দির সমাপ্তিকাল পর্যন্ত হযরত ঈসার ইলাহ হওয়ার ধারনাকে অস্বীকার করে এমন বহু লোকই বর্তমান ছিল ।
চতুর্থ শতাব্দির শুরুতে (৩২৪ খৃ.) নাকিয়ার (Nicaea) কাউন্সিল সেন্টপল প্রবর্তিত আকীদাকে সর্বসম্মত খৃষ্টান ধর্মমত রূপে মনোনিত করে নিল । পরে রোমান সম্রাট ও সাম্রাজ্য নিজ থেকেই খৃষ্টান হয়ে গেল । এরপর এই ধর্মমতের বিপরীত আকীদা পেশ করার সমস্ত গ্রন্থাদি পরিত্যাক্ত ও বে-আইনি ঘোষিত হলো এবং এই আকিদার অনুকূল সমস্ত গ্রন্থাদি নির্ভরযোগ্যরূপে গৃহীত হলো । ৩৬৭ খৃষ্টাব্দে প্রথমবার আথানাসিয়াস (Athanasius) লিখিত একটি চিঠির নির্ভরযোগ্য ও সর্বসম্মত গ্রন্থাবলীর একটি সমষ্টি ঘোষনা করা হল । পরে ৩৮২ খৃষ্টাব্দে পোপ ডেমানিয়াস (Damasius)-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে তার সত্যতা স্বীকার (Ratification) করে নিল । পঞ্চম শতকের শেষে পোপ গেলাসিয়াস (Gelasius) এ গ্রন্থ সমষ্টিকে সর্বসম্মত ঘোষনা করার সঙ্গে সঙ্গে অসমর্থিত গ্রন্থাবলীরও একটি তালিকা রচনা করে দিল ।অথচ পল প্রবর্তিত যে সব আকিদা-বিশ্বাসকে ভিত্তি রুপেগ্রহন করে ধর্মিয় গ্রন্থাবলীর নির্ভরযোগ্য ও অনির্ভরযোগ্য হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল,সে সম্পর্কে কোন খৃষ্টান পন্ডিত কখনও এই দাবি করতে পারেনি যে,তার মধ্যে কোন একটি আকিদা-বিশ্বাসঈসা (আঃ) নিজে শিক্ষা দিয়েছিলেন । বরং গ্রহনীয় কিতাব গুলোর মধ্যে যে সকল ইঞ্জিল গন্য তাতে হযরত ঈসা (আঃ)-এর নিজের উক্তি বলে এই সব আকিদার কোন প্রমান পাওয়া যায় না ।বারবানাস এর ইঞ্জিল খৃষ্টধর্মের সরকারী আকীদার সম্পূর্ন বিপরীত আকিদা পেশ করে বিধায়,একে অগ্রহনীয় ও অসমর্থিত গ্রন্থাদির মধ্যে গন্য করা হয়েছে । এই গ্রন্থকার গ্রন্থের ভূমিকায় এই গ্রন্থ রচনার উদ্দেশ্য বর্ননা করে বলেছেন, 'সেই লোকদের মতাবলীর সংশোধন করিতে হইবে,যাহারা সয়তানের প্রতারনায় প্রতারিত হইয়া ঈসা মসীহ'কে খোদার পূত্র বলিয়া মনে করিতে শুরু করিয়াছে,খাতনা করা অপ্রয়োজনীয় মনে করে । সেন্টপল এই প্রতারিত দলের একজন ।'
গ্রন্থকার বলেন,হযরত ঈসা যখন দুনিয়ায় ছিলেন , তখন তাহার মুযিযা সমূহ দেখিয়া সর্বপ্রথম মুশরিক রোমান সৈন্যরা তাকে খোদা এবং কিছু লোক তাকে খোদার পূত্র বলিতে শুরু করিল । পরেন বনী ইসরাইলের সাধারন মানুষের মনেও এই ছোয়াচ লাগিয়া যায় । ইহাতে হযরত ঈসা খুবই বিব্রত হইয়া পড়েন । তিনি বার বার অত্যন্ত কঠোরতা সহকারে তাহার নিজের সম্পর্কিত এই ভুল আকিদার তিব্র প্রতিবাদ করিলেন এবং যাহারা তাহার সম্পর্কে কথা-বাত্রা বলে তাহাদের উপর অভিশাপ বর্ষন করিলেন এবং এর তিব্র প্রতিবাদ করিলেন । পরে তিনি তাহার শিষ্যবর্গকে সমগ্র ইয়াহুদায় এই আকিদার প্রতিবাদ করার জন্য পাঠিয়ে দিলেন । অতঃপর তাহার দোয়ায় শিষ্যদের দ্বারাও সেই সব মুযিযা সংঘঠিত করাইলেন যাহা স্বয়ং হযরত ঈসা (আঃ) কতৃক সংঘঠিত হইতেছিল । যেন যে লোকের দ্বারা এই মুযিযা সংঘঠিত হয় সে খোদা বা খোদার পূত্র এই ভূল ধারনা সহজেই দূর হয়ে যায় ।
এই পসঙ্গে হযরত ঈসা (আঃ)- বিস্তারিত ভাষন উদৃত করেছেন । তাতে তিনি কঠোর ভাষায় এই সব ভুল বিশ্বাসের প্রতিবাদ করেছেন । এই বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ার দরুন তিনি নিজে যে বিব্রত ও কাতর হয়ে পড়েছিলেন,নানা স্থানেতার বর্ননাও দিয়েছেন । এতদ্যত্যিত হযরত ইসা মসীহ সূলে প্রান ত্যাগ করেছেন - সেন্টপল রচিত এই ভ্রান্ত আকিদারও তিব্র প্রতিবাদ করা হয়েছে এই গ্রন্থে । গ্রনহথকার তার প্রত্যক্ষ বিবরনে বলেছেন,ইয়াহুদ ইস্কারিউতি যখন ইয়াহুদিদের সরদার পার্দ্রির নিকট হইতে ঘুষ গ্রহন করিয়া হযরত ঈসাকে গ্রেফতার করাইবার জন্য সিপাহীদের লইয়া আসিল,তখন আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে চারজন ফেরেশতা তাহাকে তুলিয়া লইয়া গেলেন এবং ইস্কারিউতির আকৃতি ও কন্ঠস্বর হযরত ঈসার মতই বানাইয়া দেওয়া হইয়াছিল । এবং তাহাকেই শুলে চড়ানো হইয়াছিল-হযরত ঈসাকে নয় ।এভাবেই এই ইঞ্জিল গ্রন্থটি-সেন্টপল রচিত খৃষ্টধর্মের শিকড় উৎপাটন করে দিয়েছে । সেই সঙ্গে কূরআন শরিফের এতদসম্পর্কিয় বর্ননার সত্যতা ও যথার্তা ঘোষনা করেছে । অথচ কূরআন নাযিল হওয়ার ১১৫ বছর পূর্বে এই গ্রন্থটির এম্বিধ বর্ননা সমূহের কারনেই খৃষ্টান পার্দ্রিগন তাকে সম্পূর্নভাবে প্রত্যাক্ষান করেছিল ।
ইঞ্জিল বারবানাস এর সাহায্যে নিজেদের আকিদা-বিশ্বাসকে সংসোধিত ও নির্ভুল ভাবে গড়ে তোলা ও হযরত ঈসা মসীহ'র আসল শিক্ষাদি জেনে নেওয়ার যে মহা সুযোগ খৃষ্টানদের কাছে ছিল,কেবলমাত্র জিদের বশবর্তি হয়েই তারা তা হতে নিজেদের বষ্ণিত করে রাখলো ।
(সমাপ্ত) — সংকলনে – মোঃ রেজওয়ানূর রহমান
মূল লেখক – মোদাস্সেম আল হোদাইবি
•
•
https://www.dropbox.com/.../Gospel%20of%20Barnabas.pdf...
Gospel of Barnabas.pdf
Shared with Dropbox
dropbox.com
•
•
or
https://app.box.com/s/ks9qcomic87y7tushc1c
১l খৃষ্টান জাতীর অবস্থা
২l ইঞ্ছিল বা বাইবেল প্রসঙ্গ
৩l ইঞ্জিল বারবানাস
৪l বারবানাস কে ছিলেন
৫l শেষ কথা
খৃষ্টান জাতীর অবস্থা
খ্রিষ্টিয় ধর্ম বলতে হযরত ঈসা (আঃ) কর্তৃক আনিত ধর্ম নয়,বরং ঈসা (আঃ)-এর বলে যাকে মনে করা হয় তাই । বর্তমান খ্রিষ্টবাদের শিক্ষা যে হযরত ঈসা (আঃ) দেননি সে সম্পর্কে অকাট্য প্রমান বিদ্যমান রয়েছে । প্রকৃত পক্ষে ঈসা (আঃ) মানব জাতীর কাছে সেই ইসলামই উপস্থাপন করেছিলেন,যা তার পূরবে সমস্ত নবী ও রাসূলগন উপস্থাপন করেছিলেন এবং তার পরে বিশ্ব নবী (সাঃ) উপস্থাপিত করেছিলেন ।
বর্তমানে খ্রিষ্ট ধর্ম বলতে যা উপস্থিত রয়েছে তা হযরত ঈসা (আঃ)-এর প্রচারিত খোদায়ি জীবন ব্যাবস্থা নয় বরং হযরত ঈসা (আঃ)-এর নামে পাদ্রিদের মনগড়া মতবাদ । ষষ্ঠ শতাব্দিতে খ্রিষ্টান জাতীর অবস্থা মোটেও ভাল ছিল না । অত্যন্ত শোচনীয় ছিল তাদের অবস্থা । হযরত ঈসা (আঃ)-এর শিক্ষা ও আদর্শ পাদ্রিদের হাতে এমন ভাবে বিকৃত হয়ে পড়েছিল যে , সয়ং ঈসা (আঃ) ফিরে এলেও প্রচারিত আদর্শকে নিজের বলে চিনতে পারতেন না ।
হযরত ঈসা (আঃ)-এর তাওহীদবাদি আদর্শকে ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ ত্রিতত্ববাদে পরিনত করেছিল । যে ঈসা (আঃ) পৃথিবীতে এসেছিলেন মুর্তি ধ্বংস করার জন্যে , খ্রিষ্টানরা সেই ঈসার মূর্তি বানিয়েই পূজা শুরু করে দিল । সেই সাথে তার মা মেরিও {মরিয়ম (আ)} ঈশ্বরের এক তৃতীয়াংশরূপে সর্বত্র পূজিত হতে লাগল । শুধু কি তাই ? সেন্ট পল ও পিটারের মূর্তি বানিয়েও পূজা শুরূ হল ! গোটা জীবন ধরে যে যত পাপই করুক না কেন , ত্রানকর্তা যিশুকে একবার পূজা করলেই সমস্ত পাপ ধুয়ে মুছে যাবে - এই মতবাদ সমস্ত খ্রিষ্টানদের মন ও মগজে প্রতিষ্ঠিত করে দেওয়া হল ।
এরপর 'Holy Roman Empire' নামে পৃথক একটি খ্রিষ্টান জগৎ প্রতিষ্ঠিত করা হল ।রোমের পোপের হাতে খ্রিষ্টানদের যাবতিয় ধর্ম সংক্রান্ত অপরাধের বিচারের দায়িত্ব অর্পন করা হল । এর পর ধর্মের দোহাই দিয়ে পোপ-পার্দিরা যে বীভৎস লীলাখেলা শুরু করেছিল , ইতিহাসের পৃষ্ঠা সে সব ঘৃন্য ঘটনায় আজও কলংকিত হয়ে আছে ।
পোপ-পার্দিগন ঘোষনা করেছিল - বেহেস্তের চাবি একমাত্র তাদেরই হাতে । যে যতবড় পাপই করুক না কেন , পোপকে উপযুক্ত মূল্যদান করলে তার আর কোন ভয় থাকবে না । তাকে বেহেস্তে যাবার পাস্পোর্ট দিয়ে দেয়া হবে ।
এই ঘোষনার ফলে গোটা খ্রিষ্টান জগতে পাপ-অন্যায়-অনাচারের প্লাবন বয়ে গিয়েছিল , অন্য জাতীর ইতিহাসে তার উপমা নেই । ঐ ঘৃন্য ঘোষনার ফলে আজও গোটা খ্রিষ্ট পৃথিবী পাপ পংকিলতার অতল তলে নিমজ্জিত হয়ে আছে । প্রকৃত অর্থে তাদের কাছে ধর্ম বলতে যা আছে তা হযরত ঈসা (আঃ) - এর শিক্ষা নয় ।
ইঞ্ছিল বা বাইবেল প্রসঙ্গ
বর্তমানে ইঞ্জিল বা বাইবেল যেটা,তা প্রধানত ৪ টি গ্রন্থের সমষ্টিঃ ১.লুক । ২.মার্ক । ৩.মথি । ৪.যোহন । কিন্তু এই ৪ টা কিতাবের কোনটাই ঈসা (আঃ)-এর নয় । তার উপরে নাযিলকৃত ওহি একত্রে পাওয়া যায়না । হযরত ঈসা (আঃ) ভ্রমনকালে বিভিন্ন স্থানে যে সব উপদেশ দিয়েছেন সেগুলো স্বয়ং তার ভাষা নয় । বর্তমানে যা আছে তা যেমন আল্লাহ'র বাণী নয় তেমনি ঈসা (আঃ)-এর বাণীও নয় । এগুলো আসলে ঈসা (আঃ)-এর শিষ্যদের বরং তস্য শিষ্যদের লিখিত গ্রন্থ । তারা তাদের জ্ঞানের পরিধি অনুসারে ঈসা (আঃ)-এর জীবনি,ইতিহাস এবং বাণী সমূহ লিখেছেন । মথি নামে যে গ্রন্থ রয়েছে তা স্বয়ং মথির লেখা যে নয়,তা ঐতিহাসীক ভাবে প্রমানীত । মথির আসল গ্রন্থ লেজিয়া বহু পূর্বেই গায়েব হয়ে গেছে ।
মথির নামে যে পুস্তক আছে তা যে কার লেখা তা জানার কোন উপায়ই পার্দিরা রাখেনি । স্বয়ং মথির নামের জায়গায় একজন অপরিচিত লোকের নামের মত উল্লেখ করা হয়েছে । মথি ৯ম অধ্যায়ে বলা হয়েছেঃ ইয়াসু সেখান থেকে সামনে অগ্রসর হয়ে মথি নামক একজন ব্যাক্তিকে দেখতে পেলেন ।
মথির রচয়িতা যদি স্বয়ং মথি হতেন তাহলে তিনি এমন করে তার নিজের নাম উল্লেখ করতেন না । মথির গ্রন্থ পাঠ করলে বুঝা যায়,তা মারকাস গ্রন্থ থেকে ধার করা । কারন মারকাস গ্রন্থের মোট আয়াতের সংখ্যা ১০৬৮ টি । এর মধ্যে ৪৭০ টি আয়াতের সাথে মারকাসের বাইবেলের আয়াতের অবিকল মিল আছে রয়েছে । মথির রচয়িতা যদি স্বয়ং মথি হতেন বা হযরত ঈসা (আঃ)-এর সঙ্গি হতেন তাহলে তাহলে অন্য কার লেখা বই থেকে তিনি সংকলন করতেন না । খৃষ্টান গবেষকদের ধারনা,এই গ্রন্থটি ইসার৪১ বছর পরে ৭০ খৃষ্টাব্দে লেখা । আবার কারো কারো ধারনা এটি ৯০ খৃষ্টাব্দে লেখা । যোহন নামে যে বাইবেল রয়েছে তাও হযরত ঈসা (আঃ)-এর সঙ্গি যে যোহন তার লিখা নয় তা বর্তমান খৃষ্টান গবেষকগনই স্বীকৃতি দিয়েছেন । যোহন নামে অন্য কোন লোক এই যোহন কিতাব বানিয়েছে । এই কিতাব ৯০ খৃষ্টাব্দে বা তার আরো পরে রচনা করা হয়েছে । খৃষ্টান গবেষক হ্যারিং বলেছেন এটা ১১০ সালে রচিত ।
মার্ক নামে যে বাইবেল আছে তা মারকাসের বাইবেল বলে স্বীকার করা হয় । কিন্তু মারকাস কোনদিন ঈসা (আঃ)-এর সাথে দেখা করেননি ও তার সঙ্গিও ছিলেন না । কেউ বলেছেন,এই মারকাস যিশুকে ক্রুশে বিদ্ধ করার সময় সেখানে দর্শক হিসাবে উপস্থিত ছিল । কিন্তু এ কথার কোন ভিত্তি নেই ।মারকাস হল সেন্ট পিটির নামক শিষ্যের শিষ্য এবং তার কাছ থেকে তিনি যা শুনেছেন তাই তিনি গ্রিক ভাষায় লিখেছিলেন । এ কারনে খৃষ্টান ধর্ম বিশারদগন তাকে সেন্ট পিটারের বাণীর ব্যাখ্যাতা বলে দাবি করেন ।৬৩ সালে বা ৭০ সালে এই মার্ক গ্রন্থ রচিত হয়েছে বলে ধারনা করা হয় । লুক যে বাইবেল লিখেছেন তার মধ্যেও মারাত্বক বিভ্রান্তি রয়েছে । এই লুক নামক ধর্ম নেতা যে কোন দিন ঈসা (আঃ)-কে দেখেননি এবং তার কথাও কোনদিন শোনেননি তা খৃষ্ট ধর্ম নেতারা এক বাক্যে শিকার করেছেন । লুক ছিলেন সেন্ট পলের শিষ্য এবং তার সাথেই তিনি থাকতেন । লুক যা লিখেছেন তা সেন্ট পলের বানী । স্বয়ং সেন্ট পল বলতেন লুক যে রচনা করেছে তা আমার ।
অথচ মজার বিষয় হল , এই সেন্ট পলও ঈসা (আঃ)-এর সাহচর্য লাভ করেননি । তিনি যিশু খৃষ্ট ক্রুসে বিদ্ধ হবার ৬০ বছর পরে খৃষ্ট ধর্মে দিক্ষীত হন । সূতরাং হযরত ইসা (আঃ) ও লুক এবং সেন্ট পলের এর মধ্যে অনেকগুলো বছরের শুন্যতা রয়ে গেছে ।
লুক নামক এই লোক হযরত ঈসা (আঃ)-এর বাণী কোত্থেকে জুটালো তা গবেষকদের কাছে রহস্যাবৃতই রয়ে গেছে ।তারপরর লুকের বাইবেল ইতিহাসের কোন সময়ে রচিতত তা এখন পর্যন্ত নির্নয় করা যাইনি । কেউ বলেছেন লুক রচিত হয়েছে ৫৭ সালে আবার কেউ বলেছেন ৭৪ সালে । খৃষ্টান গবেষক পোমার,ম্যাকগিফটিং ও হ্যারিং - এর মত বিখ্যাত ব্যাক্তিগন বলেছেন ৮০সালের পূর্ব পর্যন্ত লুক বাইবেল রচিত হয়নি ।
অতএব এই ৪ খানা বাইবেল এর একটাও ঈসা (আঃ) পর্যন্ত পৌছে না । সূতরাং আজ জানারও কোন উপায় নেই যে , হযরত ঈসা (আঃ)কি বলেছেন আর কি বলেননি ! এই ৪ খানা বাইবেলের বর্ননার মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য বিরাজমান । ঈসা (আঃ-এর নীতি ও আদর্শের যা প্রধান ভিত্তি সেই পর্বোতরি উপদেশ গুলি মথি,মারকাস ও লুক তিনজনে তিনভাবে পরস্পর বিরোধি পদ্ধতিতে বর্ননা করেছেন । প্রতিটি গ্রন্থেই লেখকের নিজস্ব ধ্যান-ধারনা ও মনোভাব সুস্পষ্টভাবে অভিব্যাক্ত হয়েছে ।
এসব পাঠ করলে মনে হয় যেন মথির প্রতিপক্ষ একজন ইহুদি এবং সে তার বিতর্কে বিজয় লাভ করতে উদগ্রীব । মারকাসের প্রতিপক্ষ যেন একজন রোমক এবং তাকে তিনি ইসরাইলী ইতিবৃত্ত শোনাতে চান । আর লুক যেন সেন্ট পলের উকিল এবং অন্যান্ন শিষ্যদের বিরুদ্ধে তার দাবি সমর্থন করতে চান । আর যোহন যেন খৃষ্টিয় প্রথম শতকের শেষের দিকে খৃষ্টানদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া দার্শনিক সূফিবাদী তত্ত কথা দ্বারা প্রভাবিত । এভাবে বাইবেল গুলোর ভেতরে তত্তগত মতভেদ শাব্দিক বিরোধের চেয়েও বেশি হয়ে গেছে ।
ওদিকে ইঙ্জিল গুলো লিপিবদ্ধ করার কোন চেষ্টাই খৃষ্টিই দ্বিতীয় দশকের আগে করা হয়নি । ১৫০ সাল পর্যন্ত এই ধরনের ধারনা প্রচলিত ছিল যে , লেখার চেয়ে মৌখিক বর্ননা অধিক ফলদায়ক । দ্বিতীয় শতাব্দির শেষের দিকে যা লিখা শুরু হল সেগুলোকে নির্ভরযোগ্য বলে মেনে নেওয়া হলোনা । নিউটেষ্টামেন্টের প্রথম প্রামান্য পান্ডুলীপিটি ৩৯৭ সালে অনুষ্ঠিত কর্টোজেনা কাউন্সিলে অনুমোদন দেওয়া হয় ।
৪ খানা বাইবেলই প্রথমে গ্রীক ভাষায় লিখিত হয়েছিল । অথচ হযরত ঈসা (আঃ)-ও তার সমস্ত শিষ্যদের ভাষা ছিল সূরিয়ানী । এভাবে ভাষার পরিবর্তনের কারনে চিন্তাধারা ও বক্তব্যের বিষয়ের পরিবর্তন হওয়া অত্যন্ত স্বভাবিক । ইঞ্জিলের যে প্রাচীন কপিটি বর্তমান পৃথিবীতে প্রচলিত তা খৃষ্টিয় চতুর্থ শতকের । দ্বিতীয় লিপিটি পঞ্চম শতকের।
আর তৃতীয় যে অসম্পূর্ন লিপিটি রোমের পোপের লাইব্রেরীতে আছে,সেটাও চতুর্থ শতাব্দির চেয়ে বেশি প্রাচিন নয় । সূতরাং প্রথম তিন শতাব্দিতে যে বাইবেল প্রচলিত ছিল তার সাথে বর্তমান বাইবেল কতখানি সংগতিপূর্ন তা বলা কতটা কঠিন,চিন্তাশীল ব্যাক্তিমাত্রই তা অনুধাবন করতে সক্ষম হবে ।
সে পরে যখন লিপিবদ্ধ করার কাজ শুরু হয় তখন তা নির্ভরশীল ছিল লিপিকারকদের কৃপার ওপর। লিপিকরনের সময় যে সকল জিনিষ লিপিকারকদের চিন্তা-চেতনা ও আদর্শ বিশ্বাসের পরিপন্থি তা কাট-ছাট করে নিজের চিন্তা-চেতনা ও আদর্শ বিশ্বাস অনুপ্রবিষ্ট করাটা অসম্ভবের কিছুই না । সূতরাং খৃষ্টানদের কাছে তাদের ধর্মের অবস্থা তখন যেমন ছিল বর্তমানে তারচেয়ে উন্নত তো নয়ই বরং অবনতিই আশা করা যায় ।
সময়ে বাইবেলকে কূরআনের মত মুখস্ত করার কোন চেষ্টাই করা হয়নি । প্রথম দিকে এর প্রচার ও প্রসার সম্পূর্ন রূপে মর্মগত বর্ননার ওপর নির্ভরশীল ছিল । বাইবেল এর শব্দ নয় - এর বিষয় বস্তু প্রচার করা হতো । এতে স্মৃতির ত্রুটি-বিচ্যুতি এবং বর্ননাকারকদের নিজস্ব ধ্যান-ধারনা প্রতিফলিত হওয়া স্বাভাবীক ।
ইঞ্জিল বারবানাস
হযরত ঈসা (আঃ)-এর নিজের সঠিক অবস্থা ও তার প্রদত্ব আসল শিক্ষাবলী জানার নির্ভরযোগ্য সূত্র সেই ৪ খানা ইঞ্জিল নয়,যেগুলোকে খৃষ্টান গির্জা নির্ভরযোগ্য ও সর্বসমর্থিত ইঞ্জিল (Canonical Gospels One Copy) রুপে গ্রহন করে নিয়েছে । বরং তার জন্য অধিক অধিক বিশ্বাসযোগ্য ও নির্ভরযোগ্য উপায় হল সেই 'ইঞ্জিল বারবানাস' ! যাকে গির্জা বেআইনি , সন্দেহজনক ও অপ্রমানিক (Apycryphal) বলে চিহ্নিত করেছে । খৃষ্টানরা এই ইঞ্জিল লুকিয়ে রাখার জন্য অনেক চেষ্টা-যন্ত করেছে । শত শত বছর পর্যন্ত তা দুনিয়ায় অপরিচিত ও অপ্রকাশিত হয়ে রয়েছে । ষষ্ঠদশ শতকে এর ইটালিয় অনুবাদের মাত্র একখানা বই One copy পোপ সিক্সটাস (Sixtus) এর গ্রন্থাগারে পাওয়া যেত , তা অন্য কারও পাঠ করার অনুমতি ছিল না । অষ্টাদশ শতাব্দির শুরুতে সেটা ডন টোলেগু নামক একজন ব্যাক্তির হস্তগত হয় । অতপর বিভিন্ন হাত ঘুরে ১৭৩৮ খৃষ্টব্দে তা ভিয়েনা ইম্পিরাল লাইব্রেরিতে পৌছে । ১৯০৭ খৃষ্টাব্দে এই বইয়ের ইংরেজি অনুবাদ অক্সফোর্ডের ক্লে'রিন্ডন প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়েছিল । কিন্তু তা প্রকাশিত হওয়ার পরই সম্ভবত খৃষ্টান জগত অনুভব করতে পারল যে,যে ধর্মমতকে হযরত ইসা (আঃ)-এর নামে চালানো হচ্ছে , এই বই সেই সেই ধর্মের মূল শিকড় কেটে ফেলে । এ কারনে ঐ মুদ্রিত বই গুলো বিশেষ ব্যাবস্থাপনায় লুকিয়ে ফেলা হয় । এরপর তা আর কখনও প্রকাশিত হতে পারেনি । অপর একখানা বই এই ইটালিও অনুবাদ হতে স্পেনিয় ভাষায় , তা অষ্টদশ শতকে পাওয়া যেত । জর্জ সেল তার কূরআনের ইংরেজি অনুবাদের ভূমিকায় এর কথা উল্লেখ করেছেন । কিন্তু তাও কোথাও লুকিয়ে রাখা হয়েছিল । ফলে বর্তমানে সেটারও কোন নাম-চিহ্ন কোথাও খুজে পাওয়া যায় না । অক্সফোর্ড থেকে প্রকাশিত এর ইংরেজি একটা কপি বহুকষ্টে একজন মুসলীম পন্ডিতের হস্তগত হয় ফলে শতশত বছর ধরে লুকায়িত সত্য প্রকাশিত হয়ে পড়ে । এই কপিটি সত্যিই অনেক বড় নিয়ামত ।খৃষ্টানরা নিছক হিংসা ও বিদ্বেশের কারনে সে ইঞ্জিল থেকে নিজেদের বষ্ণিত করে রেখেছে ।
খৃষ্টানদের বই-পুস্তকে যেখানেই এই ইঞ্জিলের উল্লেখ আসে , তখন তাকে এই বলে প্রত্যাখ্যান করা হয়যে , এটা নাকি জাল ইঞ্জিল ! কিন্ত তাদের এই কথা ডাহা মিথ্যা ছাড়া কিছুইনা । এই গ্রন্থের বিভিন্য স্থানে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর আগমন সম্পর্কে ভবিষ্যৎবানী উল্লেখর উল্লেখ আছে বলেই তারা উক্ত ইঞ্জিল সম্পর্কে এমন অপপ্রচার করেছে এবং করছে ।
নবী করীম (সাঃ)-এর জন্মের ৭৫ বছর পূর্বে পোপ প্রথম গেলাসিয়াস (Gelasius) এর সময়ে খারাপ বিশ্বাস ও বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী (heretical) গন্থাবলির যে তালিকা তৈরি হয়েছিল 'ইঞ্জিল বারবানাস' ও তার অন্তর্ভূক্ত ছিল । ইতিপূর্বে খৃষ্টান গির্জায় দির্ঘদিন পর্যন্ত বারবানাসের ইঞ্জিল প্রচলিত ছিল । একে নিষিদ্ধ করা হয় ষষ্ঠ শতাব্দিতে ।
বাইবেলে যে ৪ খানা ইঞ্জিল গ্রন্থকে আইনসম্মত ও নির্ভরযোগ্য ঘোষনা করে সামিল করা হয়েছে তন্মন্ধে একখানা গ্রন্থের লেখকও ঈসা (আঃ)-এর কোন সাহাবি । লেখকদের একজনও এই দাবি করেননি যে,তিনি হযরত ঈসা (আঃ)-এর সাহাবিদের কাছ থেকে তত্ত্ব ও তথ্য নিজের ইঞ্জিলে সামিল করেছেন । তারা যেসব উপায় ও সূত্র হতে তত্ত্ব ও তথ্য সংগ্রহ করেছেন তার পরিচয়ও তারা দেননি । এর মূল বর্ননাকারী নিজ চোখে যেসব ঘটনা দেখেছেন এবং যেসব কথা নিজের কানে শুনেছেন বলে তিনি বর্ননা করেছে , কিংবা এক বা একাধিক সূত্রের মাধ্যমে সেই কথাগুলো তার কাছে পৌছেছে,এ বিষয়ে কিছুই জানা যায় না । এটি একটি মৌলিক ত্রুটি । কিন্তু 'ইঞ্জিল বার্বানাস' এই সব দোষ ও ত্রুটি থেকে সম্পূর্ন মুক্ত । এই ইঞ্জিল রচয়িতা নিজেই বলেছেন,আমি নিজে হযরত ঈসা মসীহের প্রাথমিক বারোজন হাওয়ারীর একজন । শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমি নিজে হযরত ঈসা মসীহের সঙ্গে রয়েছি । আমার নিজের চোখে দেখা ঘটনাবলী ও নিজের কানে শোনা কথা এবং বানীসমূহ আমি এই গ্রন্থে সন্নিবেশিত করেছি । এতটুকু লিখেই তিনি ক্ষান্ত হননি । গ্রন্থের শেষভাগে তিনি বলেছেন,আমার সম্পর্কে যেসব ভুল ধারনা লোকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে তা দূর করে দিও এবং যথাযথ অবস্থায় দুনিয়ার সম্মুখে উদঘাটিত করে দেওয়া তোমারই দায়িত্য ।
বারবানাস কে ছিলেন
এই বারবানাস কে ছিলেন ? বাইবেলের কার্যাবলী (প্রেরিতদের কার্য) এ নামের এক ব্যাক্তির বার বার উল্লেখ এসেছে । এই ব্যাক্তি ছিল ইহুদি পরিবারের লোক খৃষ্টান ধর্ম প্রচার ও ঈসা মসীহর অনুসারিদের সাহায্য সহযোগিতা করার ব্যাপারে তার অবদানের খুব বেশি প্রশংসা করা হয়েছে । কিন্তু সে কবে খৃষ্টান ধর্ম গ্রহন করেছিল তা কোথাও বলা হয়নি । প্রাথমিক ১২ জনের যে তালিকা তিনখানা ইঞ্জিলে দেওয়া হয়েছে তাতে তার নাম উল্লেখ করা হয়নি । কাজেই এই ইঞ্জিলের লেখক সেই বারবানাস কিংবা অন্য কেউ তা নিশ্চিত করে বলা যায় না । মথি ও মার্ক শিষ্যদের (Apostles) যে তালিকা দিয়েছেন,বারবানাসের দেয়া তালিকার সাথে মাত্র দুইটা নামের পার্থক্য । একজনের নাম হলো তুমা । এর পরিবর্তে বারবানাস নিজের নাম উল্লেখ করেছেন । লুক ইঞ্জিলে এই ২য় নামটিও রয়েছে । একারনে এরুপ ধারনা করার যোক্তিকতা আছে যে,পরবর্তিকালে কোন এক সময় হাওয়ারি শিষ্যদের তালিকা থেকে বারবানাসকে বহিষ্কৃত করার উদ্দেশ্যে তুমা'র নাম শামীল করাহয়েছে,যেন বারবানাসের ইঞ্জিল থেকে নিষ্কৃতি লাভ করা যায় । আর নিজেদের ধর্মগ্রন্থ সমূহে এই ধরনের পরিবর্তন করে নেওয়া এদের কাছে কোন দিনই কোন দোষ বা পাপের কাজ ছিল না,তা সর্বজনবিদিত ।
৪টি ইঞ্জিলের অসংলগ্ন কাহিনীর তুলনায় এই গ্রন্থের ঐতিহাসীক বর্ননাবলীয় অধিক সুসংবদ্ধ । এর বর্ননায় মাধ্যমে ঘটনাবলীর ধারাবাহীকতা অতীব উত্তমভাবে বুঝতে পারা যায় । হযরত ঈসা (আঃ)-এর প্রদত্ব শিক্ষাবলী চার ইঞ্জিলের তুলনায় এই গ্রন্থটিতেই অধিক স্পষ্ট,বিস্তারিত ও মর্মস্পর্ষিভাবে বিবৃত হয়েছে । চারটি ইঞ্জিলের উদৃত তার বহু বানী ও কথার মধ্যে যে বিরোধ ও অসংগতি সুস্পষ্ট,এই গ্রন্থটিতে তার নাম গন্ধও পাওয়া যাবে না ।
এই ইঞ্জিলে হযরত ঈসা (আঃ)-এর জীবন ও তার শিক্ষাবলী একজন নবীর জীবন ও শিক্ষাবলীর মতই পুরাপুরিভাবে মনে হবে । তিনি এতে একজন নবী হিসাবেই নিজেকে উপস্থাপিত করেছেন ।
বারবানাসের ইঞ্জিলের নানা স্থানে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর আগমন সম্পর্কে স্পষ্ট ভবিষ্যৎবানী উদৃত হয়েছে । আর এই করনেই খৃষ্টানরা এই ইঞ্জিল প্রত্যাখ্যান করেছে সত্যকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ।
শেষ কথা
হযরত ঈসা (আঃ-এর প্রথম যুগের অনুসারিরা তাকে একজন নবী মাত্র জানতেন । মূসা (আঃ)-এর প্রবর্তিত শরিয়াত মেনে চলতেন । আকিদা-বিশ্বাস,হুকুম-আহকাম ও ইবাদত-বন্দেগির ব্যাপারে নিজেদেরকে অন্যান্ন বনী ইসরাইল হতে কিছু মাত্র ভিন্ন,স্বতন্ত্র,বিচ্ছিন্ন মনে করতেন না । ইহুদিদের সাথে তাদের মতবিরোধ ছিল শুধু এ ব্যাপারে যে,এরা হযরত ঈসা (আঃ) কে মসীহ মানতে অস্বীকার করেছিল । উত্তর কালে যখন সেন্ট পল এই দলে শামিল হলেন,তখন তিনি রোমান,গ্রিক ও অন্যান্ন অ-ইয়াহুদি লোকদেরকে ও অ-ইসরাঈলী লোকদের মধ্যেও এই দীনের প্রচার ও প্রসার শুরু করলেন । এই উদ্দেশ্যে তিনি একটি নতুন দীন রচনা করলেন ।
এই দীনের আকিদা-বিশ্বাস,মুলনীতি ও আদেশ-নিষেধ হযরত ঈসা (আঃ)-এর পেশ করা দীন থেকে সম্পূর্ন ভিন্নতর ও অন্য রকম ছিল । এই ব্যাক্তি হযরত ঈসা (আঃ)-এর কোন সাহচর্য পাননি । বরং তিনি ঈসা (আঃ)- জীবদ্দসায় তার চরম বিরোধি ছিলেন । তারপর কয়েক বছর পর্যন্ত তার অনুসারীদের শত্রু হয়ে ছিলেন । পরে এই দলে শামিল হয়ে তিনি যখন একটা নতুন ধর্মমত রচনা করতে শুরু করলেন,তখন তিনি হযরত ঈসা (আঃ)-এর কোন কথার সনদ পেশ করেননি । তিনি ভিত্তি করেছেন নিজের কাশফ ও ইহলাম এরই উপর । এই নূতন ধর্ম রূপায়নে তার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল,ধর্ম এমন হতে হবে যা সাধারন অ-ইয়াহুদি (Gentile) জগৎ গ্রহন করবে । তিনি ঘোষনা করেছিলেন,খৃষ্টানরা ইয়াহুদি শরীয়তের বাধ্যবাধকতা থেকে সম্পূর্ন মুক্ত । পানাহারের ক্ষেত্রে হালাল-হারামের সকল বিধান তিনি খতম করে দিয়েছিলেন । খাতনা করার বিধানও তিনি নাকচ করে দেন । আর এ সকল বিধান অ-ইয়াহুদিদের কাছে অসহ্যের ব্যাপার ছিল । এমনকি তিনি মসীহর ইলাহ হওয়া,খোদার পুত্র হওয়া এবং শূল বিদ্ধ হয়ে প্রানদান করতঃ আদম সন্তানের জন্মগত পাপের প্রায়শ্চিত্ত হয়ে যাওয়ার আকিদাও রচনা করেন । প্রাথমীক পর্যায়ের অনুসারীগন এসব বিদআতের বিরোধিতা করেন । কিন্তু যে দ্বার উন্মুক্ত করে দিলেন,তা থেকে অ-ইয়াহুদি খৃষ্টানদের একটা বিরাট বন্যা প্রবাহ এই ধর্মে অনুপ্রবেশ করার সুযোগ লাভ করল । ফলে সেন্টপল বিরোধি মুষ্টমেয় লোক এর মুকাবেলায় মুহূর্তের তরেও টিকতে পারলো না । এ স্বত্তেও খৃষ্টিয় তৃতীয় শতাব্দির সমাপ্তিকাল পর্যন্ত হযরত ঈসার ইলাহ হওয়ার ধারনাকে অস্বীকার করে এমন বহু লোকই বর্তমান ছিল ।
চতুর্থ শতাব্দির শুরুতে (৩২৪ খৃ.) নাকিয়ার (Nicaea) কাউন্সিল সেন্টপল প্রবর্তিত আকীদাকে সর্বসম্মত খৃষ্টান ধর্মমত রূপে মনোনিত করে নিল । পরে রোমান সম্রাট ও সাম্রাজ্য নিজ থেকেই খৃষ্টান হয়ে গেল । এরপর এই ধর্মমতের বিপরীত আকীদা পেশ করার সমস্ত গ্রন্থাদি পরিত্যাক্ত ও বে-আইনি ঘোষিত হলো এবং এই আকিদার অনুকূল সমস্ত গ্রন্থাদি নির্ভরযোগ্যরূপে গৃহীত হলো । ৩৬৭ খৃষ্টাব্দে প্রথমবার আথানাসিয়াস (Athanasius) লিখিত একটি চিঠির নির্ভরযোগ্য ও সর্বসম্মত গ্রন্থাবলীর একটি সমষ্টি ঘোষনা করা হল । পরে ৩৮২ খৃষ্টাব্দে পোপ ডেমানিয়াস (Damasius)-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে তার সত্যতা স্বীকার (Ratification) করে নিল । পঞ্চম শতকের শেষে পোপ গেলাসিয়াস (Gelasius) এ গ্রন্থ সমষ্টিকে সর্বসম্মত ঘোষনা করার সঙ্গে সঙ্গে অসমর্থিত গ্রন্থাবলীরও একটি তালিকা রচনা করে দিল ।অথচ পল প্রবর্তিত যে সব আকিদা-বিশ্বাসকে ভিত্তি রুপেগ্রহন করে ধর্মিয় গ্রন্থাবলীর নির্ভরযোগ্য ও অনির্ভরযোগ্য হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল,সে সম্পর্কে কোন খৃষ্টান পন্ডিত কখনও এই দাবি করতে পারেনি যে,তার মধ্যে কোন একটি আকিদা-বিশ্বাসঈসা (আঃ) নিজে শিক্ষা দিয়েছিলেন । বরং গ্রহনীয় কিতাব গুলোর মধ্যে যে সকল ইঞ্জিল গন্য তাতে হযরত ঈসা (আঃ)-এর নিজের উক্তি বলে এই সব আকিদার কোন প্রমান পাওয়া যায় না ।বারবানাস এর ইঞ্জিল খৃষ্টধর্মের সরকারী আকীদার সম্পূর্ন বিপরীত আকিদা পেশ করে বিধায়,একে অগ্রহনীয় ও অসমর্থিত গ্রন্থাদির মধ্যে গন্য করা হয়েছে । এই গ্রন্থকার গ্রন্থের ভূমিকায় এই গ্রন্থ রচনার উদ্দেশ্য বর্ননা করে বলেছেন, 'সেই লোকদের মতাবলীর সংশোধন করিতে হইবে,যাহারা সয়তানের প্রতারনায় প্রতারিত হইয়া ঈসা মসীহ'কে খোদার পূত্র বলিয়া মনে করিতে শুরু করিয়াছে,খাতনা করা অপ্রয়োজনীয় মনে করে । সেন্টপল এই প্রতারিত দলের একজন ।'
গ্রন্থকার বলেন,হযরত ঈসা যখন দুনিয়ায় ছিলেন , তখন তাহার মুযিযা সমূহ দেখিয়া সর্বপ্রথম মুশরিক রোমান সৈন্যরা তাকে খোদা এবং কিছু লোক তাকে খোদার পূত্র বলিতে শুরু করিল । পরেন বনী ইসরাইলের সাধারন মানুষের মনেও এই ছোয়াচ লাগিয়া যায় । ইহাতে হযরত ঈসা খুবই বিব্রত হইয়া পড়েন । তিনি বার বার অত্যন্ত কঠোরতা সহকারে তাহার নিজের সম্পর্কিত এই ভুল আকিদার তিব্র প্রতিবাদ করিলেন এবং যাহারা তাহার সম্পর্কে কথা-বাত্রা বলে তাহাদের উপর অভিশাপ বর্ষন করিলেন এবং এর তিব্র প্রতিবাদ করিলেন । পরে তিনি তাহার শিষ্যবর্গকে সমগ্র ইয়াহুদায় এই আকিদার প্রতিবাদ করার জন্য পাঠিয়ে দিলেন । অতঃপর তাহার দোয়ায় শিষ্যদের দ্বারাও সেই সব মুযিযা সংঘঠিত করাইলেন যাহা স্বয়ং হযরত ঈসা (আঃ) কতৃক সংঘঠিত হইতেছিল । যেন যে লোকের দ্বারা এই মুযিযা সংঘঠিত হয় সে খোদা বা খোদার পূত্র এই ভূল ধারনা সহজেই দূর হয়ে যায় ।
এই পসঙ্গে হযরত ঈসা (আঃ)- বিস্তারিত ভাষন উদৃত করেছেন । তাতে তিনি কঠোর ভাষায় এই সব ভুল বিশ্বাসের প্রতিবাদ করেছেন । এই বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ার দরুন তিনি নিজে যে বিব্রত ও কাতর হয়ে পড়েছিলেন,নানা স্থানেতার বর্ননাও দিয়েছেন । এতদ্যত্যিত হযরত ইসা মসীহ সূলে প্রান ত্যাগ করেছেন - সেন্টপল রচিত এই ভ্রান্ত আকিদারও তিব্র প্রতিবাদ করা হয়েছে এই গ্রন্থে । গ্রনহথকার তার প্রত্যক্ষ বিবরনে বলেছেন,ইয়াহুদ ইস্কারিউতি যখন ইয়াহুদিদের সরদার পার্দ্রির নিকট হইতে ঘুষ গ্রহন করিয়া হযরত ঈসাকে গ্রেফতার করাইবার জন্য সিপাহীদের লইয়া আসিল,তখন আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে চারজন ফেরেশতা তাহাকে তুলিয়া লইয়া গেলেন এবং ইস্কারিউতির আকৃতি ও কন্ঠস্বর হযরত ঈসার মতই বানাইয়া দেওয়া হইয়াছিল । এবং তাহাকেই শুলে চড়ানো হইয়াছিল-হযরত ঈসাকে নয় ।এভাবেই এই ইঞ্জিল গ্রন্থটি-সেন্টপল রচিত খৃষ্টধর্মের শিকড় উৎপাটন করে দিয়েছে । সেই সঙ্গে কূরআন শরিফের এতদসম্পর্কিয় বর্ননার সত্যতা ও যথার্তা ঘোষনা করেছে । অথচ কূরআন নাযিল হওয়ার ১১৫ বছর পূর্বে এই গ্রন্থটির এম্বিধ বর্ননা সমূহের কারনেই খৃষ্টান পার্দ্রিগন তাকে সম্পূর্নভাবে প্রত্যাক্ষান করেছিল ।
ইঞ্জিল বারবানাস এর সাহায্যে নিজেদের আকিদা-বিশ্বাসকে সংসোধিত ও নির্ভুল ভাবে গড়ে তোলা ও হযরত ঈসা মসীহ'র আসল শিক্ষাদি জেনে নেওয়ার যে মহা সুযোগ খৃষ্টানদের কাছে ছিল,কেবলমাত্র জিদের বশবর্তি হয়েই তারা তা হতে নিজেদের বষ্ণিত করে রাখলো ।
(সমাপ্ত) — সংকলনে – মোঃ রেজওয়ানূর রহমান
মূল লেখক – মোদাস্সেম আল হোদাইবি
•
•
https://www.dropbox.com/.../Gospel%20of%20Barnabas.pdf...
Gospel of Barnabas.pdf
Shared with Dropbox
dropbox.com
•
•
or
https://app.box.com/s/ks9qcomic87y7tushc1c
খুব ভাল একটি পোষ্ট
উত্তরমুছুনwww.pothiknews.com